শুক্রবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

পরাজিত প্রার্থীকে পিটিয়ে হত্যা

ভোটের পরদিনও ব্যাপক সহিংসতা, দিনাজপুর সাতক্ষীরায় সংঘর্ষ গুলি, ভোলায় হামলা মুন্সীগঞ্জে লুটপাট, জয়পুরহাটে অবরোধ

প্রতিদিন ডেস্ক

পরাজিত প্রার্থীকে পিটিয়ে হত্যা

নওগাঁর পত্নীতলায় ঘোষনগর ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ শেষে দুটি কেন্দ্রের ব্যালট ও সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার সময় পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শরীয়তপুরে পরাজিত ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে আরেক পরাজিত ইউপি সদস্য। ভোলায় অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে বিজয়ী প্রার্থীকে মারধর করা হয়েছে। হাসপাতালেও তাকে আরেক দফা পিটানো হয়েছে। হয়েছে দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষ। আহত হয়েছেন ৩০ জন। দিনাজপুরে সহিংসতা থামাতে ছোড়া হয়েছে গ্যাস শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, শটগানের গুলি। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ আহত হয়েছেন ২০ জন। সাতক্ষীরার আশাশুনিতে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। মুন্সীগঞ্জে পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ায় চালানো হয়েছে তান্ডব। এ সময় ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে ১৫টি বাড়িঘরে। আহত হয়েছেন ১০ জন। নাটোরের গুরুদাসপুরে বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জয়পুরহাটে আবার ইউপি সদস্য পদে নির্বাচনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। বগুড়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত চারজনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। গাইবান্ধায় ইউপি নির্বাচনে যুবককে গলা কেটে হত্যা ঘটনায় ৩০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। নওগাঁয় পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র ছিনতাই ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে ১১৩ জনের নামে। গ্রেফতার হয়েছেন একজন। মেহেরপুরে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সহিংসতায় দুই সহোদর হত্যা মামলায় ৫৬ আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রতিনিধিদের খবর-

শরীয়তপুর : নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় শরীয়তপুরের নড়িয়ার নওপাড়া ইউনিয়নে এক পরাজিত ইউপি সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত ইউপি সদস্য মালেক মালত পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে নওপাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মোরগ মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মালেক মালত ও দেলোয়ার হোসেন মালত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে দুই প্রার্থী পরাজিত হন। নির্বাচনের পরদিন গতকাল সকালে নির্বাচন বিষয়ে পরাজিত দুই প্রার্থীর মধ্যে বাগ্‌বিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে মালেক মালতকে বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে দেলোয়ার হোসেন হত্যা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভোলা : ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ও বাপ্তা ইউনিয়নে সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষ মারধরসহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে নির্বাচিত ইউপি সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে গুরুতর প্রায় ২০ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ দুটি ইউনিয়নে এ হামলার ঘটনা ঘটে। সকালে বাপ্তা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজিরহাট এলাকায় পরাজিত সদস্য প্রার্থী ফারুক হাজিরহাট বাজারে প্রতিপক্ষ বিজয়ী প্রার্থী মাকসুদর রহমান নিরবের ওপর হামলা করেন। স্থানীয়রা জানান, পরাজিত সদস্য প্রার্থী ফারুক, তার ছেলে আলমাস, ভাতিজা রাকিব, ভাই ফজলে আলমসহ একটি গ্রুপ নিয়ে পূর্ব থেকে হাজিরহাট বাজারে ওঁত পেতে থাকে। সকাল ৯টার দিকে নিরব মেম্বার বাজারে এসে একটি চায়ের দোকানে বসলে ফারুক মেম্বার ওই দোকানে গিয়ে নিরব মেম্বারের ওপর হামলা করে। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে মিজান ও হোসেন নামে আরও দুজন গুরুতর আহত হন। এরপর হামলাকারীরা নিরব মেম্বারের বাড়িঘরে হামলার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এদিকে হাসপাতালে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে দ্বিতীয় দফায় নিরব মেম্বারকে মারধর করা হয়। এরপর হাসপাতাল গিয়ে তৃতীয় দফায় নিরব মেম্বারকে মারার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ফারুক মেম্বারের লোকজনের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। নিরব মেম্বারের বাড়ির লোকজন জানান, তারা এখন বাড়ির মধ্যে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। পরাজিত মেম্বার প্রার্থী ফারুকের লোকজন এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। যাকে পাচ্ছে তাকেই মারধর করছে। অপরদিকে পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিকদার বাড়ির সামনের সড়ক দিয়ে বিজয়ী সদস্য প্রার্থী লিটন শিকদারের কর্মী-সমর্থকরা মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় পরাজিত প্রার্থী শাহে আলম শিকদারের সমর্থকরা হামলা চালায়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ ছাড়াও ধনিয়া, পশ্চিম ইলিশা, রাজাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকেও সংঘাত ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

দিনাজপুর : জেলার চিরিরবন্দরে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুটি ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রে ভাঙচুর, হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড গ্যাস সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ও ছয় রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়া হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত জনতার বিক্ষিপ্তভাবে ছোড়া ইটের টুকরার আঘাতে ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশসহ সাধারণ জনতা আহত হয়েছেন ২০ জন। এ ঘটনায় গতকাল বিজিবির পক্ষ থেকে ভাঙচুর, হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, ক্ষতিসাধন বিষয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০০ জনের নামে চিরিরবন্দর থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় আটজনকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চিরিরবন্দর থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার নির্বাচনের দিনগত রাত ৭টার দিকে চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউপির গছাহার গ্রামের শাহ্পাড়ায় গছাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (জরিনা স্কুল) কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে প্রিসাইডিং অফিসারের ওপর স্থানীয় জনতা চড়াও হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় জনতা উত্তেজিত হয়ে উঠলে পুলিশ দুই রাউন্ড গ্যাস সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। অপরদিকে, ফতেজংপুর ইউপির উত্তর পলাশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনতা কেন্দ্রে ভাঙচুরের চেষ্টা চালালে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চড়াও হয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর ভাঙচুর, কেন্দ্র ভাঙচুর করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৬ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় ৪২ বিজিবির রিপন মিয়া, ইলিয়াস হোসেন, মমিনুর রহমান, সঞ্জয় চন্দ্র, মো. মনিরুজ্জামান, র‌্যাব ১৩ সিপিসি-১-এর ফুলমিয়া, মোবারক হোসেন বেগ, জুয়েল রানা ও পুলিশের এসআই তাজুল ইসলাম, এসআই হাসান ফারুক, এএসআই বেলাল, এএসআই রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল আবু তাহের, শফিউল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, তুষার রায়, ইসমত আরা আহত হন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ জনগণের মধ্যে আফজাল হোসেন (৩৫), বাদশা (৩৫), মুকুল রায় (৪২), মেরিনা বেগম (৫১) আহত হয়েছেন।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। খাজরা ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম জানান, কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গদাইপুর যাওয়ার পথে পরাজিত প্রার্থী অহিদুল ইসলাম তার আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়ে এবং তার বাড়ির ছাদ থেকে ইটপাটকেল ছোড়ে। সেখানে রাসেল হোসেন (২৪), আসাদুল ইসলাম (৫০), অদুদ সরদার (৫০), নূরবক্স সরদার (৫৫), আসলাম কাদির (৪০), ফিরোজ হোসেন (৩৫), সাজিত (১৪), শহিদ সরদার (৪৫), ইমান হোসেন (৩৫), হাফিজুর রহমানসহ (৪৫) ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত সবাই খাজরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আসাদুল ইসলাম ও রাসেল হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাসেলকে দুপুরে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পরাজিত প্রার্থী অহিদুল ইসলাম জানান, নির্বাচনে একটি সেন্টারে কারচুপি করে আমাকে পরিকল্পিতভাবে ফেল করানো হয়েছে। এর পর ৫ জানুয়ারি রাত থেকে দফায় দফায় চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম ও তার কর্মী-সমর্থকরা আমার বাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালায়। সকালে আশাশুনি নির্বাচন অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলে আমার বাড়িতে আবারও হামলা চালায় এবং গেট ভেঙে ঢোকার সময় জীবন বাঁচাতে আমি আমার লাইসেন্স করা শটগান দিয়ে ছররা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়েছি। তা না হলে সে এবং তার লোকজন সহিংসতা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করত এবং আওয়ামী লীগ নেতা শরবতকে যেভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল, একইভাবে আমাকে ও আমার পরিবারকে হত্যা করত। ডালিম তার লোকজন নিয়ে আমার বাড়িতে আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে র‌্যাব ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কবির জানান, খাজরা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী অহিদুল ইসলামের একটি কেন্দ্রে ভোট গণনায় গরমিল হয়েছে এমন খবর তার কর্মীদের কাছ থেকে শুনে গতকাল সকাল ৯টার দিকে তিনি নির্বাচন অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। পথিমধ্যে গদাইপুর ব্রিজের কাছে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের নেতৃত্বে তার লোকজন মিছিল নিয়ে আসতে থাকে। তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে তার নিজ বাড়িতে চলে আসেন। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান ডালিমের লোকজন তার বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং হামলা চালিয়ে বাড়ির গেট ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। এ সময় পরাজিত প্রার্থী অহিদুল ইসলাম আত্মরক্ষার্থে তার লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়ে। এ সময় ৪ থেকে ৫ জন আহত হন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজয়ী ও বিজিত মেম্বার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার হোসেন ডাইং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সদর মডেল থানার ওসি মোজাফফর হোসেন জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ : আনারস প্রতীকে ভোট না দেওয়ায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে সন্ত্রাসী তান্ডবে ১৫টি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা নারী  নাসিমা বেগম (১৯), মোক্তার হোসেন (৩৫), দেলোয়ার হোসেন (৪০), নাসরিনসহ (১২) কমপক্ষে  ১০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় অন্তঃসত্ত্বা নাসিমা বেগমকে উপজেলা স্বস্থ্য কপপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।  বুধবার রাত ৮টার দিকে জেলার সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের লতব্দী গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, চতুর্থ দফার ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আনারস প্রতীক নিয়ে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হাফেজ ফজলুর নির্দেশে তার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা ও মোটরসাইকেল প্রতীকের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সর্মথকদের পুরুষশূন্য বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা ১৫টি বসতঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করে। এসব ঘটনায় বাধা দিতে গিয়ে নারীসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। 

নাটোর : গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে সহিংসতায় বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘর ও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। অপরদিকে মশিন্দা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় নৌকার অফিস পোড়ানোর অভিযোগ উঠেছে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবদুল বারী ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

জয়পুরহাট : পাঁচবিবি উপজেলায় পঞ্চম ধাপে মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১ নম্বর বারোকান্দ্রি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদে তালা প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী  নুরনবী নির্বাচিত হন। গতকাল দুপুরে ভোটে নানা অনিয়মের অভিযোগে পরাজিত প্রার্থীরা পুনরায় ইউপি সদস্য পদে নির্বাচনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করলে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। 

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় একটি ভোট কেন্দ্রে সাধারণ সদস্য প্রার্থীর সমর্থক মামুদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় গতকাল বিকালে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। সাঘাটা থানার ওসি মতিউর রহমান জানান, নিহতের পিতা ওমর আলী বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বৈদ্যুতিক ফ্যান প্রতীকের নির্বাচিত ইউপি সদস্য প্রার্থী রাসেল আহমেদসহ ৩০ জনকে নামীয় ও অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বগুড়া : বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গতকাল রাতে নিহতদের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহতদের পরিবার হত্যাকান্ড দাবি করে ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। এদিকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় গাবতলী থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

নওগাঁ : নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর ও নজিপুর ইউনিয়নে তিনটি ভোট কেন্দ্রে ভোট গণনা নিয়ে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র ছিনতাই ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পত্নীতলা থানায় মামলা হয়েছে। এতে ১১৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত দুই থেকে আড়াই হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত আসামি ঘোষনগর ইউনিয়ন পরিষদ স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ফারজানা পারভীনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মেহেরপুর : গাংনী উপজেলার রাধাকান্তপুর ধলা গ্রামে নির্বাচনী সহিংসতায় দুই হত্যা মামলার ৫৬ জন আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল দুপুরের দিকে মেহেরপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক শিরিন নাহারের আদালতে আসামিরা আত্মসমর্পণ করলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনে গাংনীর কাথুলী ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে বাগ্‌বিতন্ডা হয়। এরই জের ধরে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে গত ৮ নভেম্বর সকালে মেম্বার প্রার্থী আজমাইন হোসেন টুটুল ও আতিয়ার রহমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে আজমাইন হোসেন টুটুলের ফুপাতো দুই ভাই সাহাদুল ও জাহারুলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

সর্বশেষ খবর