সোমবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

কী চমক আজ নারায়ণগঞ্জে

আইভীর আক্রমণের জবাবে আজ মুখ খুলবেন শামীম ওসমান, দলের শতভাগ সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত তৈমূর

নিজস্ব প্রতিবেদক

কী চমক আজ নারায়ণগঞ্জে

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের বক্তব্যে আজ চমক আসতে পারে। বিএনপির একটি গ্রুপ মনে করছে শামীম ওসমান সমর্থন দিতে পারেন তৈমূর আলম খন্দকারকে। কিন্তু দলের একটি অংশ সংশয়ে রয়েছেন শামীম ওসমান কী বক্তব্য রাখবেন এ নিয়ে। এ কারণে নারায়ণগঞ্জের মানুষের চোখ আজ শামীম ওসমানের দিকে।

এদিকে গত রাতে টেলিফোনে শামীম ওসমানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আইভী আমাকে আক্রমণ করে অনেক কথা বলছেন। আমার বাবার কবরস্থান ভরাট করেছেন শ্মশানের মাটি দিয়ে। এর পরও বলছি, তিনি আমাকে গুলি করলেও আমি শেখ হাসিনা ও নৌকার বিরুদ্ধে যাব না। আমি এবং আমার নেতা-কর্মীরা নৌকার পক্ষেই থাকব।’

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর বার্তা দিয়েছেন শামীম ওসমানকে নৌকার পক্ষে থাকতে। নানক-আজম দুজনই কথা বলেছেন শামীম ওসমানের সঙ্গে।

গতকাল আওয়ামী লীগের আরেকজন নেতা, যিনি আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সঙ্গেও শামীম ওসমানের কথা হয়েছে। শামীম ওসমান ফোনে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে আশ্বস্ত করেছেন, কোনোভাবেই তিনি নৌকার বিপক্ষে থাকবেন না। ব্যক্তিগতভাবে আইভীর সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও এবং আইভীর আচরণে ক্ষুব্ধ হলেও শামীম ওসমান কোনোভাবেই নৌকার বিপক্ষে যাবেন না। এদিকে  নারায়ণগঞ্জে দুই প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অব্যাহত রেখেছেন। আইভী কিছু গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি তৈমূরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন। এর জবাবে আইভীর বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ এনেছেন তৈমূর আলম খন্দকার।

গডফাদার বলি নাই- আইভী : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘আমি তাকে (শামীম ওসমান) গডফাদার বলিনি, এটা তার বিগত ৩০ বছরের উপাধি। নারায়ণগঞ্জ নয়, সারা বাংলাদেশ তাকে জানে। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে সবার স্থান আছে। জনপ্রিয়র যেমন স্থান আছে, বিতর্কিতদেরও স্থান আছে। একটা বিশাল দলের মধ্যে সবাই থাকে। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল বড় জনসমুদ্র। এখানে যে টিকে থাকার টিকে থাকবে, যে চলে যাওয়ার চলে যাবে। তিনি (শামীম ওসমান) আমার দলের লোক। তিনি সমর্থন দিলে দেবেন, না দিলে না দেবেন। তিনি আমাকে অপছন্দ করতেই পারেন। এটা কোনো ব্যাপার না। আমার কিছু করার নেই, জনগণের রায়ই রায়। তারা ষড়যন্ত্র করবে কিন্তু তা ধ্বংস করে দেবে জনগণ।’ গতকাল সকালে সিটির ২২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে ভোটারদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।

আইভী বলেন, ‘আমি জনগণের জন্য কাজ করেছি। এখানে রাস্তা, ড্রেন হয়েছে, মাঠ হয়েছে। একটা কাজ বাকি, সেটা হলো কদম রসুল ব্রিজ। এই প্রজেক্টটাও পাস হয়েছে। করোনার কারণে পিছিয়ে গেলেও এবার এর কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এই কদম রসুল ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।’

তিনি বলেন, কেন্দ্র সবকিছু দেখছে, তারা অবগত আছেন। তারা কী ব্যবস্থা নেবেন সেটা তাদের ব্যাপার। আমার বিষয় আমার জনগণ। আমার জনগণ কখনো কোনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, গডফাদার, খুনিকে গ্রহণ করেনি নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। সেটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। কেন্দ্র কেন্দ্রের কাজ করবে, দল দলের কাজ করবে, জনতা জনতার কাজ করবে।

সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামী লীগের কর্মিসভা : গতকাল বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বিএসসির সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, এমপি সানজিদা খানম, এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন যোগ্য মানুষকে আবার মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি হলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঠিয়েছেন, আপনারা আইভীকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন।’

তৈমূরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি বিএনপিও না, আওয়ামী লীগও না, তাহলে আপনি কেডা? আপনি এখন হাতিতে পরিণত হয়েছেন। আপনাকে বিএনপি তালাক দিয়েছে।’

নানক বলেন, ‘তৈমূর সাহেব, ঘুঘু দেখেছেন। ঘুঘুর ফাঁদ দেখেননি। টের পাবেন আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। যে আশায় রয়েছেন সে আশায় গুড়ে বালি। আমি বিশ্বাস করি গত নির্বাচনে আইভী ৮৪ হাজার ভোট ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইনশাআল্লাহ আগামী ১৬ জানুয়ারি তিনি লক্ষাধিক ভোটে জয়লাভ করবেনই করবেন।’

খালেদা জিয়ার দয়ায় ২০১১ সালে মেয়র হয়েছেন- তৈমূর : মেয়র পদপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রসঙ্গে অভিযোগ করে বলেছেন, “দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই ধারায় বিভক্ত হলেও আমি সর্বাবস্থায় সব রাজনৈতিক দলের নেতাকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে দেখি এবং তাদের নিয়ে মন্তব্য করার বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকি। একজন মেয়রকে (আইভী) অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কথা বলতে হয়, নতুবা এর প্রভাব নগরবাসীর ওপর পড়ে। ২০১৩ সালের ২২ আগস্ট আইভী বলেছেন, ‘দুই নেত্রী দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’ ২০১৩ সালের ২ মে তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার নারায়ণগঞ্জে খুনিদের পৃষ্ঠপোষক।’ ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গডফাদাররা খুন করে বেড়াচ্ছে’।” গতকাল বিকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ফতুল্লা মাসদাইর নিজ বাসভবনের মজলুম মিলনায়তনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিমিয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

২০১১ সালে নির্বাচনের ৭ ঘণ্টা আগে বসে যাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তৈমূর বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দয়ায় ২০১১ সালে আপনি (আইভী) মেয়র হয়েছেন।’ তৈমূর বলেন, ‘এ নিয়ে আমার স্পষ্ট মন্তব্য হলো সরকারদলীয় নেতাদের এই বিভেদ-বিভাজনই নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। শামীম ওসমান সরকারদলীয় এমপি আর সেলিম ওসমান সরকারি দলের জোটবদ্ধ জাতীয় পার্টির এমপি। আমি তৈমূর আলম খন্দকার প্রথম দিন থেকেই বলছি, শামীম ওসমানের পায়ে তৈমূর আলম খন্দকার হাঁটে না। গত ৫০ বছর ধরে মাটি ও মানুষের সঙ্গে রাজনীতি করতে করতে তৈমূর আলম খন্দকারের ভিত্তি এতটাই শক্ত হয়েছে যে, কোনো শামীম ওসমান বা সেলিম ওসমানের হয়ে আমাকে নির্বাচনে অভিনয়ে নামতে হবে না।’ তিনি বলেন, ‘তার (আইভী) সরকারদলীয় প্রার্থী হিসেবে অবস্থান এতটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে, পায়ের নিচে মাটি এতটাই সরে গেছে যে, পুলিশ প্রশাসনের লোক দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আপনাকে মাঠে নামতে হচ্ছে।’

আইভীর মসজিদ-মন্দির দখল বা উচ্ছেদে আপনার কাছে কী প্রমাণ আছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তৈমূর বলেন, শত বছরের প্রাচীন শহরের দেওভোগ লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরের সম্পত্তি কী করে বিক্রি হতে পারে? এ অভিযোগ ও আশঙ্কা খোদ এই শহরের হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সরকারি দলের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন। একই সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৫০০ বছরের প্রাচীন মুঘলীয় মসজিদ তথা জিমখানা মসজিদের জায়গাও তিনি (আইভী) দখল করেছেন বলে ওই মসজিদ কমিটি ও ওয়াক্ফ এস্টেটের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কী করে একজন মানুষ সততার বুলি আওড়ানোর পর রাজপ্রাসাদ গড়ে তুলতে পারেন, আর কী করে জনগণের অধিকারকে সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি করতে পারেন। আমাদের জানা তথ্য অনুযায়ী এই সিন্ডিকেট গত ১০ বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার টেন্ডার পেয়েছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর