শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যাংক থেকে ১৮ কোটি টাকা হাতানোর চেষ্টা

জড়িত কর্মকর্তা, সার্ভার থেকে সংগ্রহ করতেন তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইলেকট্র্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) জালিয়াতির অভিযোগে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম জাকির হোসেন। তিনি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার এসএমই সেলস টিম ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। একটি চক্র অন্য একটি অ্যাকাউন্টে তাৎক্ষণিক তহবিল স্থানান্তরের বিশেষায়িত পদ্ধতি রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) ব্যবহার করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে (ডিবিবিএল) রাখা ওয়ালটন গ্রুপের সাড়ে ৬ কোটি এবং ইউনাইটেড গ্রুপের ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এর নেপথ্যে থাকা জাকিরসহ ১০ জনকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর নর্দার ম্যাগপাই রেস্টুরেন্ট ও ফুটওভার ব্রিজ থেকে গ্রেফতার করেছে ভাটারা থানা পুলিশ।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আসাদুজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ডিবিবিএলে চাকরি করার সুবাদে ব্যাংকের সার্ভার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করতেন জাকির। যেসব অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ বেশি থাকত তাদের ব্যাংক হিসাবের স্বাক্ষর জাল করে আরটিজিএসের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের পরিকল্পনা করেন আটককৃত ব্যাংক কর্মকর্তা। ডিবিবিএলের একটি শাখায় থাকা ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা আরটিজিএস ফরমে ট্রান্সফারের একটি আবেদন করা হয় গত ২৫ জানুয়ারি সকালে। এনআই করপোরেশন বিডি লি. নামে একটি কোম্পানির এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফারের জন্য আবেদনটি করা হয়। আবেদনটি অস্বাভাবিক মনে হয় ডিবিবিএলের ওই শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে। তিনি তাৎক্ষণিক ওয়ালটন গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওয়ালটনের কর্মকর্তারা ব্যাংকে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করেন। সেখানে গিয়ে তারা বুঝতে পারেন এখানে প্রতারক চক্রের হাত রয়েছে। এরপর টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি স্থগিত করা হয়।

গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা এই চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছি। চক্রটির কার্যক্রম ব্যাংকের ভিতর থেকে শুরু হয়। এর বাইরে চক্রটির সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। আমরা যখন তাদের গ্রেফতার করতে যাই তখন তারা ইউনাইটেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল। চক্রটি দুভাবে কাজ করে। এক অংশ গ্রুপ বা ব্যক্তির টাকা ট্রান্সফার করবে সেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে। আরেকটি অংশ যেই শাখায় টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি জমা পড়বে, সেই শাখার ব্যবস্থাপককে তাদের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করে। চক্রটি এ রকম জালিয়াতি আরও করেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে এরা এ রকম ট্রান্সফার করেছে কি না তা আমরা জানি না। আদালত তাদের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। এরা মূলত বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা গ্রুপের অ্যাকাউন্টকে টার্গেট করে। এমন প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করে যেখান থেকে অ্যামাউন্ট ট্রান্সফার হলে যেন তাড়াতাড়ি বোঝা না যায়। কেননা বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বড় অঙ্কের টাকা থাকে। গত ২৭ জানুয়ারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ইউনাইটেড হাসপাতালের একটি অ্যাকাউন্টে থাকা ১৪ কোটির মধ্যে ১২ কোটি টাকা এনআই করপোরেশন বিডি লি. নামে একটি কোম্পানির এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফারের জন্য আরেকটি আবেদন করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর