বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

নিরপেক্ষ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ

♦ ইভিএম ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতার বড় অস্ত্র বললেন সিইসি ♦ ছাড় দেওয়া হবে না কাউকেই হুঁশিয়ারি পুলিশ সুপারের

জুলকার নাইন ও গোলাম রাব্বানী, নারায়ণগঞ্জ থেকে

নিরপেক্ষ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ

প্রচারণায় ব্যস্ত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমূর আলম খন্দকার -রোহেত রাজীব

প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। উৎসবমুখর পরিবেশ অলিগলিতে। ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে মহানগর। গানে-স্লোগানে মেতে আছেন কর্মী-সমর্থকরা। উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই ভোটারদেরও। প্রার্থীদের মুখে মুখে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য থাকলেও নেই তেমন কোনো সংঘাত-সহিংসতা। তবে সবার চিন্তা ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে।

মূলত ভোট গ্রহণ কতটা নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে স্থানীয় রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের। ভোটারদের মতোই প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী দাবি জানিয়েছেন নিরপেক্ষ ভোটের। গতকাল নারায়ণগঞ্জ সফরে এসে প্রধান নির্র্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা আশ্বাস দিয়েছেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসেছে ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা।

টানা গণসংযোগে থাকা আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী গতকাল টানবাজারে বলেছেন, ‘প্রশাসনের কাছে দাবি- মানুষ ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে যেন সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারে। সুন্দর নির্বাচন হয়েছিল বলেই আগেরবার জিতেছিলাম।’ একই দিন বর্ণাঢ্য র‌্যালি করা হাতি মার্কার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার মেট্রো হল মোড়ে বলেছেন, ‘পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ- আপনারা নিরপেক্ষ থাকুন। আশা করি নির্বাচন কমিশন জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে কাজ করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেবে। নির্বাচনে যেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে। জনগণ যেন ভোট দিতে পারে এবং কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।’

অন্যদিকে শহরের দেওভোগে একটি কলেজে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসারদের দিকনির্দেশনা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি সেখানে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলেন। প্রিসাইডিং অফিসারদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন পরিচালনার ব্যাপারে আপনার নিরপেক্ষতা সব থেকে বড় অস্ত্র। একজন সচেতন নাগরিক, শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের একেকটা মত থাকতে পারে, একেকজন ব্যক্তির প্রতি দুর্বলতা থাকতে পারে, রাজনৈতিক দলের প্রতি সহানুভূতি থাকতে পারে, দুর্বলতা থাকতে পারে। কিন্তু আপনি যখন নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন তখন কে কোন দলের, কে কোন মতের, কে কোন ধর্মের কিংবা গোত্রের তা আপনার মাথায় থাকে না নিশ্চয়ই। এবং সেভাবেই আপনার দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমরা সবাই তা-ই করব।’ ইভিএমে ভোট বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘ইভিএমের জন্য ইসিকে অনেক তিরস্কার সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করেছি এটাই একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে করা সম্ভব। তাই আমরা কোরও তিরস্কারে কর্ণপাত করিনি।’ নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে সিইসি বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো সমস্যা দেখি না। কোনো প্রার্থী তাদের সহনশীলতা এবং নির্বাচনের ব্যাপারে যে আচরণ এটা আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের যথেষ্ট রকমের কর্মতৎপরতা আছে। তারা প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, মিটিং করেছেন। তারা যখনই যেটা দরকার তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। এটাই বাস্তবতা। আমার মনে হয় খুবই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এই শেষ নির্বাচনে কোনো চাপ অনুভব করছেন কি না- জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘আগেও করিনি, এখনো করি না।’ একই অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেছেন, ‘যে কোনো উপায়ে নারায়ণগঞ্জে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেব। বিভিন্ন মতের মানুষের বসবাসের জনবহুল এই শহর অন্য যে কোনো স্থানের তুলনায় শান্ত রয়েছে।’

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনে কোনোরকম নাশকতার চেষ্টা করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। সেভাবে নির্দেশ দেওয়া আছে। আমরা শতভাগ স্বচ্ছ ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করব।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সামান্যতম শঙ্কা বা সংশয় নেই। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে বৈধ অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসী ধরতে অভিযান চলছে।’ তৈমূরের কর্মীদের ধরপাকড়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, ‘কোথায় বা কাদের আটক করা হচ্ছে সে তালিকা দিতে বলুন। তালিকা দিতে পারলে যাচাই করে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ তিনি বলেন, ‘শুক্রবার (আগামীকাল) ভোররাত থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সব লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা থাকবে। জেলার সংশ্লিষ্ট থানাগুলোয় বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও নাশকতা করতে পারে এমন লোকদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।’

ধরপাকড়, তল্লাশি চলছেই : নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র মেয়র প্রাথী তৈমূর আলম খন্দকারের লোকজন ধরপাকড় চলছেই। গতকাল সন্ধ্যায় প্রচারণা চালানোর সময় দুই যুবদল নেতাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শহরের খানপুর থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবদুর রহিমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ ছাড়া বাবুরাইল থেকে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল নেতা শিকদার বাপ্পীকে আটক করা হয়। ঘটনার পরপরই তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন অফিসে রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে যান। ওই সময় তাঁর ছোট ভাই ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘এভাবে আমাদের কর্মীদের আটক করে সরকার কী নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে? অচিরেই এসব বন্ধ করতে হবে। সরকারদলীয় প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত জেনে জুলুম-অত্যাচার শুরু হয়েছে।’

শামীম ওসমানের আচরণবিধি লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য নয় : নারায়ণগঞ্জে সিইসি বলেছেন, ‘সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের (নারায়ণগঞ্জ-৪ ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) সংবাদ সম্মেলন আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। তবে এ ব্যাপারে তাঁকে নোটিস করা বা শাস্তি দেওয়া বা আইনের আওতায় নিতে হবে এমন আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি।’

কেন্দ্রে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি : সিইসি নূরুল হুদা বলেছেন, ‘প্রিসাইডিং অফিসারদের প্রতি অনুরোধ- আপনাদের প্রতিটি কেন্দ্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। আর মাস্ক ছাড়া কাউকে নির্বাচনের বুথে বা কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকতে দেবেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নির্বাচনের কাজে সব সময় সম্ভব নয়। এটা বাস্তবতা। প্রিসাইডিং অফিসারদের বলব মাস্ক ছাড়া কোনো ভোটার যেন প্রবেশ করতে না দেন।’ করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকলে নির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্তে যাবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এটা এখনো বলা যাবে না। পরে দেখা যাবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি সিরিয়াস অবস্থা ধারণ করলে সে আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ মুহূর্তে বলা যাবে না।’

নারায়ণগঞ্জে ১০ ফ্যাক্টর

বাগ্‌বিতণ্ডা হতেই পারে : আইভী

অমানবিক আচরণ হচ্ছে : তৈমূর

 

সর্বশেষ খবর