নারায়ণগঞ্জ শহরের ডালপট্টির বহুতল ‘মাতৃভবন’-এর ফ্ল্যাটে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। হত্যার শিকার রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রামপ্রসাদ চক্রবর্তী গতকাল দুপুরে বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলা করেন। ওই ফ্ল্যাট থেকে ধারালো ছুরিসহ আটক আল জুবায়েদ স্বপ্নিলকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। পরে স্বপ্নিলকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূর মোহসীনের আদালতে আবেদন করা হলে তিন দিন মঞ্জুর হয়। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বপ্নিল স্বীকার করেছেন অবসাদগ্রস্ত জীবনে টাকা ও সোনার জন্যই তিনি হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে পরিচয় না জেনে দরজা খোলাই কাল হয়েছে মা-মেয়ের। অন্যদিকে মামলার এজাহারে নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রামপ্রসাদ চক্রবর্তী উল্লেখ করেছেন, বাদী মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্সে চাকরি করেন। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় বাড়ির মালিকের ভাগনে জানান যে তাদের (বাদীর) ফ্ল্যাট যে ভবনে তার নিচে অনেক লোক জড়ো হয়েছেন। তিনি গিয়ে দেখেন ফটক বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখা। তার ছেলে হৃদয়ের স্ত্রী শিলা জানান তাদের ফ্ল্যাটে এক যুবক রুমা ও ঋতুকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে। শিলাকে হত্যার জন্য বঁটি হাতে নেন হামলাকারী। তবে শিলা কৌশলে সেই বঁটি ছিনিয়ে নিয়ে বের হয়ে নিচে নামেন। হামলাকারী যুবক শিলাকে ধাওয়া করলে শিলা নিচে নেমে আসেন। ততক্ষণে ভবনের অন্য লোকজন বাইরে থেকে ফটক আটকে দেয়। ওই যুবক ফের ফ্ল্যাটে ফিরে যায়। তিনি (বাদী রামপ্রসাদ) স্ত্রী রুমার মোবাইল ফোনে কল করলে তা রিসিভ করেন জুবায়েদ। ওই সময় জুবায়েদ বাদীর কাছে টাকা-গয়না কোথায় আছে তা জানতে চান। বাদী পরিচয় জানতে চাইলে জুবায়েদ ফোন কেটে দেন। ততক্ষণে পুলিশ উপস্থিত হয়। পুলিশসহ তিনি ফ্ল্যাটে গিয়ে ওই যুবককে আটক করেন। উদ্ধার করেন রক্তাক্ত মা ও মেয়ের মরদেহ। আসামি জুবায়েদ শহরের পাইকপাড়াপুল এলাকার লবণ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে। আলাউদ্দিন পুলিশকে জানান, তার ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। তবে আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় পড়ালেখা চালাতে পারেননি। এক-দেড় মাস ধরে তার ছেলে অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে জুবায়েদকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তিনি স্বীকার করেছেন তাঁর চলার জন্য টাকা দরকার। এ কারণে বড় বাড়িটি টার্গেট করেন। একটি ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ফ্ল্যাটের কেউ দরজা খোলেননি। তখন পাশের রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর ফ্ল্যাটে কলিবেল চাপেন। ফ্ল্যাটের দরজা খুললে রুমা চক্রবর্তীর গলা চেপে ধরেন জুবায়েদ। পরিচয় না জেনে দরজা খোলাই কাল হয়েছে মা-মেয়ের। রুমার গলার মালা ছিনিয়ে নেন জুবায়েদ। এরপর রুমাকে হত্যা করেন। রুমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ঋতু চক্রবর্তী এগিয়ে এলে তাঁকেও ছুরি মেরে হত্যা করেন।’ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, ‘কেউ বাড়ি করলে বাড়ির পাহারায় সিকিউরিটি গার্ড রাখা দরকার। বাড়িতে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে বা বাইরে থেকে কেউ এলে কোন ফ্ল্যাটে আগন্তুক যেতে চান তা ইন্টারকম ফোনের মাধ্যমে সিকিউরিটি গার্ড নিশ্চিত করবেন। এ ছাড়া কোনো বাড়িতে কেউ নক বা বেল টিপলে পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে দরজা খোলাটাও বিপজ্জনক।’