শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

কূলকিনারা নেই ১০ বছরেও

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়েছে ৮৫ বার, প্রকাশ হলো না আসল রহস্য, অধরা থেকে গেল খুনিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কূলকিনারা নেই ১০ বছরেও

১০ বছর পার হয়ে গেলেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার কূলকিনারা হয়নি। ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়েছে ৮৫ বার। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার এখন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর। সর্বশেষ ২৪ জানুয়ারি এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সেদিনও তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে দেন বিচারক।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রুনির ভাই বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। মামলার পর রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আটজনকে আটক করা হয়। বাকিরা হলেন- রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর, আবু সাঈদ ও বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির। এর মধ্যে পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান জামিনে রয়েছেন।

সাগর-রুনি হত্যার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সে সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ তদন্তে ‘প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি’ আছে বলে তৎকালীন পুলিশপ্রধান মন্তব্য করেছিলেন। মামলার প্রথম তদন্ত শুরু করেন শেরেবাংলানগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জহুরুল ইসলাম। চার দিনের মাথায় মামলা হাতবদল হয় ডিবি পুলিশের কাছে। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। এরপর হাই কোর্ট বিভাগের এক রিট পিটিশনে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলার তদন্তভার র‌্যাবে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের ৭৬ দিনের মাথায় ওই বছরের ২৬ এপ্রিল পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করা হয় সাগর-রুনির লাশ। লাশের ভিসেরা আলামতসহ আরও কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর পর থেকে র‌্যাব নতুন করে আর কিছুই জানাতে পারছে না।

এ মামলায় তদন্তের নানা পর্যায়ে ২০০ ব্যক্তির সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ব্যবহৃত ছুরি, বঁটি, ছুরির বাট, সাগর-রুনির পরনের কাপড়, যে কাপড় দিয়ে সাগরের হাত-পা বাঁধা হয়েছিল সে কাপড় ও রুনির পরনের টি-শার্ট পাঠানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবরেটরিতে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ডিএনএ নমুনাও সেখানে পাঠানো হয়। এরই মধ্যে ওইসব নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন বাংলাদেশে এলেও আসামি শনাক্তে তা খুব একটা কাজে আসেনি।

রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে নতুন কোনো খবর নেই। আমার মা-ও চলে গেছেন। মা বেঁচে থাকতে মনে হতো মাথার ওপর ছায়া আছে। এখন তা-ও নেই। খুনিদের চেহারা মা দেখে যেতে পারলেন না।’

সাগরের মা সালেহা মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘মরার আগে খুনিদের চেহারা দেখব কি না জানি না। আমি তো এখনো বিচার চাই। আমৃত্যু বিচার চেয়ে যাব।’

কর্মসূচি : সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় ডিআরইউ চত্বরে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ডিআরইউ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। রবিবার সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করবেন সংগঠনটির নেতারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর