ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতা চলছেই। গতকাল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে এক যুবলীগ নেতার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে নির্বাচনী ঘটনার জেরেই এ হত্যাকান্ড ঘটেছে। এ ছাড়া দিনাজপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ঝিনাইদহ : প্রাণনাশের ভয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেও শেষরক্ষা হয়নি পীর আলী (৩৩) নামে এক যুবলীগ নেতার। সাধারণ ডায়েরি করার ২০ দিনের মাথায় গতকাল সকালে নিজ গ্রামের খালপাড় থেকে গলায় রশি বাঁধা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে কালীগঞ্জের কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনী ঘটনার জের এবং এক মামলার সাক্ষী হওয়ার কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় বখাটেদের হামলায় আহত বাবার দুই পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। ওই ঘটনায় করা মামলার সাক্ষী ছিলেন পীর আলী। এ জন্য তাকে হুমকিধমকি দেওয়া হয়। জীবন বাঁচাতে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। পীর আলী ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের সামছুল ইসলামের ছেলে। তিনি কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কামাল হোসেনের কাছে পরাজিত হন। কামাল হোসেন ওই দুই পা কাটা মামলার আসামি। এ বিষয়ে ইউপি সদস্য কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও পীর আলীর সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। তারা একসঙ্গে রাজনীতি করতেন। পীর আলীর মা মনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পীর আলীর অনেক শত্রু ছিল, তারা প্রায়ই হুমকি দিত। কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আবু সুফিয়ান বলেন, পীর আলী রবিবার রাত ৯টার দিকে গ্রামের একটি দোকান থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। গতকাল সকালে গ্রামের একটি খালের ধারে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন লোকজন। তার গলায় রশি ছিল, যা একটি গাছের ডালের সঙ্গে বাঁধা। ডালটি ভেঙে মাটিতে পড়ে ছিল। এ বিষয়ে কালীগঞ্জ বারোবাজার পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মকলেচুর রহমান জানান, লাশটি একটি গাছের নিচে পড়ে ছিল। তার গলায় রশি পেঁচানো এবং একটি ডালের সঙ্গেও রশি জড়ানো ছিল। তবে গায়ে তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তাই এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর একদল সন্ত্রাসী হাতুড়ি, রড ও শাবল দিয়ে কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের শাহানূর বিশ্বাসকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় ওই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন শাহানূর। পরে চিকিৎসার সময় শাহানূর বিশ্বাসের দুই পা কেটে ফেলতে হয়। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ আদালতে একটি ও কালীগঞ্জ থানায় আরেকটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় সাক্ষী ছিলেন পীর আলী।দিনাজপুর : বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে হুমকিধমকি ও অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ তুলেছেন সদরের সুন্দরবন ইউপির আওয়ামী লীগের প্রার্থী অশোক কুমার রায়। গতকাল এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে অশোক কুমার রায় বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সুন্দরবন ইউপি নির্র্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুল লতিফ বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি চেষ্টা করছেন নির্বাচনের আগে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বড় ধরনের সহিসংতার সৃষ্টি করার। তিনি আমার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধা সৃষ্টিসহ নিরীহ ভোটারদের হুমকিধমকি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন।’