বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা

ভাড়া করা অস্ত্র নিয়ে সাতকানিয়ায় লড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভাড়া করা অস্ত্র নিয়ে সাতকানিয়ায় লড়াই

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ইউপি নির্বাচনে দুই পক্ষ অস্ত্র নিয়ে সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছিল -ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় অস্ত্রধারী আট সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা ভাড়া করা অস্ত্রে ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা চালায়। ওই সহিংসতায় দুজন নিহত ও আহত হন অর্ধশতাধিক। পরে অস্ত্র লুকিয়ে আত্মগোপনে চলে যান তারা। এদের কেউ ফুল বিক্রেতা, কেউ গাড়িচালক, কেউ রাজমিস্ত্রি, আবার কেউ জমির দালাল। নিজেদের  পেশার আড়ালে তারা একেকজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত বলে জানিয়েছে র‌্যাব। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- নাসির উদ্দিন, কায়েস, মোরশেদ, কোরবান আলী, ইসমাঈল, জসিম, মিন্টু ও নুরুল আবছার। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। তারা জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্র ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মহানগর, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বান্দরবান সদর ও রাজধানীর তেজকুনিপাড়া থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে তিনটি একনলা বন্দুক, একটি দোনলা বন্দুক, একটি ওয়ান শুটারগান, অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র ও ৪২টি গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে কায়েস, নাসির, মোরশেদ, আবছার ও মিন্টুর বিরুদ্ধে আগেও সাতকানিয়ায় মামলা হয়েছে। তারা নিজেদের দুই প্রার্থীর সমর্থক বলে স্বীকার করেছেন। এ দুই প্রার্থী হলেন নৌকার প্রার্থী মো. আক্তার হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জসিমউদ্দিন। সহিংসতায় নেতৃত্বে ছিলেন মূলত নাসির উদ্দিন ও কায়েস। কায়েস এই অস্ত্র একজনের কাছ থেকে ভাড়ায় এনেছিলেন। সহিংসতায় ব্যবহৃত বিদেশি অস্ত্র ভারত থেকে নিয়ে আসা। ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে র‌্যাব-১৫ এর অভিযানে বান্দরবান সদর থেকে নাসির উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে সাতকানিয়া থেকে মোরশেদ, কোরবান আলী ও ইসমাঈলকে গ্রেফতার করা হয়। রাতেই র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম মহানগর থেকে জসিমকে গ্রেফতার করে। জসিমের দেওয়া তথ্যানুসারে চান্দনাইশ থেকে মিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল ভোরে র‌্যাব-২ রাজধানীর তেজকুনিপাড়া থেকে কায়েস ও তার সহযোগী নুরুল আবছারকে গ্রেফতার করে।  কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, কায়েস চট্টগ্রামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এর বাইরে সাতকানিয়ায় বিভিন্ন সময়ে সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। এলাকায় তার ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল আছে। তিনি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে দলের সদস্যদের সরবরাহ করতেন। নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় তার নেতৃত্বেই জসিম, মোরশেদ, মিন্টু, আবছারসহ আরও শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালান। এর পরই তিনি ঢাকায় চলে এসে আত্মগোপন করেন। র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নাসির নির্বাচনের দিন মেরুল রঙের মাফলার ও মুখে লাল-সবুজ রঙের মাস্ক পরে একটি একনলা বন্দুক হাতে নেমেছিলেন। তিনিও একটি প্রতিষ্ঠানের চট্টগ্রাম বন্দর শাখার কর্মচারী। তিনি ২০১২ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। ফিরে এসে ঢাকার শাহবাগে ফুল বিক্রি করতেন। নির্বাচনের দিন সশস্ত্র একটি দলের নেতৃত্ব দেন। নির্বাচন প- হয়ে গেলে নাসির বান্দরবানের জঙ্গলে আত্মগোপন করেন। আবছার ঢাকায় কাভার্ড ভ্যান সমিতির ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যখনই সাতকানিয়ায় কোনো সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন তিনি ঢাকা থেকে চলে যান। কায়েসের নির্দেশে আবছার সাতকানিয়ার খাগরিয়াতে নির্বাচনের সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব দেন। পরে তিনি ঢাকায় এসে আত্মগোপন করেন। কায়েসের দলের অন্যতম সদস্য মোরশেদ পেশায় একজন সিএনজি চালক। তাকে ঘটনার দিন একটি একনলা বন্দুক হাতে সহিংসতা ও নাশকতা চালাতে দেখা যায়। জসিম খাগরিয়ার বাসিন্দা ও পেশায় রাজমিস্ত্রি হলেও চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সহিংসতায় অংশ নেন। সহিংসতার সময় তাকে মোরশেদের পাশে দেখা যায়। পরে তিনি আত্মগোপন করেন। মিন্টু পেশায় গাড়িচালক। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালিয়ে আসছেন। কায়েসের নির্দেশে মিন্টু অস্ত্র পরিবহন করেন। এ ছাড়া সহিংসতার উদ্দেশ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জন বহিরাগতকে বিভিন্ন পরিবহনে তিনি নিয়ে আসেন। সহিংসতার সময় তার হাতে একটি আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। কোরবান আলী পেশায় একজন নিরাপত্তাকর্মী। তিনি সহিংসতাকারীদের লাঠিসোঁটা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করেন। এ ছাড়া ইসমাঈল পেশায় একজন জমির দালাল। তিনি খাগরিয়া ইউনিয়নে সহিংসতায় লাঠিসোঁটা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ৭ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউপি নির্বাচনে দুজন প্রার্থীর সমর্থকদের গোলাগুলিতে শিশুসহ দুজন মারা যান। দুটি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করে দেয় নির্বাচন কমিশন। কয়েকটি মামলাও হয়। এরপরই র‌্যাব সদর দফতরের নেতৃত্বে র‌্যাব-২, র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১৫ অভিযান পরিচালনা করে।

সর্বশেষ খবর