সোমবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

পাঁচ পৌরসভার চারটিই নৌকার

টাঙ্গাইল-৭ এ আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী, বাঁশখালীতে ভোট বর্জন অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ও ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে গতকাল টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের উপনির্বাচন এবং বাঁশখালী, নাটোর, বাগাতিপাড়া, ঝিকরগাছা ও নোয়াখালী পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। টাঙ্গাইল উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচটি পৌরসভার মধ্যে তিনটিতেই মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। একটিতে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। গতকাল রাত ৮টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঝিকরগাছা পৌরসভায় নৌকার প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খান আহমেদ শুভ (নৌকা) বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির জহিরুল হক জহির (লাঙ্গল) পান ১৬ হাজার ৭৭৩ ভোট। গতকাল রাতে রিটার্নিং অফিসার ও ময়মনসিংহ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী এ ফলাফল ঘোষণা করেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির গোলাম নওজব চৌধুরী (হাতুড়ি) পেয়েছেন ১ হাজার ৪৫ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির রুপা রায় চৌধুরী (ডাব) ৪৩৮ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম নুরু (মোটরগাড়ি) পেয়েছেন ২ হাজার ৪৩৬ ভোট। নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান বলেন, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ৩৬.৬৩ ভাগ ভোট কাস্ট হয়। নির্বাচনে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল হক জহির নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনেন। অপরদিকে ভোট গ্রহণের পরে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির গোলাম নওজব চৌধুরী (হাতুড়ি) অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন।

এর আগে গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মতো উপনির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হয়। নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচনী এলাকায় একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আটজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, চার প্লাটুন বিজিবি, ৮১০ জন পুলিশ সদস্য, র‌্যাবের মোবাইল টিম এবং প্রায় সাড়ে ১৮০০ আনসার সদস্যসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।

বাঁশখালী পৌরসভা, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তোফাইল বিন হোসাইন। তিনি স্বতন্ত্রী প্রার্থী কামরুল ইসলাম হোসাইনীকে ১২ হাজার ৯৮০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হন। গতকাল চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র রিটার্নিং অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম ফলাফল ঘোষণা করেন।

জানা যায়, বাঁশখালী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করেন তোফাইল বিন হোসাইন এবং কামরুল ইসলাম হোসাইনী। তোফাইল পান ১৪ হাজার ৩৪৫ ভোট এবং কামরুল পান ১ হাজার ৩৬৫ ভোট। নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৪ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

এদিকে গতকাল ভোট চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম হোসাইনী। পৌরসভা কার্যালয়ের মাঠে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, সব কটি গোপন কক্ষে নৌকার লোকজন নৌকা মার্কায় জোর করে সুইচ টিপে ভোট নিচ্ছে। ভোটাররা কাউন্সিলর পদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলেও মেয়র পদে জোর করে ভোট নেওয়া হচ্ছে। এমনকি তার এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে।

নাটোর পৌরসভা : নাটোর পৌরসভায় উৎসবমুখর পরিবেশে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যে নির্বাচনে বর্তমান মেয়র নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি উমা চৌধুরী জলি দ্বিতীয় বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৫৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র ও নাটোর পৌর বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি এমদাদুল হক আল মামুন পেয়েছেন ১৩ হাজার ৭৮১ ভোট। নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৩ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আছলাম নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বাগাতিপাড়া পৌরসভা, নাটোর : নাটোরের বাগাতিপাড়া পৌরসভায় দীর্ঘ ১৬ বছর পর গতকাল ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী (থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক) শরিফুল ইসলাম লেলিন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত ফলাফলে শরিফুল ইসলাম লেলিন পেয়েছেন ২ হাজার ২৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ময়মুর সুলতান নারিকেল গাছ প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ১৮৮ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীকের উপাধ্যক্ষ শাহিদা খাতুন। তিনি পেয়েছেন ১ হাজার ৬৩৬ ভোট। রিটার্নিং কর্মকর্তা আহমেদ আলী প্রাথমিকভাবে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ঝিকরগাছা পৌরসভা, যশোর : ঝিকরগাছা পৌরসভায় মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১ হাজার ২০১ ভোটে এগিয়ে আছেন। তিনি পেয়েছেন ৬ হাজার ৯১৩ ভোট। মামলার কারণে পৌরসভার একটি কেন্দ্রে (খাদেমুল ইনসান কেন্দ্র) ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। যে কারণে গতকাল রাত ৮ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র পদের ফলও ঘোষণা করা হয়নি। তবে ঘোষণা না হওয়া কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের ভোট সবসময় বেশি হয়ে থাকে। সে কারণে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামালই আবার মেয়র হচ্ছেন বলে তার কর্মী সমর্থকরা মনে করছেন।

নোয়াখালী পৌরসভা : নোয়াখালী থেকে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনে আবারও নৌকার জয় হয়েছে। ২৬ হাজার ৪০৮ ভোট পেয়ে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নোয়াখালী জেলা বিএনপি থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শহীদুল ইসলাম কিরণ কম্পিউটার প্রতীকে পেয়েছেন ৮ হাজার ৬২৮ ভোট। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লুৎফুল হায়দার লেনিন মোবাইল প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ২৪৪ ভোট। গতকাল সন্ধ্যায় এ ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম। এর আগে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্ট বের করে দেওয়া, একজনের ফিঙ্গার প্রিন্ট আর বাটনে অন্যজনের চাপ দেওয়াসহ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হয় ভোট গ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সকাল থেকে জেলা শহরের প্রতিটি কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষকে ভোটের লাইনে দেখা যায়। দুপুরের পর কমে যায় ভোটার। তবে কেন্দ্রগুলোর চারপাশের সড়কগুলোয় ছিল নৌকার কর্মী সমর্থকদের ভিড়। তাদেরকে মিছিল করতে দেখা যায়। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু নাছের নারিকেল গাছ প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ১১৭ ভোট, মো. কাজী আনোয়ার হোসেন জগ প্রতীকে পেয়েছেন ২২৭ ভোট। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মো. সহিদুল ইসলাম হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৯৫০ ভোট। জাতীয় পার্টির মো. সামছুল ইসলাম মজনু লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ১৭৯ ভোট।

জেলা বিএনপি থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদুল ইসলাম কিরণ বলেন, ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণ হলেও বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। সকালে সোনাপুর ব্রদার আন্দ্রে কেন্দ্রে তার এজেন্টদের ফরম নিয়ে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী তমাল তার অন্যতম কর্মী শওকত হোসেন দিদারকে মারধর করে ফরম ছিনিয়ে নেয়।

এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থী লুৎফুর হায়দার লেনিনও। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাইজদী পাবলিক কলেজ, আল ফারুক স্কুল কেন্দ্র ও হরিরামপুর ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের দেখা যায়নি।

সর্বশেষ খবর