শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

যাত্রা শুরু বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনার

প্রথম দিনে জয় কিংসের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

যাত্রা শুরু বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনার

বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান গতকাল বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনা হোম ভেন্যুর উদ্বোধন করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘বাংলাদেশের ফুটবলের এই শুভক্ষণে আমি বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।’ বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের এ ঘোষণার পর গ্যালারিতে থাকা আমন্ত্রিত অতিথিরা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। সম্মিলিত করতালিতে চারপাশ কেঁপে ওঠে। কিছুক্ষণ পরই বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখেন আহমেদ আকবর সোবহান। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য নজির গড়ল বসুন্ধরা কিংস। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম ক্লাব হিসেবে নিজস্ব মাঠে খেলল লিগের হোম ম্যাচ। বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে পুলিশ এফসিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয় স্বাগতিকরা।

গতকাল বসুন্ধরা কিংস ও বাংলাদেশ পুলিশ এফসির খেলা দেখতে আসেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন জাতীয় হকি ও ফুটবলে ঢাকা আবাহনীর প্রথম অধিনায়ক কিংবদন্তি আবদুস সাদেক। বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনা উদ্বোধনের পর সংবাদ সম্মেলনে আহমেদ আকবর সোবহান বসুন্ধরা স্পোর্টস  কমপ্লেক্স করার উদ্দেশ্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সবকিছু বেনিফিট চিন্তা করে করা যায় না। আমাদের এই কমপ্লেক্স ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, এটি দেশের সমৃদ্ধি ও মানুষের কল্যাণের জন্য।’ ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স। ৩০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠছে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবল, ভলিবলসহ নানা খেলার আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম। এ ছাড়া সাঁতার, আরচারি, অ্যাথলেটিক্স, গলফসহ নানা খেলার আয়োজন থাকছে স্পোর্টস কমপ্লেক্সে। মেয়েদের আলাদা ফুটবল স্টেডিয়াম থাকছে। গড়ে উঠছে একাডেমি বিল্ডিং। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান জানালেন, এরই মধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে একাডেমির ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। রিয়াল মাদ্রিদসহ বেশকিছু বড় ক্লাবও আগ্রহী। তবে একাডেমির কাজ শেষ না হওয়ায় এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ছে এই স্পোর্টস কমপ্লেক্সের খবর। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। তার আগেই একাডেমি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে বলে জানালেন তিনি। একাডেমিতে ১ হাজার খেলোয়াড় থাকতে পারবেন। তারা এখানে খেলা শিখতে পারবেন। দেশের খেলার উন্নয়নের জন্য স্কুল পর্যায় থেকে ছেলে-মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেন আহমেদ আকবর সোবহান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা ফুটবল, ক্রিকেট সব খেলায় এগিয়ে যাচ্ছে। তারা আমাদের গর্ব।’ মেয়েদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাই থাকছে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে। পারিবারিকভাবেই খেলাধুলা-প্রিয় মানুষ আহমেদ আকবর সোবহান। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যুবদলে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা অল ইন্ডিয়া সাঁতার প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছিলেন। আমার বড় ভাই আবদুস সাদেক ছিলেন জাতীয় হকি দলের অধিনায়ক। জেনেটিক্যালি আমাদের মধ্যে খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা আছে।’ বর্তমানে বসুন্ধরা গ্রুপের নিজস্ব ক্লাব বসুন্ধরা কিংস ছাড়াও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবও পরিচালনা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যান বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান এবং শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি সাফওয়ান সোবহান। তিন ক্লাবের মধ্যে কোনটিকে সমর্থন করেন আহমেদ আকবর সোবহান? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আবাহনীর অনেক সংকট ছিল। সে সময় আমার বড় ভাইয়ের বাসায় আবাহনীর খেলোয়াড়রা আসতেন। সেখানেই মিটিং হতো। তখন থেকেই আমি আবাহনীর সমর্থন করি। তবে খেলার মাঠে আমি সব সময় চাই সেরা দলটাই জিতুক। যারা ভালো খেলবে তারাই জিতবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণা খেলাধুলার জগতে এগিয়ে আসতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানান আহমেদ আকবর সোবহান। তিনি বলেন, ‘খেলাধুলার ব্যাপারে আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি খেলাধুলার মাধ্যমে দেশকে ব্র্যান্ডিং করার কথা বলেন। আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।’ বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কাজ পূর্ণাঙ্গ শেষ হলে এটি বাংলাদেশের জন্য গর্ব করার মতো বিষয় হবে বলে মন্তব্য করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘এ কমপ্লেক্স দেখে সবাই খুব, খুবই খুশি হবেন।’ বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচনা করল গতকাল। ভারতীয় উপমহাদেশে ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম কোনো দল নিজস্ব হোম গ্রাউন্ডে খেলতে নামল। বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনার এই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকলেন ফুটবলার, আমন্ত্রিত অতিথি আর সাংবাদিকরা। বসুন্ধরা কিংস সভাপতি ইমরুল হাসান ঐতিহাসিক এই দিনে বললেন, ‘আমরা আনন্দিত ও অভিভূত। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান স্যারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা না পেলে আমরা এ পর্যায়ে আসতে পারতাম না।’ পুরো কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হলে এশিয়া তথা পুরো বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে বলে মন্তব্য করেন ইমরুল হাসান।

সর্বশেষ খবর