বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশেষ কার্ডের আওতায় ১ কোটি মানুষ : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশেষ কার্ডের আওতায় ১ কোটি মানুষ : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে ১ কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। গতকাল গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরুর আগে সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাসস।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১ কোটি মানুষকে টার্গেট করেছি। আমরা তাদের বিশেষ কার্ড দেব যাতে তারা ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে। ইতোমধ্যেই কভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন ৩৮ লাখ লোক আর্থিক সহায়তা পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের সঙ্গে আরও অনেককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং শেষ পর্যন্ত মোট ১ কোটি মানুষ এই কার্ড পাবে। তিনি উল্লেখ করেন ইতোমধ্যেই ৫০ লাখ লোককে কার্ড দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ১০ টাকায় চাল কিনতে পারে। ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে  প্রধানমন্ত্রী বলেন, তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের কথা বলেছি। মজুদ তেলের কোথাও ‘হোল্ডিং’ হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারপ্রধান বলেন, ভোজ্য তেলের ভ্যাট কমিয়ে দেওয়া বা একটু সমন্বয় করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি, যাতে রমজান মাসে কোনো সমস্যা না হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হলে তখন আর খুব বেশি করার কিছু থাকে না। তখন একটু ‘কমপ্রোমাইজ’ করতেই হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে (রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ) পরিবহন ব্যয় অর্থাৎ কার্গো ভাড়া খুব বেড়ে গেছে। কারণ, সয়াবিন তেল আমাদের ব্রাজিল থেকে এবং পামওয়েল মালয়েশিয়া থেকে আসে। ভোজ্য তেলের বিষয়ে দেশ এখন শতকরা ৯০ ভাগ আমদানিনির্ভর উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা শর্ষের কয়েকটি বীজ আবিষ্কার করেছেন, যার ভালো উৎপাদন হবে। আগামী কয়েক বছরে পিঁয়াজ আর বাইরে থেকে আনতে হবে না। আমরাই রপ্তানি করতে পারব। এ ব্যাপারেও বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা জিনিস যেন আমরা নিজেরা উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারি সেরকম একটা অবস্থানে আমাদের যেতে হবে। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে যেন থাকতে না হয় সে জন্য আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। সরকারের কাছে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ?আলহামদুলিল্লাহ, এখনো ১৮ লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে আমাদের। সেখানে কোনো অসুবিধা নেই। ফসল উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি এ সময় বলেন, ??কারও এতটুকু জমি যেন অনাবাদি না থাকে, যে যা পারেন সেটাই উৎপাদন করবেন। প্রত্যেকটা এলাকাতেই কিছু না কিছু উৎপাদন হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য। তাতে আমাদের যে খাদ্য চাহিদা সেটা যেন পূরণ করতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি আহূত সংলাপে যোগদান করায় ১৪ দলীয় নেতৃবৃন্দ ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বিএনপির অংশ না নেওয়ার কঠোর সমালোচনা করে তাদের ‘নেতৃত্বের শূণ্যতা’ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একজন এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত, আরেকজন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক। কাজেই তারা ক্ষমতায় গেলে তাদের নেতৃত্ব দেবে কে? তাদের সামনে কোনো নেতৃত্ব না থাকলেও উল্টা-পাল্টা বক্তব্য তারা দিয়ে যাচ্ছেন। আর তাঁর করে দেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন সংস্কারে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণ এবং বর্তমানে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, এগুলো করাতে মানুষের ভোটের অধিকারটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি সরকারের করে যাওয়া ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।

জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় তুলে আনায় তাঁর সরকারের সাফল্য উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ যা রয়েছে সেগুলো মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা যেমন চলছে, তেমনি তাঁর সরকারের প্রতিষ্ঠিত দেশের ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগ আনায় সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এ সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী অল্প কয়েক দিনের মধ্যে পায়রাতে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করা হচ্ছে এবং দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হয়েছে বলেও জানান। যেখানে গ্রিড লাইন নেই বা নির্মাণ সম্ভব নয়, এ রকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোলার প্যানেল এবং সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে সন্ধীপ এবং ভোলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। এ সময় এ দেশের মানুষ হতদরিদ্র থাকবে, এটা হতে পারে না। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া, লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে বসে বিদেশি মুদ্রা আয়ের পথ সৃষ্টি, ফ্রিল্যান্সারদের জন্য স্বীকৃতির ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচি সম্প্রসারণসহ তাঁর সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে সুন্দর জীবন দেওয়ার জন্য যা যা করার দরকার তাই আমরা করে যাচ্ছি। ’৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো জনগণের কল্যাণ চিন্তা না করলেও আমরা চাই তা করতে এবং জনগণের জীবনমানের উত্তরণ ঘটাতে, যা জাতির পিতারও স্বপ্ন ছিল।

শাহজালাল বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কাজ ত্বরান্বিত করার তাগিদ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কাজ ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তিনি অন্যান্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কাজের অগ্রগতি (প্রথম পর্যায়) (১ম সংশোধিত)  উপস্থাপনা প্রত্যক্ষ করে এ নির্দেশনা দেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কাজের মোট অগ্রগতি ৩২ শতাংশ এবং ২০২৩ সালের নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার আশা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই কাজগুলো এগিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। সরকারপ্রধান বাংলাদেশ বিমানের আয় বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন তিনি।

এসময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর