মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

১৪৪ ধারার মধ্যেও বিএনপির সমাবেশ কক্সবাজারে

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারার নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কক্সবাজারে সমাবেশ করেছে বিএনপি। গতকাল সকালে শহরের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামের পাশে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে পুলিশের উপস্থিতিতে জেলা বিএনপি সংক্ষিপ্ত আকারে এ সমাবেশ করে। দলীয় নেতাদের দাবি, তারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে ১০ হাজারের বেশি লোকসমাগম করে পূর্বঘোষিত এ সমাবেশ কর্মসূচি সম্পন্ন করেছেন। এ নিয়ে পুলিশ কিংবা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিএনপির কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা, লাঠিপেটা কিংবা গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেনি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কক্সবাজার সদরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠটি ১৪৪ ধারার আওতাভুক্ত ছিল না।

বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে কক্সবাজারে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল জেলা বিএনপি। গতকাল বেলা ৩টায় শহরের শহীদ মিনার সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একই দিন ওই সড়কের ৩০ গজ দূরত্বে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জেলা যুবলীগ পৃথক সমাবেশের ডাক দেওয়ায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। এর পরও শহরের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেখানে সমবেত লোকজনকে তারা ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এর আগে ভোর ৬টা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে এসে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ৯টার মধ্যেই ঈদগাহ ময়দান ভরে যায়। টেকনাফ, উখিয়া, খুরুশকুল, রামু, মহেশখালী ও চকরিয়া থেকেও দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ঈদগাহ ময়দানে ছুটে আসেন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, যে কোনো সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারেন। কিন্তু তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে দিচ্ছে না সরকার। বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে বাধা দেওয়ার মানে হলো তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। উল্টো আইনমন্ত্রী এ নিয়ে রসিকতা করে বলেছেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা করাতে।

কক্সবাজারে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারি ও বাধা প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবিতে সমাবেশ করতে চাইলেও বাধা আসে। দিনের ভোট রাতে নিয়ে ক্ষমতায় আসা এ সরকারের জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা নেই। তাই সরকারের এমন আচরণ।

সকাল সোয়া ৯টার দিকে জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। এতে প্রথমে বিএনপি কেন্দ্রীয় মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজল এবং পরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে রহমান শামীম বক্তব্য রাখেন। চারটি মাইকে তার বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছিল। এ সময় পুলিশ এসে সমাবেশস্থলের মাইকগুলো বন্ধ করে দেয়। এরপর কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াসের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে। পুলিশের সঙ্গে কথাবার্তার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। সকাল সোয়া ১০টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়। এরপর সমাবেশে আগত লোকজন বিক্ষোভ মিছিল করে শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের সৈকত সড়কে বিক্ষিপ্তভাবে মানববন্ধন পালন করে। এ সময় জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে সমাবেশের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করায় প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দা জানানো হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। আমাদের প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যায় ১৪৪ ধারা জারি করে আমাদের সেই সমাবেশ কর্মসূচি বানচালের চক্রান্ত করা হয়েছে। এর পরও সকালে আমরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ১০ হাজারের বেশি  লোক নিয়ে সমাবেশ করেছি।’ এ বিষয়ে ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান এলাকা ১৪৪ ধারার আওতাভুক্ত ছিল না। এর পরও শহরের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিএনপিকে মহাসমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। নেতা-কর্মীদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে মহাসমাবেশ বন্ধ করা হয়েছে। বিএনপি আহূত সমাবেশস্থল থেকে ১০০ গজ দূরে শহীদ মিনারে গণতন্ত্রের বিজয় উদ্যাপন কর্মসূচি দেয় যুবলীগ। একই জায়গায় দুই দল পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ডাকার কারণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় গতকাল সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।

সর্বশেষ খবর