সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

জাতীয় স্লোগান হচ্ছে ‘জয় বাংলা’

২২ ফেব্রুয়ারি থেকে বিধিনিষেধ উঠে গেলেও থাকছে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। শিগগির এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে যাচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এদিকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান বিধিনিষেধ আগামীকাল ২২ ফেব্রুয়ারি উঠে যাচ্ছে। তবে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা থাকছেই। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বৈঠকে ‘ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন-২০২২’ এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন। আর মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

জয় বাংলা স্লোগান প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আজ ক্যাবিনেটে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০২০ সালে হাই কোর্টে একটি রায়ও আছে- ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা ক্যাবিনেটে আলাপের পর সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘জয় বাংলা’কে ক্যাবিনেট থেকে একটি সার্কুলার দিয়ে জাতীয় স্লোগান হিসেবে প্রচার করে দিতে হবে। আমরা অবিলম্বে একটা নোটিফিকেশন করে দেব।’  কোথায় কোথায় ‘জয় বাংলা’ বলতে হবে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তিন-চারটি ক্যাটাগরির কথা জাজমেন্টে আছে। সাংবিধানিক পদধারীরা, রাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী রাষ্ট্রীয় বা সরকারি অনুষ্ঠানের শেষে এটা বলবেন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদরাসাসহ তাদের কোনো সভা- সেমিনার যদি হয়, অ্যাসেম্বলি বা যে কোনো ধরনের সমাবেশ হলে সেখানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে হবে। যদি কোনো অনুষ্ঠান হয়, অ্যাসেম্বলি হয় সরকারি-বেসরকারি যারা থাকবেন জয় বাংলা স্লোগান ব্যবহার করবেন। এটা ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত’ বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

কাল থেকে থাকছে না বিধিনিষেধ : করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধিনিষেধ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘পরশু (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে স্কুল-কলেজ (বিশ্ববিদ্যালয়সহ) খোলা হবে, ১ তারিখ (১ মার্চ) থেকে প্রাইমারি স্কুল খুলবে। এরপর থেকে আর বিধিনিষেধ দেওয়া হবে না। তবে সবাই যাতে অবশ্যই মাস্ক পরে, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’ ২২ ফেব্রুয়ারির পর আর বিধিনিষেধ দেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আর বিধিনিষেধ দেওয়া হবে না। এটা আর বাড়ছে না। তবে যে কোনো অনুষ্ঠানে যাবে, যেখানে যাবে, সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। সবাইকে সেটা নিশ্চিত করার অনুরোধ করা হয়েছে।’

খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কভিডের বিষয়ে সবাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি একটু কমফোর্টের দিকে যাচ্ছে বলে রিল্যাক্স যেন না হই। আজ (গতকাল) মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। সব লেভেলের লোকদের এটা মানতে হবে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ১ কোটি ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রোগ্রাম নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, কারও যদি এনআইডি নাও থাকে, একটা ছোট স্লিপে ঠিকানা নিয়েও যদি যান, তারা টিকা নিয়ে তালিকায় তাদের ঠিকানা দিয়ে যাবেন। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে আরও নতুন একটি ওয়েভ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ওটা কিন্তু ওমিক্রনের মতো অত সহজ হবে বলে ওনারা মনে করেন না। সেজন্য সবারই উচিত বিশেষভাবে পদক্ষেপ নেওয়া। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিন্তা করছে- কীভাবে ১২ বছরের নিচেও দ্রুত টিকা দেওয়া যায়। পৃথিবীর যে সব দেশে দেওয়া হচ্ছে, তাদের কাছে অভিজ্ঞতা ও অ্যানালাইসিসটা নিয়ে ওনারা যেন শুরু করতে পারেন। ক্লাস সিক্সে অনেক বাচ্চার অসুবিধা হচ্ছে। সিক্সে পড়লেও হয়তো ১২ বছর হয়নি। সেক্ষেত্রে একটু অসুবিধা হচ্ছে।

নতুন ধরন ওমিক্রনসহ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১০ জানুয়ারি সারা দেশে বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। যা ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। তখন ১১টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে ২১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্ধেক জনবল নিয়ে সরকারি-বেসরকারি অফিস পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বিধিনিষেধের মেয়াদ ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন : এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ব্যাংকে যে টাকা-পয়সা রাখা হতো, সেটির একটি সেফটি সিকিউরিটি ছিল। কিন্তু বিভিন্ন লিজিং কোম্পানি বা ফিনানশিয়াল প্রতিষ্ঠান যে ডিপোজিট করত, সেখানে যারা ডিপোজিট করত তাদের কোনো সিকিউরিটি ছিল না। সেজন্য ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন’ পরিবর্তন করে ‘ব্যাংক আমানত সুরক্ষা আইন’ করা হচ্ছে। ব্যাংক ছাড়াও যত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, তারা সবাই এই আইনের আওতায় আসবে। ডিপোজিট নিতে হলে ব্যাংকের মতো তাদেরও বাংলাদেশ ব্যাংকে সেফটি হিসেবে টাকা জমা রাখতে হবে। আগে আইন ছিল ব্যাংক খোলার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকে সেফটি হিসেবে ডিপোজিট থাকে। কিন্তু লিজিং কোম্পানিগুলোর ছিল না। যুবক টাইপের যেসব কোম্পানি আছে, যারা টাকা-পয়সা লেনদেন করত, তাদের কোনো সেফটি-সিকিউরিটি ছিল না। এই আইন সংশোধন করা হচ্ছে। যারা যে নামেই ফিনানশিয়াল ট্যানজেকশন করবে তাকে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকে রেজিস্টার্ড হতে হবে এবং তাকে টোটাল পেডআপ ক্যাপিটাল যেটা থাকবে, সেই ক্যাপিটালের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে ডিপোজিট থাকবে। লিজিং কোম্পানি উঠে গেলে গ্রাহকেরা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ওই ডিপোজিট থেকে পাবেন। ব্যাংক ছাড়া অন্য জায়গায় ডিপোজিট করতে সবাই সাবধান থাকবেন। আপনারা যে ডিপোজিট করবেন, কোনো কারণে উঠে গেলে সরকার আপনার জন্য ২ লাখ টাকার দায়িত্ব নিচ্ছে। বাকিটা ওদের কাছ থেকে রিকভার করা গেলে যাবে। কত টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে দেবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, দেশের বেশ কিছু সরকারি হাসপাতালের ব্যয় কমাতে এনজিওদের কাছে দিয়ে দেওয়ার ২০০৭ সালের সিদ্ধান্তটি মন্ত্রিসভা বাতিল করেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, এতে ডাবল ম্যানেজমেন্ট শুরু হয়ে যাবে। সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারিতে স্টাফ কে যাবেন, আর কে কে যাবেন না- চাকরির এই বিষয়গুলো নিয়ে ঝামেলা তৈরি হবে। পাশাপাশি ‘ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং অথরিটি অর্ডিন্যান্স’ বাতিল করেছে মন্ত্রিসভা। ১৯৮৬ সালে ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং অথরিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। এটা সুপ্রিম কোর্ট বাতিলও করে দিয়েছে, কিন্তু ২০২১ সালে আবার আইন করা হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আইনটার নোটিফিকেশন হয়নি, আইনটিও জারি হয়নি এবং পরবর্তী সময়ে আর উপস্থাপিত হয়নি। এই আইন এতদিন ধরে ঝুলেছিল। যেহেতু সামরিক আইনের সময় করা অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করতে হবে, না হয় বাদ দিতে হবে। এখন দেখা যাচ্ছে এটির প্রয়োজন নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর