রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

আলোচনার স্থান শর্ত নিয়ে মতবিরোধ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

কিয়েভ দখলের জন্য রাশিয়ার হামলা ঠেকাতে ইউক্রেনের প্রতিরোধ যুদ্ধের মধ্যেই দুই দেশ আলোচনায় রাজি হয়েছে। তবে আলোচনার স্থান ও সময় নিয়ে দুই পক্ষ একমত হবে কি না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে চিন্তা। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বেলারুশের মিনস্কে আলোচনার জন্য বলা হয়েছে, অন্যদিকে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পোল্যান্ডের ওয়ারসের কথা। সেই সঙ্গে আলোচনার জন্য শর্ত  নিয়েও রয়েছে দুই দেশের মতভিন্নতা। শেষ পর্যন্ত দুই দেশ আলোচনায় বসে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ইতি টানবে কি না তা নিয়েই এখন আগ্রহ পুরো বিশ্বের। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর খবর অনুসারে, হামলা শুরুর পর থেকেই রাশিয়াকে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পরে রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর পর প্রেসিডেন্ট পুতিন আলোচনার প্রস্তাব দেন। তবে শর্ত দেন তৃতীয় কোনো দেশের। রুশ প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ জানান, ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার জন্য মিনস্কে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে প্রস্তুত পুতিন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে সেটা হবে শর্তসাপেক্ষে। ইউক্রেন যদি অস্ত্র সংবরণ করে, তবে আলোচনার আবহ তৈরি হবে। লাভরভ সাফ বলে দিয়েছেন, ইউক্রেন সেনা যদি পাল্টা প্রতিরোধ না করে, তবেই আলোচনার আবহ তৈরি হবে। এরপর রাশিয়ার বার্তাসংস্থাগুলো ইউক্রেন আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বলে খবর প্রচার করতে থাকে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র মারিয়া জাখারভ দাবি করেছিলেন, কিয়েভ আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আলোচনার ইস্যুটি আজ পর্যন্ত স্থগিত রাখতে চেয়েছে কিয়েভ।

 কিন্তু এর পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি সের্গেই নিকিফোরভ বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন জেলেনস্কি। শান্তি ও যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করতে প্রস্তুত তিনি। ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সের্গেই লিখেছেন, আমরা কথা বলতে অস্বীকার করেছি এমন অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। ইউক্রেন সবসময় শান্তি ও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। এটা আমাদের স্থায়ী অবস্থান। আমরা রুশ প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব মেনে নিয়েছি।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর খবর, এরপরই আলোচনার স্থান নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। জেলেনস্কি চেয়েছিলেন আলোচনাটি পোল্যান্ডের শহর ওয়ারসে অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে, রাশিয়া চেয়েছিল এই আলোচনা হোক বেলারুশের মিনস্কে। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে শর্ত হিসেবে আগাম জানিয়েছে, এই আলোচনা হবে শুধু ইউক্রেনের নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণার বিষয়ে। অন্য বিষয়ে নয়। এরমধ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের একটি আহ্বান তৈরি করেছে আলোচনার বিষয়ে অবিশ্বাস। রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের সঙ্গে এক ভিডিও সভায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে দেশটির ক্ষমতা হাতে তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কাছ থেকে ইউক্রেন সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে বলেছেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘আমি আরও একবার ইউক্রেন সেনাবাহিনীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা কোনো নাৎসি ও কট্টর জাতীয়তাবাদীকে ক্ষমতায় রাখবেন না, যারা আপনাদের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয় স্বজনদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। পুতিনের দাবি, সেনাবাহিনী ক্ষমতা তাদের হাতে নিলেই সংকট সমাধানের সমঝোতায় পৌঁছানো সহজ হবে।

তবে গতকাল রাতে রুশ সংবাদ সংস্থা ‘তাস’ জানিয়েছে, রাশিয়ার আলোচনার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এ খবর সত্যি হলে তা সারা বিশ্বের জন্য একটি বড় স্বস্তি। এদিকে ইসরায়েলে নিয়োজিত ইউক্রেনের দূত ইউজিন করনিচাক আভাস দিয়েছেন, ক্রেমলিনের সঙ্গে কিয়েভের আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে পাওে তেলআবিব। নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, ‘তারা (ইসরায়েল) না বলেনি। তারা বোঝার চেষ্টা করছে যে দাবার বোর্ডে তাদের অবস্থানটা কোথায়। আমরা বিশ্বাস করি, এ বিশ্বে ইসরায়েলই একমাত্র গণতান্ত্রিক দেশ, যার সঙ্গে ইউক্রেন ও রাশিয়া দুই দেশেরই দারুণ সম্পর্ক রয়েছে।’

গত কয়েক দিনে রাশিয়ার একতরফা হামলায় কার্যত ছারখার হয়ে গেছে ইউক্রেন। সেনা এবং সাধারণ মানুষ মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছে শতাধিকের। ইউক্রেনের একটা বড় অংশ কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর