রবিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

উচ্চ আদালতে থমকে আছে আলোচিত মামলার কার্যক্রম

দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে : আইনমন্ত্রী

আরাফাত মুন্না

দেশের উচ্চ আদালতে উভয় বিভাগে এক ডজনেরও বেশি আলোচিত মামলার কার্যক্রম থমকে আছে। এর মধ্যে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা রিভিউ আবেদন, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের মামলাসহ বেশ কিছু মামলা আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এ ছাড়া চাঞ্চল্যকর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা ও ফেনীর সোনাগাজীতে নুসরাত হত্যা মামলাসহ অর্ধ ডজনের বেশি মামলা নিম্ন আদালতের বিচার শেষে হাই কোর্টে আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বিচারক সংকটও এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তারা।

আইনজ্ঞরা বলেন, সব মামলাই দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। তবে আলোচিত মামলাগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি করা গেলে সমাজে এর একটা প্রভাব পড়ে। এ জন্য এ মামলাগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলা প্রসঙ্গে তারা বলেন, বর্তমানে আপিল বিভাগে মাত্র তিনজন বিচারপতি রয়েছেন। ফলে তারা চাইলেও অনেক মামলার শুনানি করতে পারবেন না। বিশেষ করে যেসব মামলা রিভিউ পর্যায়ে রয়েছে। তারা বলেন, পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ যেসব মামলার রায় দিয়েছেন, সেই মামলাগুলোর রিভিউ তিন বিচারপতির বেঞ্চের শুনানি করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর হাই কোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ও বর্তমান তিন সদস্যের আপিল বিভাগের শুনানি করা সম্ভব নয় বলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা জানিয়েছেন। উচ্চ আদালতের উভয় বিভাগে দ্রুত আরও বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই আলোচিত সব মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ আপিল বিভাগে বিচারপতি সংকটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। আশা করছি মহামান্য রাষ্ট্রপতি শিগগিরই আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেবেন।’

আপিল বিভাগে বিচারাধীন আলোচিত মামলাগুলো হচ্ছে- সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন, চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার আপিল, শুনানির অপেক্ষায় থাকা যুদ্ধাপরাধের একাধিক আপিল আবেদন। এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আসামিপক্ষের আপিল আবেদন, পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তাদের মেয়ে ঐশী রহমানের পক্ষে আবেদন, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদন আপিল বিভাগে শুনানির জন্য রয়েছে। হাই কোর্টের সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেনের ২০১৪ সালে করা উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ নীতিমালা সংশ্লিষ্ট আপিলও এখনো শুনানি হয়নি।

হাই কোর্টে শুনানির অপেক্ষায় থাকা আলোচিত মামলাগুলো হচ্ছে- গুলশানের  হোলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় হামলা মামলায় আসামিপক্ষের জেল আপিল, ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, রমনার বটমূলে বোমা হামলাসহ বেশ কিছু মামলা হাই কোর্টে শুনানির অপেক্ষায়। এ ছাড়া পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎ হত্যা ও খুলনায় শিশু রাকিব হত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচার প্রক্রিয়াও আটকে আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিচারাধীন সব মামলাই দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। তবে বহুল আলোচিত মামলাগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিষ্পত্তি করা উচিত। তিনি বলেন, আলোচিত মামলাগুলোতে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি থাকে। এসব মামলার রায় সমাজে প্রভাব ফেলে। তাই আলোচিত মামলাগুলো দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থায় পেপারবুক (মামলার রায়সহ যাবতীয় নথি-সংবলিত বই) তৈরি করে হলেও মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে বলে মনে করেন এই প্রবীণ আইনজীবী।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের বিচার বিভাগের ওপর যে পরিমাণ মামলার জট রয়েছে, এই জট নিরসনে এখন প্রধান বিচারপতি বা অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয়। সরকারকে বৃহৎ পরিসরে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে আলোচিত মামলাগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’ আপিল বিভাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপিল বিভাগে মাত্র তিনজন বিচারপতি রয়েছেন, ফলে পাঁচ বা ছয় বিচারপতির বেঞ্চের দেওয়া অনেক রায়ের রিভিউ আবেদন বর্তমান তিন সদস্যের আপিল বিভাগের পক্ষে শুনানি করা সম্ভব নয়। তাই এখানে নিয়োগ দরকার। মামলার জট নিরসনে হাই কোর্টে বর্তমানে যত-সংখ্যক বিচারপতি রয়েছেন, ঠিক সমসংখ্যক বিচারপতি দ্রুত নিয়োগ দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।

সর্বশেষ খবর