শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
শিক্ষার্থীদের নতুন ঘোষণা

উপাচার্যের ক্যাম্পাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ক্যাম্পাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গান, কবিতা, নাটক, গ্রাফিতি, রোড পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে আন্দোলন চলবে।

শাবি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে তার বাসভবনের সামনে যেখানে শিক্ষার্থীরা টানা ১৬৩ ঘণ্টা অনশন করেছিলেন, সেখানে ‘মুক্তি অথবা মৃত্যুর স্লোগানের আলপনা এঁকেছেন অন্য সহপাঠীরা। এ প্রতিবাদী আলপনার কাজ তারা শুরু করেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। যা শেষ হয় মধ্যরাতে। অনশনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য উৎসর্গ করা ‘মৃত্যু অথবা মুক্তি’ লেখার ওপর একটি স্ট্যান্ডে স্যালাইন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক অধ্যাপক ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন থেকে সরে এলেও উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল ছিল আন্দোলনের ১৬তম দিন। বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ‘হীরক রাজার দেশে’ ও ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়া পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কিলো রোডে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ‘মৃত্যু অথবা মুক্তি’ শীর্ষক আলপনা আঁকেন শিক্ষার্থীরা। মধ্যরাত পর্যন্ত  প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিবাদী গান, ছড়া, কবিতাসহ নানা আয়োজন ছিল কার্যক্রমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরেও উপাচার্যবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান এবং কার্টুন আঁকা হয়েছে। গোলচত্বরের অর্ধেক অংশজুড়ে ‘পতন পতন পতন চাই, স্বৈরাচারের পতন চাই’, ‘যেই ভিসি মিথ্যা বলে,  সেই ভিসি চাই না’, ‘যেই ভিসি বোমা মারে, সেই ভিসি চাই না’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, শাবিপ্রবি মুক্তি পাক’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা হয়েছে। আলপনার জন্য শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার আগে থেকেই রংতুলিসহ প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে একত্রিত হতে থাকেন।

অসুস্থ আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলায় আহত ও অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরের সামনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে মোহাইমিনুল বাশার রাজ ও সামিউল এহসান শাফিন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলায় আহত ও অনশনে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের ব্যয়ভার গ্রহণ করেছেন। এ জন্য আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। গুরুতর আহত সজল কুন্ডকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসারও দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’ সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষামন্ত্রীকে শাবিপ্রবিতে আসার আমন্ত্রণ : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে শাবিপ্রবিতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার বলেন, আমরা দেখেছি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ঢাকায় তার প্রেস ব্রিফিংয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে শাবিপ্রবিতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমারা তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আলোচনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।

প্রশাসনিক পদগুলোতে জবাবদিহিতা চান শিক্ষার্থীরা :  বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টরসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদগুলোতে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা তৈরি করতে সরকারের হস্তক্ষেপ চান শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে শাহরিয়ার আবেদিন সাংবাদিকদের জানান, প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে শিক্ষার্থীবান্ধব ব্যক্তিরা যেন আসে তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই সারা বছর যেন হল খোলা থাকে, ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ ফাঁড়ি অপসারণ, শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা করা, লাইব্রেরি সপ্তাহে ৭ দিন খোলা রাখা, পরীক্ষার ফলাফল ডিজিটালাইজড করা, গবেষণায় শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত অনুদান দেওয়া ইত্যাদি।

স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আছেন অনশন করা শিক্ষার্থীরা : অনশন করা শিক্ষার্থীর মধ্যে বর্তমানে মাহিন শাহরিয়ার রাতুল হাসপাতালে আছেন। বাকিরা হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনশনে থাকা অবস্থায় রাতুলের এপেন্ডিসাইটিসের অস্ত্রোপচার হয়। সেই ক্ষত না সারায় তিনি হাসপাতালে আছেন। অনশন করা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে দুর্বলতা, মাসল শ্রিংক, নিম্ন রক্তচাপ, রক্তের গ্লুকোজ লেভেল কমে যাওয়া, রক্তশূন্যতা, রক্তে ইলেকট্রোলাইট কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাকি অনশনকারীদের এখনো শারীরিক দুর্বলতা, খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়া, বারবার ক্যানোলা লাগানোর কারণে হাতে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে ইনফেকশনের সমস্যা আছে। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রভোস্টের অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের ছাত্রীরা। এর জের ধরে তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে এবং পরে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের অর্ধশত লোক আহত হন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে তারা অনশনে যান। তাদের এক দফা দাবি ‘উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। অবশেষে সাত দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন হকের প্রতিশ্রুতিতে সেই অনশন ভাঙেন অনশনকারীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর