পোল্যান্ডের যেশোফ এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে মেদিকা সীমান্তের দূরত্ব প্রায় দেড় ঘণ্টার। এ সীমান্ত কখনো সংবাদ শিরোনাম হয়নি। তবে এখন এটি বিশ্বের শিরোনাম। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ১৫ লাখের বেশি মানুষ দেশ ছেড়েছেন। তার মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ এসেছেন এই মেদিকা সীমান্ত দিয়ে। এ ছাড়াও অনেক মানুষ রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। রাত ১১টা পর্যন্ত এখানে মানুষের আসা চলছিল! সরেজমিনে মেদিকায় গিয়ে ধারণা পাওয়া গেছে, দেশ ছাড়ার ঘটনা একেক মানুষের একেক রকম। কিন্তু হাহাকার সব মানুষের একই। সে যুদ্ধে হোক, আর জীবিকার জন্যই হোক। সবার দীর্ঘশ্বাস জুড়ে থাকে শৈশব, কৈশর আর জীবনের শিকড় হারানোয়। ঠিক এমনই দীর্ঘশ্বাসে আকাশ-বাতাস ভারী এখন মেদিকায়। যেদিকে তাকানো যায়, সেদিকেই শুধু বেদনার্ত মানুষের মুখ। এক দিন আগেও যারা নিজের খাবার নিজে কিনে খেয়েছেন, তারাই এখন শরণার্থী হয়ে ভিন দেশে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতেও স্বাভাবিক ডিনার শেষ করে সবাই ঘুমুতে গিয়েছিলেন। তবে পরদিন সকালে তাদের ঘুম ভাঙার আগেই বিশ্ববাসী জেনে যান, তাদের দেশে যুদ্ধ লেগে গেছে। এ সম্পর্কে ৩৫ বছর বয়সী যুবক অলেক্সি বলছিলেন, ‘রাতে ঘুমালাম স্বাভাবিকভাবে। সকালে উঠলাম যুদ্ধের দামামা শুনে। সত্যিই অবিশ্বাস্য!’ আরেক ভুক্তভোগী ডারিয়ানা বলছিলেন, ‘কী এক অনিশ্চিত যাত্রা। ৬০০/৭০০ কিলোমিটার হেঁটে পোল্যান্ডে আসা। সেদিন সকালে ঘুম ঘুম চোখে রোমানিয়াতে থাকা ভাইয়ের ফোন রিসিভ করে শুনলাম, দেশে যুদ্ধ লাগার কথা। ঘটনার আকস্মিকতায় বুঝতে পারিনি কী হতে যাচ্ছে! ছোট বাচ্চা দুটো নিয়ে পাগলের মতো একটা কাঁধের ব্যাগ নিয়ে বের হওয়ার সময় মাথায় ছিল সীমান্ত পাড়ি দিতে হবে! তার পর পায়ে হেঁটে, কখনো ট্যাক্সি, কখনো ট্রেন- এ রকম নানা ঝামেলা করে দুই দিনে এসে পৌঁছলাম মেদিকাতে।’ এই মেদিকায় এখন বিভিন্ন চ্যারিটির দেওয়া খাবার আর কাপড় দিয়ে দিন চলছে শরণার্থীদের। সেইসঙ্গে সবাই দিন গুনছেন, কবে শেষ হবে দুঃসহ যুদ্ধ? কবে তারা ফিরবেন নিজ দেশে? মুছে ফেলবেন শরণার্থী জীবনের দুঃসহ অভিজ্ঞতা?