মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

বাম জোটের হরতালে পুলিশের লাঠিচার্জ রাজধানীতে যানজট

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাম জোটের হরতালে পুলিশের লাঠিচার্জ রাজধানীতে যানজট

রাজধানীতে বাম জোটের হরতালে পুলিশের লাঠিচার্জ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা অর্ধদিবস হরতালে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে রাজধানীর মতিঝিল, মালিবাগ, পল্টন, রামপুরা, বনানী ও উত্তরায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। গতকাল রাজধানীর পল্টন মোড়ে বেলা সাড়ে ১১টায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত ও নয়জন আটক হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাম জোটের নেতা-কর্মীরা। এর প্রতিবাদে আজ সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় নিজেদের অন্তত চার সদস্য আহত হওয়ার দাবি করেছে পুলিশ কর্মকর্তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পল্টন মোড়ে অবস্থান নিয়ে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় জোটের নেতারা রাস্তার একপাশে জড়ো হয়ে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। এতে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে পুলিশ লাঠিপেটা করে। পাশাপাশি হরতাল সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জের পাশাপাশি জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন হরতালকারীরা। সংঘর্ষের একপর্যায়ে জোটের নেতা-কর্মীরা পল্টন মোড়ের দৈনিক পূর্বাঞ্চলের অফিসের সামনে অবস্থান নেন। অপরদিকে পুলিশ তার উল্টোদিকে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে জোটের নেতা-কর্মীরা প্রায় মিনিট আটেক সময় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে নেতা-কর্মীরা পল্টন মোড় ছাড়েন। বাম জোটের নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী সাংবাদিকদের বলেন, আজকে সারা দেশে আমরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করেছি। হরতালের শেষ পর্যায়ে যখন আমাদের সমন্বয়ক কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। তখন আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করা হলো। আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। সাইফুল ইসলামসহ বাম জোটের অনেক নেতাই পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, গতকাল ভোর ৬টায় মিরপুরে নয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মোহাম্মদপুরে বাম জোটের হরতালে হামলা চালানো হয়েছে। সারা দেশে অন্তত ২০ থেকে ২৫টি জেলায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতা-কর্মীরা বাম জোটের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ বিষয়ে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, শুরু থেকেই আমাদের পক্ষ থেকে এ রকম কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। শেষের দিকে ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেরা যানবাহনে আঘাত করতে আসে। তাদের সরিয়ে দিতে গেলে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ইট-পাটকেল ছোড়ে। পরে তাদের সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ করা হয়। ওটা আসলে লাঠিচার্জও বলা যায় না, ধাওয়া দেওয়া হয়। একসময় জলকামান আর তিন রাউন্ড টিয়ারশেল ব্যবহার করা হয়েছে। হরতালকারীদের ইট-পাটকেলে তিন-চারজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বিনা উসকানিতে শান্তিপূর্ণ হরতালে পুলিশ টিয়ারশেল, লাঠিচার্জ ও গরম পানি ছোড়ায় আমাদের অন্তত ২০-২৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া সারা দেশে গ্রেফতার, বিনা উসকানিতে হামলা ও হরতাল পালনে বাধা দেওয়ায় আজ সারা দেশে বিক্ষোভ করা হবে। বিকাল ৪টায় পল্টনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হবে। এর আগে সকাল ৬টা থেকে পল্টন মোড়ে অবস্থান নেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা। হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করেন সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা-কর্মীরা। পরে তারা পল্টন মোড়ে অবস্থান নেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে হেঁটে ও রিকশায় গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন অফিসগামী মানুষ। পরবর্তীতে পুলিশ এসে ব্যারিকেড তুলে নেয়। এদিকে সকাল ৬টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন বাম ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা রাস্তার ওপর কাঠ, ব্যানার পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। সাড়ে ১০টার পর অবরোধ ছেড়ে মিছিল নিয়ে পল্টনের উদ্দেশে রওনা হন। মিছিলে ‘৮০ টাকা কেজি চাল, দেশটা নাকি ডিজিটাল’, ‘সিন্ডিকেটের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’- এমন নানা স্লোগান দেওয়া হয়। জানা গেছে, রাজধানীর পল্টন, শাহবাগ ছাড়াও মতিঝিল ও মিরপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে হরতাল পালন করেন বাম জোটের নেতা-কর্মীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর