বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

জনগণের জীবন উন্নত করাই আমার লক্ষ্য : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে সুন্দর ও উন্নত জীবন প্রদান করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করেছেন সে আদর্শ আমাদের বাস্তবায়ন করতেই হবে। সে লক্ষ্য স্থির করেই পথ চলছি।

গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)-এর সভায় প্রারম্ভিক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের জীবনে আর্থসামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করা, তাদের জীবন উন্নত করা, জীবন যেন সুন্দর হয়, সম্মানজনক হয়, বিশ্বের বুকে বাঙালি যাতে মাথা উঁচু করে চলতে পারে তা-ই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আর এটাই জাতির পিতা সব সময় চাইতেন, বলতেন। সে স্বপ্নটা অধরা থাক তা আমি চাই না। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আওয়ামী লীগ সরকার সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৩ বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ করুণার চোখে দেখে না, সম্মানের চোখে দেখে। আরও সামনে এগিয়ে গিয়ে একদিন আমরা উন্নত দেশে পরিণত হব। এ সময় শেখ হাসিনা স্মরণ করিয়ে বলেন, ‘মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। এ মাসেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছেন। যিনি আমাদের স্বাধীনতার পাশাপাশি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা এনে দিয়েছেন। ৭ মার্চ জাতির পিতা যে ভাষণ দিয়েছেন তা আজ আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। আর ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। সেই অল্প সময়ের মধ্যেই একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে পরিণত করে তিনি আমাদের স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন। সে সময় সংবিধান তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দেওয়া এবং পরিকল্পনা কমিশন গঠন করে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেন জাতির পিতা। অথচ ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও জাতির পিতার খুনিচক্র ক্ষমতায় এসে দেশকে সামনের দিকে না নিয়ে আরও পিছিয়ে দেয়।’

২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) চলতি ২০২২ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন করেছে। এতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। গতকাল এনইসির সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, এনইসি চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশন সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবরা ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এডিপির মূল বরাদ্দ ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ দশমিক ১৪ কোটি টাকা থেকে ১৭ হাজার ৭৭৪ দশমিক ১৪ কোটি টাকা (এডিপির মূল বরাদ্দের ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ) হ্রাস করা হয়েছে। বিদেশি অর্থায়ন থেকেই এ ১৭ হাজার ৭৭৪ দশমিক ২৩ কোটি টাকা কর্তন করা হয়েছে। এর ফলে এখন বিদেশি সূত্র থেকে প্রাপ্ত এ অর্থায়ন দাঁড়াল ৭০ হাজার ২৫০ কোটিতে। আর স্থানীয় সূত্র থেকে এ অর্থায়ন কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনগুলোর বরাদ্দ ৯ হাজার ৬১৩ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা বিবেচনায় আনলে চলতি অর্থবছরে সার্বিক আরএডিপি বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ১৭ হাজার ১৬৩ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে (২০২১) আরএডিপির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, আজকের আরএডিপি বৈঠকে দেশের অর্থনীতির ছয়টি ক্ষেত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যেগুলো গত অর্থবছরে প্রায় ৭ শতাংশ জিডিপি অর্জন করেছিল। কৃষি খাতের খুব ভালো অবদানের কারণেই সরবরাহ চেন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গত বছর মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর এ কারণেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের এমনকি বেশ কিছু উন্নত দেশের তুলনায়ও আমাদের দেশের কভিড-১৯ পরিস্থিতি খুব সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।

সর্বশেষ খবর