বুধবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল আরও আড়াই লাখ গৃহহীন পাবেন ঘর

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল আরও আড়াই লাখ গৃহহীন পাবেন ঘর

চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন পর্যন্ত এ মেট্রোরেলের রুট হবে।

গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন বলে সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানান।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলাদেশ অ্যাট ফিফটি : রিয়েলাইজেশন অব ড্রিমস থ্রো হিউম্যান অ্যান্ড প্যাট্রিওটিক লিডারশিপ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।

গতকাল একনেকে ১১ হাজার ২১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ের ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১০ হাজার ৭১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের বিস্তারিত জানান। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মেট্রোরেল শুধু ঢাকাতে থাকবে কেন, চট্টগ্রামের জন্যও মেট্রোরেল প্রকল্প নিতে হবে। যেসব শহরে এয়ারপোর্ট আছে, সেখানে পর্যায়ক্রমে সংযুক্ত করে প্রকল্প নিতে হবে। তিনি বলেন, অন্যান্য শহরে মেট্রোরেল করতে না পারলেও মেট্রোরেলের মতো অন্য সার্ভিস চালু করতে হবে। তবে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেল নির্মাণের বিষয়ে নির্দেশনা দেন। বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকার মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) শেষ হওয়ার পরপরই চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণে কাজ শুরুর আগ্রহ দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এত আয়ের সুযোগ আছে; কিন্তু হচ্ছে না। তাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয় বৃদ্ধি করা উচিত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, বৈঠকে চট্টগ্রামের চাক্তাই খালের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতে নিচের দিকে যাওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চাক্তাই খালের তলদেশে পাকা করে দেওয়ার কারণে নিচে পানি যেতে পারে না। এতে পানি শুধু ওপরেই থাকছে। এতে সর্বনাশ হচ্ছে। পানি নিচে যেতে পারে না বলে উপচে পড়ে শহর ডুবছে।

মন্ত্রী বলেন, প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করতে না পারলে পরামর্শকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার বিষয়টিও বৈঠকে গুরুত্ব পায়। অনেক প্রকল্পের সমীক্ষা হওয়ার পরও প্রকল্প ঠিক সময়মতো শেষ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বৈঠকে কথা উঠেছিল। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই হওয়ার পরও দেখা যায় দুইবার তিনবার সংশোধন করতে হয়, দাম বাড়াতে হয়। ঠিকাদার বকা খায়, পিডব্লিউডি (গণপূর্ত অধিদফতর) বা সড়ক বকা খায়, কিন্তু পরামর্শকরা আড়ালে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পরামর্শকদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে দেখি কী করা যায়।’ সভায় এ বছর চলমান তিনটি মেগা প্রকল্প শেষ করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সভায় জানানো হয়, আগামী জুনে পদ্মা সেতু (সড়ক), অক্টোবরে কর্ণফুলী টানেল এবং ডিসেম্বরে মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) শেষ হবে।

আড়াই লাখ গৃহহীন পাবে ঘর : আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে আরও আড়াই লাখ গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। এবার প্রতিটি ঘর নির্মাণ বাবদ আগের চেয়ে বরাদ্দ বাড়ছে। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় বিদ্যমান ২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার করা হয়েছে। এ জন্য নতুন করে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৩১৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সব মিলিয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের সংশোধনী ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ১৪২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। একনেকে এ সংক্রান্ত প্রকল্প পাস হয়েছে। এই প্রকল্পসহ একনেক ১১ হাজার ২১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো- স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্প; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জন্য লজিস্টিকস ও ফ্লিট মেইনটেন্যান্স ফ্যাসিলিটিস গড়ে তোলা (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ককে জাতীয় মহাসড়ক মানে ৪-লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প; তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন (প্রথম পর্যায়) (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প। আরও রয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ‘মোবাইল গেম অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প; ‘আশ্রয়ণ-২ (চতুর্থ সংশোধিত)’ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরসরাই-প্রথম পর্যায় (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘বরগুনা জেলার অধীন পোল্ডার ৪৩/১ ও ৪৪টি পুনর্বাসন এবং ঝুঁকিপূর্ণ অংশ পায়রা নদীর ভাঙন হতে প্রতিরক্ষা’ প্রকল্প এবং ‘কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর ভাঙনরোধ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প।

সর্বশেষ খবর