মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ঘুরেফিরে এবারও আসছে সাত প্রস্তাব

ডিসি সম্মেলন শুরু আজ

উবায়দুল্লাহ বাদল

করোনা মহামারির দুই বছর বাদ দিলে প্রতি বছরই ঘটা করে অনুষ্ঠিত হয় জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের প্রস্তাব উত্থাপন হয় সম্মেলনে। নেওয়া হয় অসংখ্য সিদ্ধান্ত। সরকারি নথিতে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭৫ শতাংশ বলা হলেও বাস্তবে তা ৫০ শতাংশের কম বলে মন্তব্য একাধিক ডিসির। তাদের মতে, বছরের পর বছর অনেক প্রস্তাব ঘুরেফিরেই আসছে। এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপট সামনে রেখে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন।

২০০৭ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস আলাদা হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই ডিসি সম্মেলনের আগে ফৌজদারি অপরাধ আমলে নেওয়ার ক্ষমতা চান প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিশেষ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৯৮, ১০০, ১০৮, ১১০, ১৩২, ১৩৩, ১৪৪, ১৪৫ ও ১৪৭ ধারার ক্ষমতা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অর্পণের এখতিয়ার সরকারের পাশাপাশি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়ার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করার দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। কিন্তু এ ইস্যুতে সাড়া মিলছে না। সর্বশেষ ২০১৯ সালেও দেওয়া হয়েছিল একই প্রস্তাব। তবে এবার আসছে ভিন্ন ফরম্যাটে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে আদালতের আদেশ অমান্যকারীদের বিষয়ে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না বিচারকরা। তাই আদালতের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে দন্ডবিধি, ১৮৬০-এর ২২৮ ধারা মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলে অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব এনেছেন নাটোরের ডিসি। ২০০৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ডিসিদের একটি প্রস্তাব ছিল প্রতি উপজেলায় সর্বোচ্চ কতটি ইটভাটা হবে তার সিলিং নির্ধারণ করে দেওয়া। এটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছরই একই বিষয়ে সুপারিশ করেন তারা। এবারের সম্মেলনেও বিষয়টি এনেছেন চাঁদপুরের ডিসি।

২০১৬ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সুপারিশে বরিশালের ডিসি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমি ও বাঙ্কার সংস্কার এবং ওই সময়ের টর্চার সেলের যন্ত্রটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য জাদুঘর নির্মাণেরও প্রস্তাব করেন সিলেটের ডিসি। একই ধরনের সুপারিশ ছিল ২০১২ থেকে গত কয়েক বছর ধরে। এবারও একই প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ডিসি। ২০১৬ সালের ডিসি সম্মেলনে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ছিল- সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বহুতলবিশিষ্ট কোয়ার্টার বা ডরমেটরি নির্মাণের। এর আগে ২০০৭ সালের ডিসি সম্মেলনের পর কয়েক বছর ধরে একই প্রস্তাব আসে। এবারও এই প্রস্তাব এনেছেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, নড়াইল, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লার ডিসি।

২০০৭ সালের সম্মেলনে কয়েকজন ডিসি গ্রাম-পুলিশের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তা আমলে নেওয়া না হলে ২০০৮ সালে আবারও বিষয়টি তোলেন ডিসিরা। এরপর ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে বিষয়টি উত্থাপন করা হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এবারও গ্রাম-পুলিশের বেতন-ভাতা ও আনুতোষিক ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব এনেছেন চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরগুনা ও যশোরের ডিসি।

২০১০ সালের ডিসি সম্মেলনে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সুপারিশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্রাদি সংরক্ষিত থাকে। এসব অফিস সংস্কার ও নিরাপত্তার জন্য নৈশপ্রহরী নিয়োগের সুপারিশ করেছিলেন কয়েকটি জেলার ডিসি। প্রায় অভিন্ন সুপারিশ ছিল ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সম্মেলনে। তারপরও বাস্তবায়ন হয়নি ডিসিদের এ দাবি। এবারও প্রতি উপজেলা ও ইউনিয়নে ভূমি অফিস  নির্মাণের প্রস্তাব এনেছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, খাগড়াছড়ি ও বান্দবানের ডিসি।

এ ছাড়া প্রায় প্রতি বছরই সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মামলা মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের প্রস্তাব করেন একাধিক জেলার ডিসি। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টির যৌক্তিকতা স্বীকার করলেও এর অদ্যাবধি কোনো সমাধান হয়নি। ফলে ২০১৯ সালে লালমনিরহাটের ডিসি একই বিষয়ে প্রস্তাব পাঠান। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞ জিপি/এজিপিরা সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনা করে থাকেন। তাদের পদ স্থায়ী না হওয়ায় তাদের জবাবদিহিতা থাকে না। সময়ে সময়ে আইন কর্মকর্তারাও পরিবর্তন হন, ফলে সরকারের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়।’ কিন্তু সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এবারও সরকারি সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনার জন্য স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন মাগুরা ও ঝিনাইদহের ডিসি।

ডিসি সম্মেলন শুরু আজ  : তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ (মঙ্গলবার)। বরাবরের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। এবারের সম্মেলনের ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। প্রথম দিন সকাল ১০টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। গতকাল এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ডিসি সম্মেলনে এবার সবকিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। বেশি জায়গার জন্য ওসমানীতে নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও শুধু ১৫ মন্ত্রী ও ১৫ সচিবকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। কার্য অধিবেশনগুলোতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিব এসে স্টেজে বসবেন, জেলা প্রশাসকরা নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবেন। এবার সম্মেলনে মোট ২৫টি অধিবেশন হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্য অধিবেশন ২১টি। এ ছাড়া একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, রাষ্ট্রপতির দিকনির্দেশনা গ্রহণ নিয়ে একটি, স্পিকারের শুভেচ্ছা বক্তব্য নিয়ে একটি ও প্রধান বিচারপতির শুভেচ্ছা বক্তব্য নিয়ে একটি অধিবেশন হবে। অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে করা করোনা পরীক্ষায় রাজশাহী ও বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার এবং কক্সবাজার, রাজশাহী, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চুয়াডাঙ্গার ডিসির করোনা শনাক্ত হয়েছেন। ডিসিদের আমরা নির্দেশনা দিয়েছি তাদের গানম্যান, গাড়িচালক এবং তাদের সঙ্গে যারা আসবেন সবাইকে অবশ্যই আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর