সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারি সংলাপ নিয়ে আজ আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনা মহামারির কারণে দুই বছর স্থগিত থাকার পর চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে অংশীদারি সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানে র‌্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইস্যুটিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আর এ বিষয়ে কৌশল নির্ধারণে আজ আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমেদের সভাপতিত্বে এই বৈঠকটি সকাল সাড়ে ১১টায় আনক্লস কনফারেন্স রুমে শুরু হবে।

সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বিপক্ষীয় এই সংলাপ অনুষ্ঠানের বিষয়ে ওয়াশিংটন এরই মধ্যে সম্মতি দিয়েছে। সামনের সপ্তাহে ঢাকায় এবারের সংলাপ অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এই সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ইনপুট চেয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, অংশীদারি সংলাপে এবার আলোচনা হবে দুই দেশের চলমান ইস্যু ছাড়াও সার্বিক বিষয় নিয়ে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ রয়েছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, বাংলাদেশের শ্রম খাতের কর্মস্থলের নিরাপত্তা, কভিড মহামারি মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা এবং বিনিয়োগ পরিবেশ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হবে। র‌্যাব নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা জানান, এটি একটি নতুন বিষয়। আমাদেরও অন্যতম উদ্বেগের বিষয়। এটা হচ্ছে-মানবাধিকার ইস্যুর অন্তর্গত। তাই এই ইস্যুতে বাংলাদেশ যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে- তা তুলে ধরা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, র‌্যাবের কার্যক্রম সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে বার্তা গেছে এবং যেসব ইস্যুতে র‌্যাব ও সংস্থাটির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেটি যে সঠিক নয়- এ বিষয়গুলো সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরা হতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব ইস্যুতে উদ্বেগ রয়েছে, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল, মাদক ও মানব পাচার প্রতিরোধের মতো ইস্যুগুলোতে এই বাহিনীর অভূতপূর্ব সাফল্য রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, একটি দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে একটি সংস্থা ব্যাপক পরিসরে কাজ করতে গেলে প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা হতে পারে। এ ধরনের কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে মামলা এবং সেগুলো সমাধানের সুযোগ রয়েছে। উপরন্তু এই বাহিনীটিকে আরও চৌকশ করে গড়ে তোলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের সুযোগও রয়েছে। এর আগেও মানবাধিকার, মর্যাদা, অপরাধ ও তদন্ত ইত্যাদি ইস্যুতে এই বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ চাইবে মানবাধিকার ইস্যুতে র‌্যাবের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকুক। এ ছাড়াও দুই দেশের এই অংশীদারি সংলাপে আলোচনায় ঠাঁই পেতে পারে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দেওয়া; মানব পাচার ও মাদক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা, ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালু, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় বাধ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সম্ভাব্যতা যাচাই, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সহায়তা, মেরিটাইম সহায়তা, অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সুবিধাগ্রহণ, শান্তিরক্ষা মিশনে সহায়তা, সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতা, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মহড়া এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ের মতো ইস্যুগুলো। আলোচনায় ইস্যু হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট কোয়াড-এ বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়েও। আলোচনায় আসতে পারে জিএসপিসহ বাণিজ্য সুবিধা সংক্রান্ত ইস্যুগুলোও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অনুষ্ঠেয় সংলাপে তারা জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র নতুন জিএসপি স্কিম চালু করতে যাচ্ছে, সে কারণে তারা মনে করছেন পরবর্তিত বাণিজ্য পরিস্থিতিতে নতুন জিএসপি স্কিমে বাংলাদেশকে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। তবে নতুন স্কিম পেতে গেলে বাংলাদেশকে আরও বেশি শর্তের মুখে পড়তে হতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এক্ষেত্রে শ্রম খাতে কমপ্লায়েন্স ছাড়াও মানবাধিকার, মেধাস্বত্বের মতো ইস্যুগুলোতে আরও জোর দেবে মার্কিন প্রশাসন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর