মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

দৃষ্টি আজ তুরস্কে, ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত

প্রতিদিন ডেস্ক

দৃষ্টি আজ তুরস্কে, ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত

চলমান রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভেঙে যাওয়া আলোচনা বৈঠক আবারও শুরু করার জন্য রাশিয়ার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘নিরপেক্ষ ভূমিকায়’ রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন এবং ন্যাটোসহ পশ্চিমা শক্তির প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এদিকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জেলেনস্কির সর্বশেষ প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, আজ থেকে তুরস্কের ইস্তামবুল শহরে ফের উভয়পক্ষে আলোচনা বৈঠক শুরু হওয়ার কথা। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা, সিএনএন।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, একদিকে রুশ বাহিনীর হামলায় নিজের দেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া, আরেক দিকে পশ্চিমা দেশের কাছে প্রত্যাশিত সামরিক সহায়তা না পাওয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির

জেলেনস্কি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রত্যাশিত দাবি মেনে নিতে সম্মত হয়েছে। গতকাল একদল সাংবাদিকের সঙ্গে দেড় ঘণ্টাব্যাপী ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে আবারও আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে জেলেনস্কি জানান, তিনি নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে রাজি আছেন। পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসের মর্যাদা নিয়ে আপস করতেও প্রস্তুত। প্রসঙ্গত, রাশিয়ার দাবি ছিল- ইউক্রেন সামরিক জোট প্রশ্নে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবে এবং পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেবে না। কিন্তু জেলেনস্কি সেই দাবি নাকচ করায় রাশিয়া দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে। এ অভিযানের একপর্যায়ে জেলেনস্কি ‘ন্যাটো জোটে যোগ দেবে না’ বলে অঙ্গীকার করেন এবং সে অনুযায়ী ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনায় বসে। কিন্তু এর কোনো ইতিবাচক ফলাফল আসেনি। রাশিয়া অভিযোগ করে, ইউক্রেন মুখে ‘ন্যাটোতে যোগ দেবে না’ বললেও বাস্তবে ন্যাটো এবং পশ্চিমাদের কথায় চলছে। তারা বারবার কথার বরখেলাপ করছে। এ কারণে আলোচনা সফলতার দ্বারপ্রান্তে এসেও ভেস্তে গেছে। এদিকে এরকম অবস্থায়ই এখন জেলেনস্কি ‘নিরপেক্ষ’ থাকার কথা জানালেন। বিষয়টিকে রাশিয়া কীভাবে দেখছে- তা পরিষ্কার নয়। ভিডিও কনফারেন্সে জেলেনস্কি জানান, রাষ্ট্র হিসেবে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণের বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত ইউক্রেন। তিনি বলেন, শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করতে ইউক্রেন প্রস্তুত। জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেন, মস্কোর হামলায় ইউক্রেনে রুশভাষী অধ্যুষিত কয়েকটি শহরও ধ্বংস হয়ে গেছে। একপর্যায়ে তিনি পশ্চিমাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রুশ অভিযানের প্রথম দিন থেকেই আমেরিকা, ব্রিটেনসহ গোটা পশ্চিমী দুনিয়ার কাছে সাহায্য চেয়ে আসছি। কিন্তু তারা কিছু অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া তেমন সহযোগিতা দেয়নি। এটা পশ্চিমের দেশগুলোর সাহসের অভাব।’ জেলেনস্কি উল্লেখ করেন, ‘আকাশপথে পুতিনের সেনাকে রুখতে ফাইটার জেট বিমান চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা দেওয়া নিয়ে চলছে নানা টালবাহানা। বারবার ভিডিও বার্তায় সাহায্যের আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু টালবাহানা করছে আমেরিকাসহ গোটা পশ্চিমী দুনিয়া।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘মারিউপোলের রক্ষাকারীদের সঙ্গে আজ কথা বলেছি আমি। তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে। এদের সাহসের ১ শতাংশও যদি পশ্চিমাদের থাকত- তাহলে যুদ্ধ পরিস্থিতি অন্যদিকে যেতে পারত। তারা ট্যাংক এবং জেট প্লেন হস্তান্তর কীভাবে হবে- তা নিয়েই ৩১ দিন ধরে ভেবে চলেছে।’

এদিকে ইউক্রেনের সংসদ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘রুশ হামলায় ইউক্রেনের ৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে রাশিয়ার জব্দকৃত অর্থ থেকে এই ক্ষতি পূরণ করা হোক।’

এ ছাড়া স্থানীয় সময় শনিবার গভীর রাতে এক আবেগপ্রবণ ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেছেন, ‘ইউরোপে (ইউক্রেনের) স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে পারে যেসব ভারী অস্ত্র- সেগুলোর মজুদে কেবল ধুলোই জমছে। রাশিয়ার যুদ্ধবিমানকে মেশিনগান দিয়ে গুলি করে ভূপাতিত করা সম্ভব নয়। এ সময় ন্যাটো কী করছে? এটা কি রাশিয়া চালাচ্ছে? তারা কিসের জন্য অপেক্ষা করছে? রুশ হামলার ৩১ দিন হয়ে গেছে। ন্যাটোর কাছে যে অস্ত্রভান্ডার রয়েছে, আমরা তার মাত্র ১ শতাংশ চাইছি, এর বেশি তো নয়।’ এ ছাড়াও গতকাল জেলেনেস্কির আরেকটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকোনমিস্টে। তাতেও তিনি পশ্চিমাদের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ব্যাপারে ক্রোধ এবং অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘ফ্রান্স কেন ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দিচ্ছে না? তারা (ফ্রান্স) রাশিয়াকে ভয় পায়? এটাই আসলে সত্যি। যারা প্রথমে বড় বড় কথা বলে তারাই ভয় পায়। অথচ প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁই একমাত্র ইউরোপীয় নেতা- যিনি ইউক্রেন সংকট শুরুর পর থেকে নিয়মিত প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।’

যুদ্ধের খবর : রুশ বাহিনী নতুন করে আর কোনো শহর দখল না করলেও গতকাল বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এদিকে এক মূল্যায়নে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়া কার্যকরভাবে কৃষ্ণ সাগর উপকূলে নৌ-অবরোধের মাধ্যমে ইউক্রেনকে আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। অন্যদিকে যুদ্ধের প্রথম পর্ব শেষ করার ঘোষণা দিয়ে দনবাসে মনোযোগ দেওয়ার কথা বললেও, রাশিয়া এখনো ইউক্রেনের বিভিন্ন বড় শহরে হামলা অব্যাহত রেখেছে।

আজ থেকে ফের বৈঠক : ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রস্তাবে সারা দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তুরস্কের ইস্তামবুল শহরে পরবর্তী আলোচনায় সম্মত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বাইডেনের সফরের সময় রকেট হামলা : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন পোল্যান্ড সফর করছিলেন তখন দফায় দফায় সীমান্তবর্তী ইউক্রেন শহর লাভিভে রকেট হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। খবরে বলা হয়, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল হামলার নতুন লক্ষ্যস্থল বলে সম্প্রতি জানিয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু স্থানীয় সময় গত শনিবার ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। অথচ এতদিন ইউক্রেনের অন্য শহরগুলোর তুলনায় লাভিভে ভারী বোমাবর্ষণ হয়নি। এ কারণে যুদ্ধ থেকে বাঁচতে অনেকে এ শহরে আশ্রয় নিয়েছিল। লাভিভের মেয়র আন্দ্রিয়ে সাদোভি বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন পোল্যান্ড সফর করছেন, তখনই লাভিভকে হামলার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। রাশিয়া আসলে এই রকেট হামলার মধ্য দিয়ে পোল্যান্ড সফররত (মার্কিন) প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ‘হ্যালো’ বলতে চেয়েছেন।” উল্লেখ্য, পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে লাভিভের দূরত্ব মাত্র ৭০ কিলোমিটার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর