বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে মাদকের কারবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে চলত মাদকের কারবার। রোগীদের থেকে পর্যাপ্ত টাকা নিলেও সে অনুযায়ী মিলত না সেবা-পরিচর্যা। চিকিৎসা কেন্দ্র হলেও সেখানে ছিল না কোনো চিকিৎসক। নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত রোগীও রাখা হয়েছিল সেখানে। তবে সেবার নাম করে তাদের ওপর চলত নির্যাতন। এমন খবরের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে অভিযান চালায় র‌্যাব-২-এর একটি দল। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির মালিক-কর্মচারীদের ডোপ টেস্ট করা হলে তাও পজিটিভ আসে। নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রমাণ হাতেনাতে পাওয়ার পর র‌্যাব প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফিরোজা নাজনিন বাঁধন, মনোয়ার হোসেন সিপন, রায়হান খান, দীপংকর শাহ দীপু ও জাকির হোসেন আনন্দকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় ঢাকাই চলচ্চিত্রের একজন অভিনেতাসহ ২৮ জনকে। জব্দ করা হয়েছে ৪২০ পিস ইয়াবা, নির্যাতনে ব্যবহৃত লাঠি, স্টিলের পাইপ, হাতকড়া, রশি, গামছা, খেলনা পিস্তল ও কথিত সাংবাদিকের পরিচয়পত্র। গতকাল দুপুরে র‌্যাব-২ ব্যাটালিয়ন সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে ফোর্সটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হাতেনাতে নানা অনিয়ম দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। এ বছরের ১ জানুয়ারি চলচ্চিত্র সমিতি র‌্যাবকে জানায়, একজন চিত্রনায়ক দীর্ঘদিন তাদের কার্যক্রমে অনুপস্থিত। পরে তারা জানতে পারেন, ওই নায়ককে গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে আটক রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। এমন তথ্যে র‌্যাব সদর দফতর ও র‌্যাব-২ ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে অভিযান চালায়। সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় কোনো আয়োজন ছিল না। বিশেষ করে তিনটি কক্ষে ২৮ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হতো। বিভিন্ন সময় সেবা নিতে আসা প্রত্যাশীদের মারধর করা ছাড়াও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হতো। তবে পরিবারগুলো থেকে প্রথমে ভর্তি ফি ৩ লাখ এবং প্রতি মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হতো। কিন্তু এত টাকা নেওয়া হলেও সেবার মান ছিল খুবই নিম্ন। কমান্ডার মঈন আরও বলেন, ২০০৯ সালে ফিরোজা নাজনিন বাঁধন ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রটি অনুমোদনহীনভাবে গড়ে তোলেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৩-২০১৪ সালে সাময়িক অনুমোদন পায় প্রতিষ্ঠানটি। এর স্টাফ সব মিলিয়ে মাত্র চারজন। বর্তমানে রোগীর সংখ্যা ২৮ জন। দোতলা ভবনটির প্রতি মাসে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা। ভিকটিম ও তাদের আত্মীয়দের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, চিকিৎসার নামে প্রতিষ্ঠানটিতে শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানি করা হতো। চিকিৎসার নামে রশির সাহায্যে ঝুলিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হতো। প্রতি বেলায় খাবারের মানও ছিল অত্যন্ত নিম্ন। এ ছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের যেসব নির্দেশনা ছিল এর কিছুই এখানে ছিল না। সার্বক্ষণিক ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও এর বালাই ছিল না।

সর্বশেষ খবর