শিরোনাম
সোমবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী

বড় জনসমাগম এড়িয়ে চলুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি বড় জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যেহেতু ওমিক্রন নতুনভাবে আবার সারা বিশ্বে দেখা দিচ্ছে, এখানে আমাদের দেশের মানুষকে একটু স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে।

গতকাল দেশের আট বিভাগীয় শহরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যার ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। বক্তব্য শেষে আট বিভাগীয় শহরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৬০ শয্যাবিশিষ্ট সমন্বিত ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে এসব ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। ফলে এখন থেকে দেশের মানুষ সব বিভাগীয় শহরেই বিশেষায়িত এসব সেবা পাবেন। দেশের মানুষের জন্য কভিড টিকার ৩১ কোটি ডোজ ব্যবস্থা করে রেখেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনি সাধারণত আমাদের দেশে শীতকালে একটু সর্দি, কাশিও হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সবাই মাস্কটা ব্যবহার করবেন। খুব বড় সমাগমে যাবেন না। সেখান থেকে একটু নিজেদের সুরক্ষিত রাখবেন। আর কোনো বড় সমাবেশ যেন না হয়, সেটার দিকে লক্ষ্য রাখবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধিটা সবাই মেনে চলবেন, সেটাই আমি চাচ্ছি। তিনি বলেন, প্রায় ৩১ কোটি ডোজ টিকা ব্যবস্থা করে রেখেছি। একটি মানুষও যেন টিকা ছাড়া না থাকে, আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি। এ ক্ষেত্রে দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাব, কোনো ধরনের অপপ্রচার এবং গায়ে সুঁই ফোটানোর ভয়কে উপেক্ষা করে টিকা নিতে হবে। সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন থেকে বাঁচতে ভয় না পেয়ে টিকাটা নিয়ে নেবেন। তিনি বলেন, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নাকি শিশুদের জন্য সব থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সে জন্য আমরা ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাও নিয়েছি। তা ছাড়া আমি সবাইকে অনুরোধ করব আপনারা ভয় না পেয়ে টিকাটা নিয়ে নিন। টিকাটা নিলে হয়তো কিছুদিন ভোগাবে, কিন্তু জীবনটা রক্ষা পাবে। এরই মধ্যে আমরা প্রায় ১৩ কোটির বেশি ডোজ টিকা প্রদান করেছি। এর মধ্যে ডাবল ডোজও হয়ে গেছে এবং এখন তো আমরা বুস্টার ডোজও দেওয়া শুরু করেছি। আমাদের দেশের মানুষ সুস্থ ও সুরক্ষিত থাকুক সেটাই আমি চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি গবেষণায় কিছুটা সময় দিতে দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ৮টি বিভাগে ৮টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সেখানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের পাশাপাশি গবেষণায়ও আপনারা মনোযোগী হবেন। তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করব। তিনি বলেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হলো সেখানে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গবেষণাটা করা। আর আমাদের স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের গবেষণাটা একান্তভাবে অপরিহার্য।

 

শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে ভালো গবেষণা করে যাচ্ছেন। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাঁরা ভালো ও নামি-দামি চিকিৎসক হয়ে যান তারা তো চিকিৎসাসেবা দিতেই ব্যস্ত থাকেন। তাঁরা যদি কিছুটা সময় ব্যয় করে এই গবেষণার দিকে নজর দেন, আমাদের দেশের পরিবেশ, আবহাওয়া, জলবায়ু সবকিছু মিলিয়ে এদেশের মানুষের কী কী ধরনের রোগ দেখা দেয় এবং এর প্রতিরোধ শক্তিটা কীভাবে বাড়ানো যায় সেটার কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া যায়। দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন শুরু হয়েছে উল্লেখ করে এটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যার কথা চিন্তা করেই আমাদের এই ব্যবস্থাটা নিতে হবে।  তাঁর সরকারের সাভারে বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বায়োকেমিক্যাল, বায়োমেডিক্যাল, বায়োটেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, অনকোলজি এসব বিষয়ে গবেষণার খুবই প্রয়োজন। এসব বিষয়ের প্রতি চিকিৎসকদের নজর দিতে হবে। কেন আমাদের দেশের মানুষ নানারোগে আক্রান্ত হচ্ছে, সেগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ক্যান্সার, কিডনি এবং হার্টের রোগের প্রাদুর্ভাব একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে সব বিষয়ে সবাইকে একটু সচেতন হতে তিনি পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই জনগণের কাছে ক্যান্সার চিকিৎসা সহজলভ্য করতে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে হৃদরোগ, কিডনি ও ক্যান্সার রোগের সেবা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হয়ে আমাদের জনশক্তি গড়ে উঠুক। আর এই অতিমারিকে (করোনা) যেভাবে হোক আমাদের মোকাবিলা করতে হবে এবং এ জন্য মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। যেন জাতির পিতার আকাক্সক্ষা অনুযায়ী একবারে তৃণমূলের মানুষটি পর্যন্ত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা পেতে পারে।

এ ব্যাপারে তাঁর সরকার অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়ার মাধ্যমে একটি ঠিকানা গড়ে দেওয়াতে তাঁর সরকারের চলমান গৃহনির্মাণ কর্মসূচির পাশাপাশি সারা দেশে বিদ্যুতায়ন এবং রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ করে দেওয়ার মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষ বুুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে এই দেশকে স্বাধীন করেছে। কাজেই এই দেশ সবসময় বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। কারও কাছে হাত পেতে চলবে না এবং পরনির্ভরশীল হবে না। আত্মনির্ভরশীল, আত্মমর্যাদাশীল হবে। সেভাবেই আমাদের দেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি ও সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত, বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর