বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

বৈশ্বিক মন্দায়ও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৪ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলমান করোনা মহামারি সংকটে কমেছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের ফলে আগামী দিনে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধি আরও কমবে। তবে বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও অগ্রগতি ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখবে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে বিশ্বব্যাংক মনে করে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী অর্থবছর ২০২২-২৩-এ প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটন সদর দফতর থেকে প্রকাশিত ও ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেকটাস, ২০২২’ বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

সংস্থাটি মনে করে, ২০২২ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার কমে ৪ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসতে পারে। ২০২৩ সালে তা আরও কমে ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এর পরও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার ভালো থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এতে আরও বলা হয়- প্রবৃদ্ধির হার কমবে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেও। ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধির হার কমে হবে ৬ শতাংশ। অথচ ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে শীর্ষস্থানে উঠে আসবে মালদ্বীপ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটি ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। তবে প্রবৃদ্ধি অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ায় (আগের অর্থবছরে মাইনাস ৭ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে) দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবে ভারত। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্জন হবে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভুটানের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ দশমিক ১ শতাংশ, পরের বছরের অর্জন হতে পারে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে নেপাল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং পরের বছর ৪ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং পরের বছর ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় খারাপ অবস্থানে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। ২০২১-২২ অর্থবছরে শ্রীলঙ্কা ২ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। ২০২০ সালে আফগানিস্তান মাইনাস ১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। তবে পরবর্তী বছরের কোনো তথ্যই পায়নি বিশ্বব্যাংক। এর আগে গত বছর জুনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক, জানুয়ারিতে তা বৃদ্ধি করেছে তারা। চলতি অর্থবছরের জন্য তারা প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বৃদ্ধি করেছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের জন্য বৃদ্ধি করেছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের পালে জোর হাওয়া লেগেছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক, এর নেতৃত্বেই রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে দেশি চাহিদাও বেড়েছে। শ্রম আয় ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে এটি ঘটেছে। প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হচ্ছে দেশি চাহিদা বৃদ্ধি। তবে এ চাহিদা ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিষয়ে ইতিবাচক কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার ২০২১-২৩ সময়ে অনেকটাই কমে আসবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়ে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার ছিল ৪ শতাংশ। কিন্তু ২০২১-২৩ সময়ে তা কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

 

সর্বশেষ খবর