মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সংলাপ জমল না যে কারণে

বর্জন করেছে বিএনপিসহ ৭ দল, যোগ দিয়েছে জাতীয় পার্টিসহ ১৭ দল, আওয়ামী লীগ যাবে ১৭ জানুয়ারি, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংলাপের ফল শূন্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংলাপ জমল না যে কারণে

কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছেন। এদিকে রাষ্ট্রপতির সংলাপে এখন পর্যন্ত ১৭টি দল অংশ নিয়েছে। বিএনপিসহ সাত দল সংলাপ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।

সংলাপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ দলই ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে। দলগুলো বলছে, সরকার আন্তরিক হলে এক দিনের মধ্যেই আইন করা সম্ভব। এ ছাড়া নিরপেক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে দলগুলো। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সংলাপের ফল শূন্য; লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। নির্বাচন কমিশন-ইসি গঠনে ২০ ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছেন। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ মোট ৩২টি দলকে এখন পর্যন্ত সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপিসহ সাতটি দল সংলাপে অংশ নিচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ১৭টি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিয়ে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেছে। আগামীকাল ১২ জানুয়ারি বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে আগে থেকেই সংলাপে না যাওয়ার ঘোষণা রয়েছে। আওয়ামী লীগকে ১৭ জানুয়ারি সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

কী পাওয়া গেল সংলাপে? এমন প্রশ্নের জবাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘সংলাপে আমরা কিছুই পেলাম না। সংলাপের উদ্দেশ্য যদি হয় মতবিনিময় করা সবার সঙ্গে, তাহলে এটা সফলতা অর্জন করে না। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল সংলাপে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে।’

এই নির্বাচন বিশ্লেষক বলেছেন, ‘বস্তুত এ সংলাপ শুধু নিষ্ফলই নয়, অতীতে এ সংলাপ থেকে বিষফল সৃষ্টি হয়েছিল। নিষ্ফল প্রক্রিয়ার বিষফল আমরা পেয়েছিলাম রকিবউদ্দীন কমিশন ও নূরুল হুদা কমিশন। যারা আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। এ সংলাপ মূলত লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা। এতে কোনো সমাধান আসবে না। কারণ সংবিধানে ৪৮ অনুচ্ছেদের ৩ দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাদেরই নিয়োগ দেবেন, অতীতের মতো যাদের নাম প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করবেন।’ তিনি বলেন, ‘একে আমি সংলাপ বলব না। এটা মতবিনিময় সভা কিংবা আলোচনা সভা, ফটোসেশন বা চা চক্র বলা যেতে পারে। সংলাপের উদ্দেশ্য থাকে ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে, আলোচনার মাধ্যমে একটা সমঝোতায় পৌঁছানো। কিন্তু এখানে রাষ্ট্রপতি যা শোনাতে চেয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা তা-ই শুনেছেন।’ এই নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, ‘সংলাপের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবার মতামত নেওয়া। যেহেতু সংলাপে সবাই আসেনি তাই এটা নিষ্ফল। এটা সংলাপ নয়, মতবিনিময়।’ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেছেন, ‘সংলাপের যে আয়োজন, যারা সংলাপে অংশগ্রহণ করলেন এবং যারা অংশগ্রহণ করলেন না, সব মিলিয়ে আমি নাগরিক হিসেবে সংলাপ নিয়ে হতাশ। রাষ্ট্রপতির সংলাপে যদি সবাই যেতেন এবং তাদের কথাগুলো বলতেন সেগুলো মিডিয়ায় আসত। তখন আমরা নাগরিকরা জানতে পারতাম সংলাপে কে কী বলল। কী নিয়ে আলোচনা হলো।’ সংলাপের ফলাফল কী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সংলাপের ফলাফলের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। ১৭ জনুয়ারি আওয়ামী লীগের সংলাপ আছে। সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতি একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এখন পর্যন্ত সংলাপের আয়োজন এবং অংশগ্রহণ হতাশাব্যঞ্জক।’ রাষ্ট্রপতির সংলাপে প্রথম দিন অংশ নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আগেই আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। দলটি মনে করে, এখন যে সময় আছে এর মধ্যেই ইসি গঠনের আইন করা সম্ভব। আর তা সম্ভব না হলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে তা করতে পারেন। একেবারেই আইন প্রণয়ন করা সম্ভব না হলে গত দুবারের মতো সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের প্রস্তাব দেয় দলটি। এ ক্ষেত্রে তারা সার্চ কমিটির জন্য চারজনের নামের প্রস্তাব করেছে।

এদিকে সংলাপের দ্বিতীয় দিন অংশ নেয় ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। সংলাপ শেষে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় আমরা সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা সার্চ কমিটিতে একজন নারী ও একজন অধ্যাপককে রাখার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে কোনো নাম প্রস্তাব করিনি।’ আইন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। সাত দফা লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরে দলটি বলেছে, দেশের মানুষ সহিংস নির্বাচনের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণভাবে সব ধরনের প্রভাবমুক্ত পরিবেশে নির্বাচন দেখতে চায়।

২৭ ডিসেম্বর সংলাপ করে তরিকত ফেডারেশন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে চার দফা প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সুশীল সমাজকেও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে দলটি। বৈঠক শেষে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় বা সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছি।’ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনের দরবার হলে আলোচনায় অংশ নেয়। আহমদ আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা পাঁচ দফা প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেছি। এর মধ্যে আইন প্রণয়নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ ২৮ ডিসেম্বর সংলাপ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রতিষ্ঠা-সংক্রান্ত আইন তৈরির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে দলটি। আইন করার মতো সময় নেই- আইনমন্ত্রীর এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান, সে আইনটি কিন্তু এক রাতেই হয়েছিল, যেটা নিয়ে পরবর্তীকালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। এমনকি যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রশ্নে সংবিধান সংশোধনেও আমাদের বেশি সময় লাগেনি। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীও দু-এক দিনেই করা হয়। তাই আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে শীতকালীন অধিবেশন বসবে। এ অধিবেশনেই ইসি গঠনে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ মতে আইন তৈরি করে তা পাস করা সম্ভব।’ ২৯ ডিসেম্বর সংলাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ। দলের প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাষ্ট্রপতি বিদ্যমান পদ্ধতি অনুসরণ করে সার্চ কমিটি বা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে প্রস্তাব করবে। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ইমানদার ব্যক্তিদের সার্চ কমিটিতে রাখাসহ চারটি প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান দলের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানিয়েছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খান। একই সঙ্গে সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন প্রণয়নে সংসদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান এবং প্রয়োজনীয় বিধিবিধান প্রণয়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানান তাঁরা। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ। সংলাপ শেষে বের হয়ে বঙ্গভবনের সামনে বিকল্প ধারার মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান জানান, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সাত দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন চায় গণতন্ত্রী পার্টি। আইন করা সম্ভব না হলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

সংগঠনের সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী বলেন, আইন প্রণয়ন একান্তই সম্ভব না হলে বিকল্প হিসেবে যে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীদের নিয়ে তা গঠন করা যেতে পারে। তারা সিইসি এবং ইসির জন্য প্রতি পদে পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করবে। ৪ জানুয়ারি সংলাপে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে সাম্যবাদী দল। দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি বর্তমান বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শাসনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা বাস্তবসম্মত। সেই সরকার সংবিধান অনুসারেই গঠিত হবে। অথবা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অতীতে নির্বাচনকালীন একটি সরকার গঠন করেছেন সে রকমও হতে পারে।’ সংলাপে অংশ নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এম এ মতিন সাংবাদিকদের বলেন, সংলাপে বিশিষ্ট পাঁচ ব্যক্তির সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংলাপে যোগ দিয়ে সব দলকে নিয়ে নির্বাচনকালীন ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে গণফ্রন্ট। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠনে পাঁচ সদস্যের নামও তারা প্রস্তাব করেছে। গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। ১৯৭১ সালের পর সংসদ নির্বাচনে যেসব রাজনৈতিক দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল সেসব দলের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠিত হতে পারে। সংলাপে অংশ নিয়ে আইন প্রণয়নসহ ছয়টি প্রস্তাব দেয় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার প্রস্তাব দেয়। সংলাপে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যে দুটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল তারা বিতর্কিত ছিল। এ ছাড়া সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে স্বাধীন করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। তারা আরও বলেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা বা যোগ্যতার চেয়েও সরকারের নিরপেক্ষতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বর্জনের ঘোষণা বিএনপিসহ সাত দলের : বিএনপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দল সংলাপ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। সংলাপের ডাক পেয়েও অংশ না নেওয়া দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), এলডিপি, জেএসডি। না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। বর্জনকারী দলগুলো বলছে, ২০১২ ও ২০১৬ সালেও ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ হয়েছিল। ওই দুই সংলাপে অংশ নিয়ে তারা যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল এর কোনোটাই মূল্যায়ন করা হয়নি। ফলে নতুন করে বলার কিছু নেই। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রপতি সরকারের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করবেন। এটাই সত্য। আর সরকার প্রতিটি নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানায়। এজন্য নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে ইসি গঠনের কোনো অর্থই হবে না। তাই প্রথমে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি ফয়সালা করতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, এ সংলাপ অর্থহীন। শুধু নির্বাচন কমিশন গঠন নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কোনো নিশ্চয়তা বা সমাধান নয়। এ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির সংলাপে জেএসডি অংশগ্রহণ করছে না। এ ধরনের সংলাপ রাষ্ট্রপতির মর্যাদা সুরক্ষারও উপযোগী নয়। লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের নামে যা হচ্ছে তা হলো চা চক্র। আগেও আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কাক্সিক্ষত ফল আসেনি। এ সংলাপে যাওয়া অর্থহীন। কাজেই আমরা চা খেতে এবং জনগণের টাকা নষ্ট করতে যাইনি।’

ইসলামী আন্দোলনের আমির মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘২০১২ ও ২০১৭ সালের সংলাপে অংশ নিয়ে আমরা চরমভাবে হতাশ হয়েছি। ২০১২ সালের সংলাপে গঠিত ইসি ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করেছে, যেখানে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছেন। আর ২০১৭ সালের সংলাপের পর গঠিত কমিশন ১০১৮ সালে একটি চরম বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করেছে, যাকে অনেকেই মধ্যরাতের নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করে।’ বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘এর আগে দুবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও সংলাপে গিয়েছি আমরা। ওইসব সংলাপে দলের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছিলাম তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণে সংলাপে গিয়ে কোনো লাভ হবে না বলে মনে করে আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সিপিবি সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ‘সিপিবি নির্বাচনের আমূল সংস্কারের জন্য সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বসহ ৫৩টি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের সুপারিশমালা ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রদান করেছিল। এ অবস্থায় হুবহু আলোচ্যসূচিতে ও একই প্রকরণের আরেকটি সংলাপে যোগ দিয়ে সিপিবির নতুন কোনো কথা বলার নেই। সে কারণে এতে যোগদানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি না।’ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপ সময়ের অপচয়। এ সংলাপে তার দল অংশ নেবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর