রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সীমান্তে দীর্ঘ অপেক্ষা

পোল্যান্ডে আশ্রয় শতাধিক বাংলাদেশির

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি পার্শ্ববর্তী দেশ পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছে। তবে পোল্যান্ডে ঢুকতে চাওয়া বাংলাদেশিদের সীমান্ত এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কারণ সীমানা পাড়ি দিতে গিয়ে ইউক্রেনিয়ানরা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আর সেখানে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে পোল্যান্ডে যাওয়া মানুষের ঢল ক্রমশ বাড়ছে।

রাশিয়ার হামলার পর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শেখ খালেদ বিন সেলিম পোল্যান্ডে প্রবেশের জন্য প্রায় ৮০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এসেছেন সীমান্তবর্তী শহর লিভভে। সেলিম জানান, লিভভে এখন মানুষ আর মানুষ । প্রচ- ঠান্ডা, নেই কোনো থাকার জায়গা। খাবারের সংকটও দেখা দিয়েছে। সবার চোখে মুখে আতঙ্ক। আসার পর জানতে পেরেছি, এখানেও বিমান হামলার আশঙ্কায় সাইরেন বাজানো হয়েছে। সবাই সীমান্ত পেরিয়ে পোল্যান্ড চলে যেতে চান। তিনি বলেন, পোল্যান্ড সরকার সীমান্ত খুলে দিয়েছে। কিন্তু সেখানে ১৫-২০ কিলোমিটার লম্বা গাড়ির লাইন পড়েছে। ঠান্ডার মধ্যে পথেই থাকতে হচ্ছে। যদি ভাগ্য সহায় হয়, তবে হয়তো ১০-১২ ঘণ্টায় সীমান্ত পেরুতে পারব। স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর পর্যন্ত শতাধিক বাংলাদেশিকে ইউক্রেন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ডে আনা গেছে বলে জানিয়েছেন পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন। তিনি জানান, অনেকে সীমান্ত এলাকায় এসে আবার ফেরত যাচ্ছেন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা। পোলিশ প্রান্তে অবশ্য কোনো সমস্যা নেই। পোলিশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। মোট সাতটি সীমানা পয়েন্ট দিয়ে ইউক্রেন থেকে মানুষ পোল্যান্ডে আসছেন। তবে ইউক্রেন প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও, অনেকে করেননি বলে জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, আমাদের একটি দল এরই মধ্যে সীমান্ত এলাকায় অপেক্ষা করছে। আমরা তাদের থাকা, পরিবহনসহ সব ব্যবস্থাই করছি। তবে অনেকে আত্মীয় বা পরিচিতদের সঙ্গে থাকার জন্য চলে যাচ্ছেন। বিবিসি জানিয়েছে, পোল্যান্ডের সীমান্ত রক্ষা সংস্থা জানাচ্ছে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে পোল্যান্ডে যাওয়া মানুষের ঢল ক্রমশ বাড়ছে। ইতোমধ্যেই এক লাখ ইউক্রেনীয় পোল্যান্ডে ঢুকেছে। ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্ত পারাপারের আটটি চৌকির সবগুলো দিয়ে শরণার্থীদের পায়ে হেঁটে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কারণ সীমান্ত চৌকিগুলোতে গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। এর আগে পায়ে হেঁটে আসা মানুষদের শুধু একটি চৌকি, মেডিইকা দিয়ে পার হওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছিল।

গতকাল দুপুরে রাজশাহীতে একটি অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধকালীন সংকট তৈরির পর আমরা ফেব্রুয়ারির শুরুতেই সতর্কতা জারি করেছি। গত তিন-চার দিন ধরে আমরা কাজ করছি। রোমানিয়া এবং পোল্যান্ড দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রথম ব্যাচে ২২ জন পোল্যান্ড দূতাবাসে এসে পৌঁছেছেন। এ ছাড়া মালটোবা দিয়ে আরও দুজন গেছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, পোল্যান্ডে ১৫ দিনের ভিসা দিয়ে ২২ জনকে ঢুকানো হয়েছে। এরই মধ্যে হয়তো তা আরও বেড়ে গেছে। এ পর্যন্ত তিন শতাধিক বাংলাদেশি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অনিয়মিত যারা আছেন তাদের ট্রাভেল পাস চালু করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোমানিয়া ও পোল্যান্ড দূতাবাস সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, আমরা একটি সতর্কবার্তা জারি করেছি। যারা নিরাপদ জোনে যেতে চাইবেন তাদের জন্য যাত্রা পথ কঠিন হবে। কারণ ট্রাফিক জ্যাম আছে। খাবার এবং এটিএম মেশিনে টাকা সংকট আছে। এ কারণে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে যেতে বলেছি আমরা। বেশ কয়েকজন আটকে থাকা নাগরিক এসব সমস্যায় পড়েছেন।

অন্যদিকে, ইউক্রেনে থাকা বেশ কিছু বাংলাদেশি ইউক্রেন ত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিয়েভে থাকা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী মাহবুব আলম বলছেন, ইউক্রেনে যাই ঘটুক না কেন এখন তিনি শহর ছেড়ে কোথাও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিস্থিতি এখন যা দাঁড়িয়েছে তাতে কোথাও যাওয়াও বড়রকম সমস্যা। মহাসড়কে প্রচ- জট এবং সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। একবারে ২০ লিটারের বেশি তেল দিচ্ছে না। এই শীতের মধ্যে রাস্তায় নেমে তেলের জন্য গাড়ি থেমে গেলে বড় বিপদ হবে। সে কারণে আমি এবং আমার কয়েকজন বাংলাদেশি বন্ধু কোথাও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি জানান, আমি যে ভবনে থাকি তার নিচে বড় একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং লট রয়েছে। সেখানে এখন গাড়ি নেই বললেই চলে। বোঝাই যায় ভবনের বাসিন্দাদের অনেকে চলে গেছেন। এই পার্কিংয়ের জায়গাটিও এখন অস্থায়ী বোমা শেল্টারের রূপ নিয়েছে। অনেক মানুষ অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে বিছানা বালিশ নিয়ে সেখানে রাতে ছিলেন। আমার বন্ধুবান্ধব আছে, আমিও আছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর