সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে তিন খুন

মধ্যরাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কাপাসিয়া রণক্ষেত্র, আহত ৭, আটক ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা ও গাজীপুর প্রতিনিধি

ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে তিন খুন

গাজীপুরে ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে সংঘর্ষে নিহত তিনজন (বাঁয়ে)। স্বজনদের কান্না -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাজীপুরে এক নারীর ফেসবুকের স্ট্যাটাসে (টিকটক ভিডিও) ব্যঙ্গাত্মক ‘হাঃ হাঃ’ রিঅ্যাক্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এক কিশোরসহ তিনজনের নির্মম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন অন্তত সাতজন। শনিবার মধ্যরাতে জেলার সীমান্তবর্তী কাপাসিয়া উপজেলার সম্মানিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণগাঁও চরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব-পুলিশ আশপাশে বিশেষ নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার যুবককে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। নিহতরা হলেন- গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দক্ষিণগাঁও চরপাড়া এলাকার আলম হোসেনের ছেলে ফারুক হোসেন (২৬), একই গ্রামের মৃত আলম মিয়ার ছেলে নাঈম হোসেন (১৮) ও মৃত হিরণ মিয়ার ছেলে রবিন (১৫)। এদের মধ্যে ফারুক রাজমিস্ত্রি এবং রবিন ও নাঈম কাপড়ের দোকানে চাকরি করতেন। র‌্যাব-১ অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঘটনার পর পরই আমাদের টিম ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় পোশাকে এবং সাদা পোশাকে অবস্থান নেয়। পুলিশের পাশাপাশি আমরা ছায়াতদন্ত অব্যাহত রেখেছি।

পুলিশ-র‌্যাব ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার চর আলীনগর এলাকার জাহিদের স্ত্রী মারিয়ার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ব্যঙ্গাত্মক কমেন্ট করেন একই থানার দক্ষিণগাঁও এলাকার যুবক নাঈম। এ নিয়ে জাহিদের আত্মীয় ইয়াসিনের সঙ্গে মেসেঞ্জারে নাঈমের ঝগড়া হয়। এ ঘটনার জেরে শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীরের (নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার দৌলতপুর এলাকা এবং  গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দক্ষিণগাঁও এলাকা) যুবকদের মধ্যে বিরোধ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। ইয়াসিন নরসিংদী জেলার বাসিন্দা। এ ঘটনার পর শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন কাপাসিয়ার সম্মানিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণগাঁও এলাকার নাঈম, রবিন ও ফারুকসহ কয়েকজন যুবক। তারা বাড়ির কাছাকাছি আলম সরকারের গার্মেন্টসের পাশে মসজিদের কাছে পৌঁছলে জাহিদের নির্দেশে এক দল যুবক তাদের গতিরোধ করে। তারা ফেসবুকে ব্যঙ্গাত্মক কমেন্টের কারণ জানতে চায়। এ নিয়ে উভয় পক্ষে বাগবিতন্ডা হয়। ঘটনার সময় রবিনের বড় ভাই বিষয়টি মীমাংসা করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলে তাদের ওপর পেছন থেকে প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে তারাও পাল্টা হামলা চালায়। মুহূর্তেই তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে ফারুক, নাঈম, রবিনসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। এলাকাবাসী আহতদের উদ্ধার করে মনোহরদী ও কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারুক ও নাঈমকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত রবিনকে ওই হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার সকালে তিনি মারা যান। নিহত নাঈমের মা নাসিমা বলেন, ‘আমার ছেলে ওয়াজে গিয়ে জীবিত অবস্থায় আর বাড়ি ফিরল না। কীভাবে কী হয়েছে আমি কিছু জানি না। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। সে আমার সংসারের আয়-রোজগার করত। তার বাবা নেই। এখন আমাদের কী হবে?’ নিহত ফারুকের বাবা আলম হোসেন বলেন, ‘কিছু লোক আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমি এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম জানান, এ ঘটনায় বেলায়েত (২৩), ফয়সাল (১৭), শেখ সাহেদ (১৬) ও মারুফ (১৬) নামের চার যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাপাসিয়া থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিহত ফারুক হোসেনের বাবা আলম বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় এজাহার জমা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর