রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মাদকসেবী থেকে ধর্ষক

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণে গ্রেফতার ৬, কালো কাপড় বেঁধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

মাদকসেবী থেকে ধর্ষক

গোপালগঞ্জে শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গোপালগঞ্জ সদরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- রাকিব মিয়া ওরফে ইমন, পিয়াস ফকির, প্রদীপ বিশ্বাস, নাহিদ রায়হান, মো. হেলাল ও তূর্য মোহন্ত। শুক্রবার গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা গণধর্ষণের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। তারা প্রথমে ভুক্তভোগী ও তার বন্ধুর নামপরিচয় জিজ্ঞাসা করে। বিভিন্ন ধরনের অশালীন মন্তব্য ও ইভ টিজিং করতে থাকে। প্রতিবাদ করায় ওই শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও তার বন্ধুকে মারধর করে। তারা মূলত গ্রেফতার রাকিবের নেতৃত্বে স্থানীয় অপরাধ চক্রের সদস্য।

এদিকে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের হামলার বিচার চেয়ে চোখে কালো কাপড় বেঁধে গতকাল দুপুরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে মানববন্ধন হয়। এতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের মতো জঘন্যতম ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত দোষীদের শাস্তি এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

 

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি গোপালগঞ্জে বশেমুরবিপ্রবির এক ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ভুক্তভোগীসহ দুই শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদরের নবীনবাগ হেলিপ্যাডের সামনে থেকে হেঁটে মেসে যাওয়ার সময় কয়েক দুর্বৃত্ত নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে ভিকটিমকে জোরপূর্বক স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে।

সারা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের যৌক্তিক আন্দোলনে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮-এর অভিযানে শুক্রবার গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে গ্রেফতার করে। র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন জানান, গ্রেফতাররা মূলত রাকিবের নেতৃত্বে অপরাধ কর্মকান্ড চালায়। তারা সবাই গোপালগঞ্জ ও তার আশপাশের এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তূর্য মোহন্ত ছাড়া অন্যরা প্রায় ৮-১০ বছর ধরে নবীনবাগ এলাকায় বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন, আড্ডা, জুয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত। তারা চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধেও জড়িত। তারা বিভিন্ন সময়ে রাস্তাঘাটে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করত। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গ্রেফতাররা ইজিবাইক দিয়ে নবীনবাগ হেলিপ্যাড সংলগ্ন এলাকায় যাওয়ার পথে ভুক্তভোগীকে তার বন্ধুসহ দেখে ইজিবাইক থামিয়ে নামপরিচয় জিজ্ঞাসা করে। বিভিন্ন ধরনের অশালীন মন্তব্য ও ইভ টিজিং করতে থাকে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাদের সঙ্গে ভিকটিম এবং তার বন্ধুর বাগ্বিতন্ডা হয়। পরে তাদের জোরপূর্বক ঘটনাস্থলের পাশে ঢালু জায়গায় নিয়ে যেতে চাইলে ভুক্তভোগীর বন্ধু বাধা দেওয়ায় গ্রেফতাররা তাকে মারধর করে। ভিকটিমকে স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে গিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে তারা। এদিকে, বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. কামরুজ্জামান বলেন, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করছি। আমরা ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাব। প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এলাকাবাসী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্ব দিবেন। যে ঘটনা ঘটে গেছে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন এই মাটিতে না হয় এরকম একটি দৃষ্টান্তমূলক নজির আপনারা উপস্থাপন করবেন। উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কিউ এম বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত ঘৃণিত ও অমানবিক। এ ধরনের ঘটনা যেন বঙ্গবন্ধুর পুণ্যভূমিতে আর না ঘটে সেজন্য আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন এই ধরনের কাজ করার সাহস ধর্ষকরা না পায় এ জন্যে এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এদিকে, গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, শুধুমাত্র ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারই নয়, অন্য দাবিগুলোও নিশ্চিত করতে হবে। আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া দুপুরে ধর্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের হামলার বিচার চেয়ে এবার চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর