বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা
যুদ্ধের ময়দান থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিন

ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপে

আ স ম মাসুম, ইউক্রেন সীমান্ত থেকে

বাংলাদেশি দুই যুবক ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়েছেন। এরা ইউক্রেনে অবৈধভাবে ছিলেন দীর্ঘ চার বছর। যুদ্ধের সুযোগে ইউক্রেন থেকে তারা ঢুকে পড়েছেন স্বপ্নের ইউরোপে। ছড়িয়ে পড়েছেন বিভিন্ন দেশে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজনই বললেন, ২০১৮ সালে রাশিয়া ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল খেলা দেখার উদ্দেশে রাশিয়ায় ঢুকে ২০০০ ইউরো চুক্তিতে ঢুকে পড়েন ইউক্রেনে। উদ্দেশ্য ছিল সুযোগ বুঝে ইউরোপে ঢুকবেন।

দুই যুবক বলছিলেন, ইউক্রেন থেকে  ইউরোপে ঢুকতে হলে ৫ হাজার ইউরো বা প্রায় ৫ লাখ টাকা লাগে। সেই টাকার জোগাড় হয়নি তাই ইউক্রেনেই অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। যুদ্ধের কারণে কোনো টাকা ছাড়াই তারা ঢুকে পড়েছেন ইউরোপে! বর্তমানে আছেন ফ্রান্সে। যুদ্ধ লাগার পর এক দিনের মধ্যে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের পোল্যান্ডে ঢুকতে দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক আলোচনা সফল হয়। বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে যারাই এসেছেন তাদের পোল্যান্ডে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতাবাস দিনরাত পরিশ্রম করে মেদিকা বর্ডারে প্রায় ৭০০ বাংলাদেশিকে গ্রহণ করে। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারসোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভাড়া করা হোস্টেলে আশ্রয় নেন। পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসাইন ১৩ মার্চ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছিলেন, আগামীকাল ছয়জন বাংলাদেশে যাবেন। বাকিরা নিজেদের মতো করে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় চলে গেছেন। তবে এরা কোথায় গেছে সে সম্পর্কে তিনি জানেন না বলে জানান। ৭০০-এর মতো বাংলাদেশি পোল্যান্ডে ঢুকলেও ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন। মেদিকা সীমান্ত থেকেই অনেকে বিভিন্ন দেশের রিফিউজিদের বহন করা বাসে করে বিনা খরচে চলে গেছেন। জার্মানিতে যাওয়া এক যুবক বললেন, মেদিকাতে তিনি ঢোকেন ২ মার্চ। ঢুকেই তিনি জার্মান সরকারের বাস পেয়ে সেটিতে উঠে চলে আসেন জার্মানিতে। যুদ্ধের শুরুতে অনিশ্চিত যাত্রা হলেও এখন তিনি নিশ্চিন্ত! ৫ লাখ টাকার কাজ বিনা মূল্যে হয়ে যাওয়ায় তিনি অনেক খুশি। পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসাইন বলছিলেন, ‘এখনো এক-দুজন করে বাংলাদেশি বর্ডার ক্রস করছেন। দূতাবাসের কোনো সহায়তা প্রয়োজন হলে সেটি আমরা দিচ্ছি।’ পোল্যান্ডের একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বলছিলেন, বাংলাদেশ সরকার যেভাবে কূটনৈতিক সফলতা দেখিয়েছে, দূতাবাস যেভাবে দিনরাত পরিশ্রম করেছে সেখানে, এভাবে সুযোগ নিয়ে ইউরোপে ঢুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সবকিছুকে ম্লান করে দিয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর