এতদিন ধরে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বক্তব্য বিবৃতি দেওয়া পশ্চিমা বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর কেউ প্রয়োজনের সময় পাশে নেই। রাশিয়ার হামলায় বিপর্যয়ের মুখে পড়ার সময় একেবারেই অসহায় অবস্থায় রয়েছে ইউক্রেন। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বক্তব্য ও ভাষণে তার দেশের এই অসহায়ত্বের চিত্র ফুটে উঠেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ২৭ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কেউ সাড়া দেননি। তিনি বলেছেন, ক্ষমতাধরেরা কেবল দেখছেন, একা লড়ছি আমরা। গতকাল সকালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আজ সকালে আমরা একা আমাদের দেশকে রক্ষার জন্য লড়াই করছি। গতকালের মতোই বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো দূর থেকে কেবল সবকিছু দেখে যাচ্ছে। রাশিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এর মধ্যেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে এসব নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার কিছু আসে যায় বলে মনে করছেন না জেলেনস্কি। তাই তিনি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘গতকালের নিষেধাজ্ঞায় কি রাশিয়ার ওপর কোনো প্রভাব পড়েছে? আমরা আকাশে যে শব্দ শুনছি ও যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট নয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, আজ ভোর চারটার দিকে এসব হামলা শুরু হয়। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া সেনাবাহিনী ও বেসামরিক দুই পক্ষকেই লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। যদিও এর আগে রাশিয়া বলেছিল তারা বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা চালাবে না। জেলেনস্কি আরও বলেন, আজ সকালে কিয়েভে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ হয়েছে। এর মধ্যে একটি আবাসিক ভবনেও বিস্ফোরণ হয়েছে। যুদ্ধবিরতির জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কি বলেন, সহিংসতা নিরসনে ও হামলা বন্ধের জন্য রাশিয়াকে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেই হবে। সেটা এখন হোক বা পরে। জেলেনস্কি আরও বলেন, যত তাড়াতাড়ি আলোচনা শুরু হবে, রাশিয়ার ক্ষতি তত কম হবে। হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের দেশ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাব। এখন রাশিয়ার এক নম্বর লক্ষ্য হলো কিয়েভে হামলা করা। আমিই এক নম্বর টার্গেট। তবে কিয়েভ ছেড়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই।

জাতির উদ্দেশে ভাষণের আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ভিডিওতে জেলেনস্কিকে বেশ অস্থির ও ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করতে সবাই ভয় পায় বলে এ সময় মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কি বলেন, ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের নিশ্চয়তা দিতে কে প্রস্তুত? সত্যি বলতে, সবাই ভয় পায়। ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে বন্ধু দেশগুলোর সহায়তা পাননি উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা হবে কি না- এ বিষয়ে আজ আমি ইউরোপের ২৭ জন নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাদের সরাসরি জিজ্ঞেস করেছি। সবাই ভীত, কেউ উত্তর দেয়নি। আমি সবাইকে জিজ্ঞেস করেছি, তারা আমাদের সঙ্গে আছে কি না। তারা বলেছে, তারা আমাদের সঙ্গে আছে, কিন্তু আমাদের তাদের জোটে নিতে প্রস্তুত নয়। আসলে বিশ্বনেতাদের কেউ যুদ্ধে ইউক্রেনকে সাহায্য করতে রাজি নয় বলে অভিযোগ করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, বিদেশি নেতাদের সঙ্গে অনেকবার আমার কথা হয়েছে। তাদের অনেক আশার কথা শুনেছি। প্রথমটি হলো, তারা আমাদের সঙ্গে আছে, আমাদের সমর্থন করছে। আমি প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞ যারা আমাদের শুধু কথায় নয়, কাজেও সাহায্য করেছে। কিন্তু আমাদের দেশের আত্মরক্ষার বিষয়টি সামনে আসার পর সবাই আমাদের একা করে দিয়েছে। কে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত? সত্যি কথা বলতে, আমি কাউকে দেখছি না। সবাই ভীত কিন্তু আমরা ভয় পাই না। আমরা কিছুতেই ভয় পাই না বলে মন্তব্য করেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।