রবিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সেই ক্রাইস্টচার্চে ফেবারিট এখন বাংলাদেশ

মেজবাহ্-উল-হক

এমন কঠিন পরিস্থিতিতে নিউজিল্যান্ডকে আগে কখনো পড়তে হয়েছে কিনা! দেশের মাটিতে সিরিজের শেষ টেস্ট খেলতে মাঠে নামতে হচ্ছে সিরিজ হারের শঙ্কা মাথায় নিয়ে। তা আবার র‌্যাঙ্কিংয়ের তলানিতে থাকা দলের বিরুদ্ধে! নিউজিল্যান্ডের এই দুশ্চিন্তাই ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে এগিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। ভোর থেকে শুরু হচ্ছে সিরিজের শেষ টেস্ট। এই হ্যাগলি ওভালে মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছে নিউজিল্যান্ড। পয়মন্ত এই ভেন্যুতে কিউইরা রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য। শেষ ম্যাচে তারা এশিয়ার তিন পরাশক্তি পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে যথাক্রমে ইনিংস ও ১৭৬ রানে, ৯ উইকেটে এবং ৪২৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। অবাক হওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে, সেই মাঠেই কিনা পরাক্রমশালী নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আজ বাংলাদেশ খেলতে নামছে ফেবারিটের তকমা গায়ে মেখে। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের পারফরম্যান্স সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে স্বাগতিকরা যেমন দুশ্চিন্তার বোঝা মাথায় নিয়ে মাঠে নামছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা খেলবে ফুরফুরে মেজাজে। কারণ, এখন টাইগারদের আর হারানোর কিছু নেই। সামনে কেবল রেকর্ড গড়ার হাতছানি। এই ম্যাচে ড্র করলেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়বে টিম বাংলাদেশ। আর জিতলে তো কথাই নেই। তবে হারলেও সিরিজে পরাজয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই।

সিরিজে ১-০তে এগিয়ে -এটিই যেন টাইগারদের জন্য অনেক বড় স্বস্তির। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের পাঁচ দিনই আধিপত্য দেখিয়েছে সফরকারীরা। ব্যাটসম্যানরা তাদের দায়িত্ব নিখুঁতভাবে পালন করেছেন, আর বোলাররা ছিলেন রীতিমতো আগ্রাসী। ইবাদত হোসেন, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম -তিন পেসারই দুরন্ত। তবে ইবাদতের কথা আলাদা করেই বলতে হবে, কারণ তার এক জাদুকরি স্পেলেই নির্ধারিত হয়েছিল ম্যাচের ভাগ্য। তাই ক্রাইস্টচার্চের সবুজ ঘাসের উইকেটকে আর ভয় পাচ্ছে না বাংলাদেশ। উল্টো মুমিনুলরা যেন এখন কিউই ক্রিকেটারদের কাছে ত্রাস হয়ে গেছেন! মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে টাইগারদের সাফল্যের নেপথ্যে ছিল সম্মিলিত প্রয়াস। ব্যাটিংয়ে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না, কিন্তু হাফ সেঞ্চুরি চার চারটি। মুমিনুল হক, লিটন দাস, মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হাসান শান্ত দারুণ ব্যাটিং করেছেন। লোয়ার অর্ডারে ইয়াসির আলীও দাপট দেখিয়েছেন। ব্যক্তিগত ছোট ছোট স্কোর মিলেই তারা দলকে এনে দিয়েছিলেন বড় সংগ্রহ। বোলিংয়ে পেসারদের পাশাপাশি স্পিনাররাও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের পারফরম্যান্সই ক্রাইস্টচার্চে প্রদর্শন করার জন্য মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালের উইকেট সাধারণত পেস বোলিং সহায়ক হয়। সেখানে বাড়তি বাউন্স, সুইং থাকে। এই মাঠে প্রথম ইনিংসে গড় রান ২৬৩। তাই টস জিতলে দুই দলই চাইবে প্রথমে ফিল্ডিং করতে। এখানে টসই ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা গড়ে দিতে পারে। সে কারণে আগের দিন রস টেলরও প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়ার কথা বলেছেন। গতকাল একই কথা বললেন বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো, ‘এখানে টস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিউজিল্যান্ড টস জিতলে আগে বোলিং করতে চাইবে, আমরাও তাই চাইব।’ ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে বাংলাদেশ হারুক বা জিতুক সেটা পরের বিষয়। কিন্তু টেস্টের বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে এবং তাদের সবচেয়ে পছন্দের ভেন্যুতে কিনা বাংলাদেশ ফেবারিট! এটাই বুঝি বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি!

সর্বশেষ খবর