বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

কিছু বাম দলের ইমান শেষ

শামীম আহমেদ

কিছু বাম দলের ইমান শেষ

মোহাম্মদ শাহ আলম

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ৫ ভাগ মানুষ ভালো আছে, ৯৫ ভাগই কষ্টে আছে। সরকার টিসিবির ট্রাকের মাধ্যমে কম দামে পণ্য বিক্রি করে মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করছে। সিন্ডিকেট রেখে টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রিতে সমস্যার সমাধান হবে না। এটা মূলত আইওয়াশ। এ জন্য আমরা বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে আন্দোলনে নেমেছি। ২৮ মার্চ সারা দেশে অর্ধদিবস হরতাল কর্মসূচি  দিয়েছি। শুধু তাই নয়, আগামী নির্বাচনে আমরা সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা চিন্তা করছি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। সিপিবির সভাপতি হওয়ায় দলের জন্য কোন কাজগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে করতে চান এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্রে দুই বারের বেশি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকার বিধান নেই। সেই বিধান অনুযায়ী নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। আমি সভাপতি হলেও সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মকান্ড পরিচালনা করব। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিশেষ উদ্যোগ তো থাকবে। আমার মূল লক্ষ্য দুটি। প্রথমত, সারা দেশের শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের সামাজিক মুক্তির লড়াই, দ্বিতীয়ত নির্বাসিত গণতন্ত্র উদ্ধার করার লড়াই অব্যাহতভাবে চালানো। মিছিল-মিটিং ছাড়া সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে এই বাম নেতা বলেন, মিটিং-মিছিল-হরতাল আন্দোলন সংগ্রামের একটা অংশ। ক্ষমতায় যাওয়া তো সব রাজনৈতিক দলেরই মূল লক্ষ্য। সেই পরিকল্পনা তো অবশ্যই আছে। ক্ষমতায় না গেলে তো আদর্শ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ক্ষমতায় যেতে আন্দোলন, সংগ্রাম, গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, এর পরে নির্বাচন। এটা তো পাকিস্তান আমলে দেখেছি। ওই লাইনেই আমরা এগোবো। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে আবার আমরা বাম গণতান্ত্রিক জোট করেছি। সেই অনুযায়ী গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা জোট থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছি ১৩৪টি আসনে। মার্কা যার যার, তার তার ছিল। বার বার বিভিন্ন দলের ওপর নির্ভরশীলতা থাকার কারণে আসন সমন্বয় করতে গিয়ে সব আসনে প্রার্থী দিতে পারিনি। সামনে সিপিবি ও জোট মিলে সব আসনে প্রার্থী দেব। জোট হচ্ছে, জোট ভাঙছে। বাম দলগুলোও ভেঙে যাচ্ছে। দুয়েকটি আসনের জন্য বাম দলগুলো কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে, কখনো বিএনপির সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। এটা বাম রাজনীতির মূলনীতির সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ বা এই রাজনৈতির ভবিষ্যৎ কী- এমন প্রশ্নে শাহ আলম বলেন, বাম জোটে ভাঙাগড়া ছিল। ১৯৯৪ সালে বাম গণতান্ত্রিক জোট হয়েছিল। সেটা ২০০৪ সালে এসে ভেঙে যায়। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর সিপিবি-বাসদের ইউনিটি হয়েছিল। ২০১৮ সালে আমরা আবার জোট করে ঐক্যবদ্ধ আছি। তবে যেসব সমাজতান্ত্রিক দল স্বার্থের জন্য ভিন্ন ধারার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করে তাদের আমি আর বাম বলি না। তথাকথিত সুবিধাবাদী দল। তাদের ইমান শেষ। তারা সমাজতন্ত্র আর বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না। এই দলগুলোর নেতৃত্ব নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। এই দলগুলোর ক্লাসরুট হলো পেটিবুর্জোয়া ক্লাসরুট। তাদের মধ্যে পরশ্রীকাতরতা, সবজান্তা ভাব, দম্ভ ও লোভ বিদ্যমান। যতক্ষণ পর্যন্ত বাম শক্তি একটা সমাজকে হেলিয়ে দেওয়ার মতো শক্তি অর্জন না করবে, ততক্ষণ এই সুবিধাবাদীর জায়গাটা থাকবে। স্বার্থ ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এই দলগুলো ভাঙছে। আমরা সিপিবি সেই জায়গা থেকে মুক্ত আছি।

গণমানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করেও মানুষের মনে জায়গা করতে পারছেন না কেন এমন প্রশ্নে সিপিবি সভাপতি বলেন, মানুষের মনে বার বার আমরা জায়গা করেছি। মানুষও সাড়া দিয়েছে। কিছু ভুল পদক্ষেপের কারণে মানুষ আবার পিছিয়ে গেছে। আবারও মানুষ সংগ্রামে এসেছে। ব্যক্তি স্বার্থে অনেকে আওয়ামী-বিএনপির ব্যানারে গেছে। নানা রকম অপপ্রচার, তথ্যের বিকৃতি ঠেলে বাম দলগুলোকে এগোতে হবে। এখন ৫ ভাগ ও ৯৫ ভাগের লড়াই চলছে। আমরা লেগে থাকলে ৯৫ ভাগের অংশ একসময় ঠিকই আসবে। কারণ এই বড় অংশটি শোষিত। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির নামে সরকার যা করছে তা আইওয়াশ। কিছু দরিদ্র মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে এসব পণ্য কিনছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি টিসিবির লাইনেই দাঁড়াচ্ছে না। এটা তো সমাধান নয়। পাকিস্তান বা ব্রিটিশ আমলে যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু ছিল সেটা হলে এই বাজার নৈরাজ্য থেকে মানুষ মুক্তি পেত। মুক্তবাজারের নামে সিন্ডিকেশন হচ্ছে। সিন্ডিকেশনে জিম্মি মানুষ। সবার আগে এই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তা না হলে ৯৫ ভাগ মানুষের মুক্তি নেই। আজ শ্রেণি স্বার্থের কারণে তেলের দাম যেভাবে বেড়ে গেল, রাতারাতি হাজার কোটি টাকা কামিয়ে ফেলল কিছু মানুষ। এখানে আওয়ামী লীগের লোকও আছে, বিএনপির লোকও আছে। খাতুনগঞ্জে গেলেই সেটা বোঝা যাবে। এরা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মানুষের কাছে সরকারের দায়বদ্ধতা থাকলে এভাবে হরিলুট হতো না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর