মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা
যুদ্ধের ময়দান থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিন

সাত বছরের শিশুর প্রশ্ন কবে ফিরব বাড়ি

আ স ম মাসুম, ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে

সাত বছরের শিশুর প্রশ্ন কবে ফিরব বাড়ি

যে কোনো যুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ মানুষ। তবে পূর্ণ বয়স্ক একজন মানুষের মনে যুদ্ধ যে ছাপ ফেলে-তার চেয়ে শতগুণ ভয়ংকর ছাপ ফেলে শিশু মনে। সে অবস্থার শিকার সাত বছরের মেয়েশিশু ওলেনা। ওর গলায় ঝুলানো একটি কুকুরের মুখায়ব দিয়ে ডিজাইন করা ব্যাগ। স্যুপ নেওয়ার জন্য যখন সে লাইনে দাঁড়ানো, তখন কথাচ্ছলে সহজ সরল প্রশ্ন ছিল, ‘কবে ফিরব নিজের বাড়িতে?’

এই শিশু বয়সে দেশ ও বাস্তুহারা ওলেনা দোভাষীর সহায়তায় এই প্রতিবেদককে যখন এমন প্রশ্ন করে- তখন নির্বাক হওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।

ওলেনার মতো লাখো শিশু মেদিকা শরণার্থী শিবিরে ঠাণ্ডা আর বরফের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। অথচ এরা বোঝে না খুব বড়দের অস্ত্রের রাজনীতি, বোঝে না অর্থনীতি। তেলের দাম বাড়ল না কমল- সেসবেও মাথাব্যথা নেই ওদের। ওলেনাদের কাছে জীবন মানেই জন্মভিটা, নিজের আঙিনা। ওদের কাছে হিসাব-নিকাশ শুধু ফেলে আসা পুতুলের সংসার। হাজারো শিশু এখন শরণার্থী শিবিরে খাবারের জন্য লাইনে। তিন সপ্তাহ আগে যে খাবার খাওয়ানোর জন্য মায়ের ঘাম ছুটে যেত, সেই খাবারের মূল্য ওদের মতো ছোট্ট মন এখন বুঝে গেছে। বুঝে গেছে খাবারও অনিশ্চিত- এই দখলদারিত্বের পৃথিবীতে। পৃথিবীতে জোর যার মুল্লুক তার- সেই বাস্তবতারই মুখোমুখি আজ ওরা। ব্রিটেনের রাজপুত্র উইলিয়াম ও রাজবধূ কেট উইলিয়াম সম্প্রতি মিডিয়াতে বলেছেন, তাদের ছয় বছরের ছেলে প্রশ্ন করেছে- ‘কেন এই যুদ্ধের সূত্রপাত?’ তাদের কাছে এ প্রশ্নের কোনো উত্তর ছিল না। এক ইউক্রেনীয় মা, তার বৃদ্ধ মাকে ছেড়ে আসতে পারবেন না- তাই নিজের ১১ বছরের শিশুসন্তানের হাতের উল্টো পাশে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন ভাগ্যের কাছে। ৭০০ মাইল হেঁটে সেই শিশু এসেছে সীমান্ত পেরিয়ে। এ রকম হাজারো মানবিক-অমানবিক গল্পের ঠিকানা এখন ইউক্রেন- পোল্যান্ডের মেদিকা সীমান্ত।

সর্বশেষ খবর