বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

ঢাকা মাতালেন এ আর রহমান

মেজবাহ্-উল-হক

ঢাকা মাতালেন এ আর রহমান

সুরের মূর্ছনায় ঢাকা মাতালেন ভারতীয় সুরসম্রাট ও অস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক এ আর রহমান। ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যেখানে ক্রিকেটযুদ্ধে নেমে পড়েন খেলোয়াড়রা, সেই মাঠে গতকাল উঠল সুরের ঝংকার। একের পর এক ‘মোকাবেলা সুবহানাল্লাহ... ও ও ও লায়লা’, ‘রং দে বাসন্তী...’ ‘পিয়া পিয়া... জিয় জিয়...’, ‘দম মাস্ত কালান্দার...’, ‘কুন ফায়াকুন...’, ‘খাজা মেরে খাজা...’, ‘তেরে বিনা বেসোয়াদি...’ বিখ্যাত সব গান গেয়ে মাত করেন ভারতীয় সংগীত জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি। সুফি গায়ক সংগীতপিপাসুদের মোহাচ্ছন্ন করেন অসাধারণ সুরে ‘জয় বাংলা, জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ, আজও শুনি বজ্রধ্বনি’ গানটি পরিবেশন করে। গানটি শুরুর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন রহমান। বাংলাদেশের প্রতিও প্রকাশ করেন অকুণ্ঠ ভালোবাসা। গান পরিবেশনার সময় গোটা স্টেডিয়ামে পিনপতন নীরবতা নেমে এসেছিল। এরপর বাংলা ও হিন্দি মেশানো ‘আমার সোনার বাংলা, জয় বাংলা, জয় বাংলা’ গানটি পুরো কনসার্টের আবেদন অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপভোগ করেন এ আর রহমানের জগদ্বিখ্যাত গানগুলো। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তাঁর স্ত্রী আফরোজা বেগম এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর ও তাঁর স্ত্রী সাবরিনা সোবহানও উপস্থিত থেকে কনসার্ট উপভোগ করেন। মাঠে ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ বোর্ড পরিচালকরাও। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কনসার্ট করতে আসা এ আর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর অন্য কন্যা শেখ রেহানাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু একজন মহান মানুষই নন, তিনি ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে এসে আমার খুব ভালো লাগছে যে এমন একজন মানুষের জন্মশতবার্ষিকীতে আমি প্রোগ্রাম করছি। বাংলাদেশে এসে আমি মুগ্ধ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আয়োজন করে এ ‘ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব ১০০’। মনোমুগ্ধকর জমকালো এ অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক দেশের শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। গতকাল অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে। দুই পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানে দুবার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। প্রথম পর্বে গান পরিবেশন করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘মাইলস’ ও ‘ফোকসম্রাজ্ঞী’ মমতাজ। শুরুতে মাইলসের পরিবেশনায় ছিল ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি, নও পাহাড়ি ঝরনা’, ‘নীলা তুমি কি জান না আমার হৃদয়ের ঠিকানা’, ‘ফিরিয়ে দাও, আমার এ প্রেম তুমি ফিরিয়ে দাও’, ‘ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে, দুঃখের নদী বইয়া চলে...’ । স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে বাংলাদেশের ফোকসম্রাজ্ঞী মমতাজ গাইলেন ‘জয় মুজিবুর, জয় স্বাধীনতা, বাংলাদেশের জয়! আমরা হারিনি...’। দ্বিতীয় গানটি ছিল বিরহের ‘আমাকে পোড়াইতে তোমার এত আয়োজন’। মমতাজের বিখ্যাত সেই গান ‘আমার ঘুম ভাঙায়া গেল গো মরার কোকিলে’ তো ছিলই। ‘নান্টু ঘটকের কথা শুইনা, অল্প বয়সে করলাম বিয়া... পোলা তো নয় সে যে আগুনেরই গোলা’ গানের তালে তালে স্টেডিয়ামভর্তি দর্শককে নাচিয়ে ছেড়েছেন। এ ছাড়া ‘বন্ধু তুই লোকাল বাস’ গান গেয়ে মঞ্চ মাত করেন মমতাজ। দ্বিতীয় পর্বের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন অস্কারজয়ী সুরসম্রাট এ আর রহমান। ভারতীয় সংগীত জাদুকর গতকাল স্টেজে ওঠেন রাত ৯টা ৪০ মিনিটে। তাঁর প্রথম গানটি ছিল ‘জয় হো’! এরপর একের পর এক নিজের জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করে স্টেডিয়ামভর্তি সংগীতপিপাসুদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন। এ আর রহমানের গানের ফাঁকে ফাঁকে তাঁর সহশিল্পীরা পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সব গান। বিখ্যাত ড্রামার শিবাজি মঞ্চে উঠে পুরো স্টেডিয়াম মাতিয়ে তোলেন। পানির জার থেকে শুরু করে শিবাজির বিচিত্র সব অনুষঙ্গের ব্যবহার দর্শক-শ্রোতারা তুমুলভাবে উপভোগ করেন। এ ছাড়া ‘লুকাচুপি বহত হুয়ি’ গানটিতে প্রয়াত লতা মঙ্গেশকরের রেকর্ডেড অংশের সঙ্গে লাইভে কণ্ঠ মেলান এ আর রাহমান। এতেও তৈরি হয় অন্যরকম আবহ। এর আগে বাংলাদেশের শিল্পীদের সংগীত পরিবেশন শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় ধুম বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় কনসার্ট। টানা এক ঘণ্টা বৃষ্টির কারণে স্টেডিয়ামে পানি জমে যায়। অনুষ্ঠান হবে কি না তা নিয়েও তৈরি হয়েছিল শঙ্কা। তবে বৃষ্টিতে ভিজেও প্রিয় শিল্পীর গান শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন দর্শকরা। সব জল্পনা কল্পনা কাটিয়ে আড়াই ঘণ্টা দেরিতে মঞ্চে ওঠেন এ আর রহমান। পুরো অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর