বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

নিষেধাজ্ঞায় উদ্বিগ্ন বিজিএমইএ

যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শ সংসদীয় কমিটির

নিজস্ব প্রতিবেদক

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞায় আমরা উদ্বিগ্ন। তবে এখনো এ ইস্যুতে বায়ারদের কোনো অর্ডার স্থগিত কিংবা বাতিল হয়নি।’ অন্যদিকে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গতকাল ‘লবিস্ট’ নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

গতকাল পল্টনে অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ কার্যালয়ে সংগঠনটি আয়োজিত সংলাপে তিনি বক্তব্য দেন। সংলাপ পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম। ফারুক হাসান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমরা চিন্তিত।’ যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় মার্কেট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই, কোনো বায়ারকে হারাতে চাই না।’ তিনি জানান, করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে কিছু ইউরোপীয় বায়ার ডেলিভারি এক সপ্তাহ কিংবা ১০ দিন পেছাতে বলেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বায়ারের অর্ডার বাতিল হয়নি। বিজিএমইএ সভাপতি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি মনে করি না ব্যবসা করতে গেলে রাজনৈতিক আশীর্বাদ লাগে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমাদের প্রত্যাশা- কারখানায় উৎপাদন ও পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হয় এমন কোনো কর্মসূচি যেন তারা না নেয়। সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে সে পরিবেশ থাকতে হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি-বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান বলেন, বৃহত্তম ওই বাজারে তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধা পেত না। এখনো পাচ্ছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেসব শর্ত দিয়েছিল সেগুলো পোশাক মালিকরা ও সরকার বাস্তবায়ন করেছে। কমপ্লায়েন্স বা নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে এ দেশের উদ্যোক্তারা প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। বিশে^র নিরাপদ কারখানা এখন বাংলাদেশে। ১৫৩টি গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে দেশে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা তাদের কাজটি করেছেন। এখন জিএসপি দেওয়া-না দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়। তিনি বলেন, দেশটির জিএসপি সুবিধা দেওয়ার সঙ্গে শুধু শর্ত বাস্তবায়ন নয়, রাজনীতিও জড়িত। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শ সংসদীয় কমিটির : এদিকে র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য দেশটিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘লবিস্ট’ নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। সংসদ ভবনে গতকাল অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স ও মো. আবদুল মজিদ খান অংশ নেন। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বা কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে অনেকে লবিং করেন। এসব কাজের জন্য লবিস্ট আছে। পিআর প্রতিষ্ঠান আছে। সে কারণে অনেক নেতিবাচক তথ্যও তাদের কাছে উপস্থাপন করা যায়। আমাদের এখানে কাজ করতে হবে। কমিটি বলেছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগ করা হলে আমাদের সঠিক তথ্য সেখানে পৌঁছাতে পারব।’ এ সময় বৈঠকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনার বিষয়ে মতামত আসে। কমিটির সভাপতি জানান, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংসদীয় কমিটিকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

সংসদীয় কমিটির সদস্যরা মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের কাছে বাংলাদেশের বিষয়ে নেতিবাচক তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। কোনো না কোনো লবিস্ট গ্রুপ বা পিআর প্রতিষ্ঠান এ কাজটি করছে। এ কারণে বাংলাদেশেরই উচিত এর কাউন্টার হিসেবে সে দেশে লবিস্ট নিয়োগ করা। কমিটির সভাপতি জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তখন আলোচনা হবে। বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ নিষেধাজ্ঞার পেছনে ভূ-রাজনীতি জড়িত। ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে খুব গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া কমিটির এক সদস্য এ তথ্য জানান।

সর্বশেষ খবর