মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

আরও ৭০০ বাংলাদেশি ইউক্রেনে আটকা

বন্দরে আটকে থাকা দুই জাহাজের সহসা ফেরা অনিশ্চিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউক্রেন থেকে প্রায় ৫০০ বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশে গেছেন। আরও ৭০০ বাংলাদেশি আটকা পড়ে আছেন যুদ্ধে থাকা ইউক্রেনে। তবে ইউক্রেনে থাকা ও সীমান্ত ত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়াদের বেশির ভাগই বাংলাদেশে ফিরতে চান না। মাত্র ৫০ জনের মতো বাংলাদেশি ফিরতে চান দেশে। ইচ্ছুকদের দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছে সরকার। অন্যদিকে, যুদ্ধের কারণে আটকে থাকা বাংলাদেশি দুই জাহাজের সহজে ফিরে আসা অনিশ্চিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গতকাল মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশি নাগরিকরা পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও অস্ট্রিয়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন। এ সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তবে ইউক্রেনে এখনো আরও ৭০০ বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন। ইউক্রেনে আটকা পড়াদের দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের সঙ্গে সরকার কাজ করছে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, যারা ইউক্রেনে আটকা পড়েছেন তাদের নিরাপদ অবস্থানে নিতে আইওএম আমাদের সহযোগিতা করবে। ইউক্রেন থেকে অন্যদেশে প্রত্যাবর্তন করা বাংলাদেশিদের দেশে ফেরানোর ক্ষেত্রেও আইমওএম সহযোগিতা করবে। প্রতিমন্ত্রী জানান, ইউক্রেন থেকে তিন দেশে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে বেশির ভাগই দেশে ফিরতে রাজি নয়। এখন পর্যন্ত ৫০ জনের ওপরে দেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে বেশির ভাগই দেশে ফিরতে রাজি না। যারা দেশে ফিরতে চায়, তাদের ফেরাতে একটু সময় লাগবে। জানা যায়, ইউক্রেনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানকার যোগাযোগ রক্ষা করে। ইউক্রেনে ঠিক কত বাংলাদেশির অবস্থান বা বসবাস তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে। তবে ওয়ারশর বাংলাদেশ দূতাবাসের ধারণা, দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি দেশটিতে অবস্থান করছেন।

অন্যদিকে, ইউক্রেনের বন্দর অলভিয়াতে ২৯ জন নাবিক নিয়ে আটকা পড়া বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র নাবিকেরা কতদিনে দেশে ফিরতে পারবেন তা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর যে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তার ফলে জাহাজটি বের হতে পারছে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন জাহাজটি ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচনা চলছে এবং জাহাজটির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই বন্দর থেকে যাত্রা করে এবং তুরস্কের ইরেগলি হয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছায়। জাহাজটি বন্দরে পৌঁছানোর পরদিন ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হয়। জাহাজটি ইউক্রেন থেকে সিরামিক ক্লে নিয়ে ইতালির রেভেনা বন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক পীযূষ দত্ত বলেন, ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটি ২৩ ফেব্রুয়ারি অলভিয়া বন্দর ছেড়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে যুদ্ধাবস্থা শুরু হয়ে যায়, তখন আমরা জাহাজটিকে কোনো পণ্য না নিয়েই বন্দর ছেড়ে চলে আসতে বলি। কিন্তু যেখানে জাহাজটি নোঙ্গর করেছে সেখান থেকে মূল সাগরে আসতে অন্তত ৬০ নটিক্যাল মাইল পথ অতিক্রম করতে হবে এবং স্থানীয় পাইলট বা পথনির্দেশক ছাড়া সেটি করা সম্ভব নয়। কিন্তু যুদ্ধাবস্থার কারণে স্থানীয় পাইলট পাওয়া যায়নি। এই ৬০ নটিক্যাল মাইল পথ পাড়ি দিতে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ নামক জাহাজটির সক্ষমতার একটি জাহাজের অন্তত ৭ ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু এখন একদিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে, অন্যদিকে সাগরে মাইন পাতা রয়েছে বলে সেখানকার বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। নির্বাহী পরিচালক বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় সংকট হয় খাদ্য-পানীয়ের। কিন্তু জাহাজে এই মুহূর্তে ৩০-৪০ দিনের খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির মজুদ আছে। আরেকটি বড় সংকট হচ্ছে কখন কী হয় সে অনিশ্চয়তা।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক বলেন, এই পরিস্থিতির একমাত্র সমাধান হচ্ছে জাহাজটি নিরাপদে ফিরিয়ে আনা। কিন্তু ওখান থেকে বেরিয়ে আসাটা এই মুহূর্তে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি আমরা। এ ছাড়া নাবিকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি আমরা।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আনাম চৌধুরী বলেছেন, নাবিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক ধরনের আয়োজন করা যে, যে সময়ে জাহাজটি মুভ করবে সে সময় কোনো অভিযান চালানো হবে না। এমন একটি যোগাযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা করা গেলে তারা (আটকে পড়া নাবিকেরা) সহি সালামতে ফিরে আসতে পারবেন। এ জন্য উচ্চপর্যায় থেকে যোগাযোগ করা দরকার। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে মোট ২৯ জন বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন, এর মধ্যে দুজন নারী ক্যাডেট রয়েছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর পর্যন্ত মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন নাবিকেরা। এরপর সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। অলভিয়া বন্দরের কাছে এই মুহূর্তে আরও ১৩টি জাহাজ আটকে আছে। অন্যদিকে, শিপিং করপোরেশনে অন্য একটি জাহাজ এম টি বাংলার অগ্রদূত রাশিয়া নাকি ইউক্রেনের বন্দরে আটকা পড়েছে সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

 

সর্বশেষ খবর