মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

অভিনন্দন প্রতিদিন

তসলিমা নাসরিন

অভিনন্দন প্রতিদিন

বারো বছর আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনের যাত্রা শুরু। আমি প্রায় ন’বছর লিখছি এই পত্রিকায়। এই পত্রিকার প্রকাশক, সম্পাদক, সাংবাদিক, কর্মচারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, পাঠক সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ প্রতিদিন এখন আর আমার কাছে নেহাত কোনও পত্রিকা নয়। এটিই আমার বাংলাদেশ, আমার প্রিয় স্বদেশ। যে স্বদেশে আমার জন্ম, আমার বেড়ে ওঠা, যে স্বদেশে আমার শৈশব, কৈশোর, যৌবন। আমার স্বদেশের সঙ্গে আমার নাড়ির টান। সেই টান আমি অনুভব করি যখন বাংলাদেশ প্রতিদিনে আমার লেখা ছাপা হয়, যখন কোনও পাঠক সে লেখাটি পড়েন। দেশে থাকাকালীন বেশ কিছু পত্রিকায় আমি নিয়মিত কলাম লিখতাম। আমার কলামের বক্তব্য মানুষকে ভাবাতো, রাগাতো, মুগ্ধ করতো, প্রতিবাদী করতো। কেউ ভালোবেসে আমাকে একবার ছুঁয়ে দেখতে চাইতো, কেউ আমার মুণ্ডু কেটে নিতে চাইতো। তাছাড়াও আমাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার একটি ষড়যন্ত্র চলেছিল। অন্যায়ের আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল আমাকে। কিন্তু, দগ্ধ আমাকে ফিনিক্স পাখির মতো বাঁচিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। লেখাই লেখককে বাঁচায়। বিনা দোষে নির্বাসন দণ্ডপ্রাপ্ত বাঙালি এই লেখককে বাঙালি পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিনই। শুধু তাই নয়, নতুন প্রজন্মের নারী-পুরুষ যাদের জন্ম নব্বই দশকে, অথবা তারও পর, যারা আমার নাম শোনেনি, আমার লেখাও পড়েনি কোনও দিন, তাদের কাছে পৌঁছোতে পারছি আমি, বাংলাদেশ প্রতিদিনের কল্যাণেই। আমি বই লিখছি বছর বছর, সে সব বই পৃথিবীর অন্য যে কোনও দেশে প্রকাশিত হলেও বাংলাদেশে হয় না। প্রকাশকরা আমার নাম শুনলেই সরকার আর জিহাদিদের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে। অসৎ লোকেরা জাল বই বের করে শুনেছি ফুটপাতে বিছিয়ে বিক্রি করে। এক সময় যার লেখা বই প্রকাশ করার জন্য প্রকাশকরা বাড়িতে ভিড় করতেন, যার লেখা বই কেনার জন্য পাঠকেরা বইমেলায় ভিড় করতেন, তার লেখা বই আজ ধুলোয় গড়ায়। এ লেখকের দোষ নয়। গোটা সমাজেরই ঘটে গেছে নৈতিক অধঃপতন। বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে ন্যূনতম সভ্য হওয়ারও কেউ আর প্রয়োজন মনে করছে না। বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে আমার এক জীবনের ঋণ। আমি জানি, আমার প্রতিটি বক্তব্যের সঙ্গে এই পত্রিকার সম্পাদক এবং প্রকাশক একমত নন। কিন্তু ভিন্নমত প্রকাশ করার সুযোগ করে দিয়ে তাঁরা সুস্থ এবং সৎ সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। ভিন্নমত প্রচারে যে প্রচার-মাধ্যমগুলো বাধা দেয়, তারা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে সাংবাদিকতার প্রধান শর্তই  লঙ্ঘন করে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত সকলকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক অভিনন্দন, শুভেচ্ছা এবং শ্রদ্ধা। প্রতিদিন বেঁচে থাকুক প্রতিদিন, বেঁচে থাকুক হাজার বছর। মানুষ বেঁচে না থাকলেও আদর্শ বেঁচে থাকে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সততা এবং সাহস, এর আদর্শ, এর দর্শন দেশের ভীতু-ভীরু প্রচারমাধ্যমকে উৎসাহিত করুক, প্রভাবিত করুক। সমাজ বদলে যাক। সভ্য হোক।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর