বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা প্রকাশকারীদের সব ভুল ধারণা দূর করে বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বছরে ইউএনসিডিপি থেকে বাংলাদেশকে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বৈশ্বিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার পরিকল্পনা গ্রহণপূর্বক তা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সিনিয়র সচিব/সচিবদের নেতৃত্বে বিষয়ভিত্তিক সাতটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটিতে সরকারের বিভিন্ন দফতর ছাড়াও বেসরকারি অংশীজনদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুবিধা বিশেষ করে রপ্তানির ক্ষেত্রে বর্তমানে যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া যায়, তা আর ২০২৬ সালের পর অব্যাহত থাকবে না। তাই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যাতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা ধরে রাখতে পারে তার জন্য সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে বাংলাদেশের জন্য যাতে উত্তরণের পরেও বিভিন্ন সুবিধা অব্যাহত রাখা হয় তার জন্য জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার পর তাঁর সরকার  বৈশ্বিক বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বৈশি^ক বাণিজ্য ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ  মোকাবিলায় রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার প্রেফারেন্সিয়াল মার্কেট অ্যাক্সেস অ্যান্ড ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট বিষয়ে কৌশলপত্র এবং সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ। সংসদ নেতা জানান, এ লক্ষ্যে চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ), মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে ১০টি দেশ ও ৩টি জোটের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশগুলো হলো- ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, মালয়েশিয়া এবং আশিয়ান অর্থনৈতিক জোট, মার্কোসর জোট ও ইউরেশিয়া অর্থনৈতিক জোট। এ ছাড়া তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, মরক্কো, মরিশাস, সেনেগাল, নাইজেরিয়া, সিয়েরালিওন, কেনিয়া ও জিসিসিভুক্ত দেশের সঙ্গে পিটিএ/এফটিএ/সেপা নেগোশিয়েশন কার্যক্রম পরিচালনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সংসদ নেতা এ প্রসঙ্গে আরও জানান, ডব্লিওটিওতে উত্তরণকারী দেশগুলোর জন্য যাতে বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট মেজার্স (আইএসএম), বিশেষ করে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা ও বিভিন্ন ডব্লিওটিও থেকে অব্যাহতি সুবিধা, বেশ কয়েক বছরের জন্য উত্তরণের পরও অব্যাহত থাকে সেজন্য বাংলাদেশ এলডিসি গ্রুপের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সাড়ে সাত লাখ বুস্টার ডোজ প্রদান  : সরকারি দলের অপর সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশে এ পর্যন্ত (১৭ জানুয়ারি, ২০২২) ৭ লাখ ৪১ হাজার ২৬৫ জনকে বুস্টার ডোজ প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর পরই সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা হিসেবে বিনামূল্যে টিকা প্রদানের বিষয়টি তাঁর সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ লক্ষ্যে করোনা টিকা আবিষ্কার ও ব্যবহারের অনুমতি প্রাপ্তির পূর্ব হতেই আমরা টিকা সংগ্রহ ও টিকা প্রদানের বিষয়ে সব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। তারই ফলস্বরূপ দেশব্যাপী ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখে কভিড বিনামূল্যে টিকা প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয় এবং অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে।

সংসদ নেতা জানান, দেশব্যাপী ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের আওতায় ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ পর্যন্ত মোট আট কোটি ৯১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৭৮ জনকে প্রথম ডোজ এবং ৫ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার ৮৩৪ জনকে দ্বিতীয় ডোজসহ সর্বমোট ১৪ কোটি ৬১ লাখ ৮৪ হাজার ৮১২ জনকে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বের ন্যায় দেশের কভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনা করে। বাংলাদেশ সরকারও চলমান কভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় বুস্টার ডোজ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে ন্যাশনাল ইম্যুনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ, বাংলাদেশের সুপারিশ অনুযায়ী এবং করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির অনুমোদনক্রমে দেশব্যাপী গত ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ হতে বুস্টার ডোজ প্রদান শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ষাটোর্ধ্ব জনগোষ্ঠী, সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের ও বিদেশগামী কর্মীদের বুস্টার ডোজ প্রদান করা হচ্ছে।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৫ বছর মেয়াদি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে ১৬৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৬৩ দশমিক ৫ স্কোর নিয়ে ১০৯তম অবস্থান লাভ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের পর থেকে এসডিজি সূচকে যে তিনটি দেশ সবচেয়ে উন্নতি লাভ করেছে, বাংলাদেশ তার একটি।

সংসদ নেতা জানান, দারিদ্র্যের অবসানে বাংলাদেশ সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালে সাড়ে ৩১ শতাংশ থেকে ২০১৯ সালে সাড়ে ২০ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার একই সময়ে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে সাড়ে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, এই অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশ বিশ্বমহলে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করছে। বাংলাদেশ দারিদ্র্য নিরসন, নারীর ক্ষমতায়নে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলকে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের মুখপাত্র হিসেবে বাংলাদেশ এ খাতে সুনামের সঙ্গে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। একই সঙ্গে দেশের সার্বিক উন্নতি সাধিত হচ্ছে এবং ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর