বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

চীন থেকে সতর্ক থাকতে বলল যুক্তরাষ্ট্র

বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো করার আহ্বান

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও বেশি বিনিয়োগ চাওয়ার পর প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশটি বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ আরও ভালো করার তাগিদ দিয়েছে। একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট তুলে ধরে চায়নিজ সহায়তার বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছে দেশটি।

সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের মধ্যে অংশীদারি সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। ২০ মার্চ ঢাকায় এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় যেখানে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। ওই সংলাপের একটি কার্যবিবরণী সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অংশীদারি সংলাপে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শক্তিশালীকরণ ইস্যুতে আলোচনার সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র যেসব শর্ত দিয়ে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছিল সেসব শর্ত পূরণ করা হয়েছে জানিয়ে দেশটিকে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়েও অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ। আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়েও অনুরোধ জানানো হয়। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি বিজনেস কাউন্সিল গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে উল্লেখ করে আলোচনায় বাংলাদেশ সাইড আশা করে- এই কাউন্সিল গঠনের পর আরও বেশি মার্কিন কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আসবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশে যে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে এবং এসব অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগে অবারিত সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এই বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়।

সংলাপে এই ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানির আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে। তবে এ দেশের সরকারকে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। এই ইস্যুতে আন্ডার সেক্রেটারি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য নিয়ে সতর্ক করে বলেন, শ্রীলঙ্কা এখন চায়নিজ ঋণের ফাঁদে পড়েছে। দেশটি অবিবেচনাপ্রসূত চীন থেকে ঋণ নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দ্বিপক্ষীয় এই সংলাপে বাংলাদেশে ‘ডিজিটাল সিক্যুরিটি অ্যাক্ট’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে এই আইনটির প্রয়োগের বিষয়ে একটি যৌথ পর্যালোচনার বিষয়ে মার্কিন সরকারের আগ্রহের বিষয়টিও বাংলাদেশকে জানিয়ে দেওয়া হয়। জবাবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আলোচিত আইনটি প্রণীত হয়েছে মূলত একটি নিরাপদ ডিজিটাল মাধ্যম নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমে করা অপরাধ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে যে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়, তা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থেই এই আইনটি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়। সংখ্যালঘু- প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা উল্লেখ রয়েছে এবং সরকার সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর বাইরে বিভিন্ন সময় ধর্মীয় ইস্যুতে যেসব সহিংস ঘটনা ঘটেছে, সরকার সেগুলোর বিষয়ে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়।

সংলাপে আলোচিত র‌্যাব নিষেধাজ্ঞা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতেও দুই পক্ষের মধ্যে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, র‌্যাব ও এর কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি যে ন্যায্যতা ও বিবেচনাপ্রসূত নয়, বাংলাদেশ মূলত সেটিই তুলে ধরে। র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমন ও জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধে এই বাহিনীটির অবদান তুলে ধরা হয়। ২০১৬ সালে গুলশানের হোলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি আক্রমণ প্রতিরোধেও র‌্যাব যে সাহসী ভূমিকা রেখেছিল সেটি অবহিত করা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। এ ছাড়া মানুষের নিরাপত্তায় র‌্যাবের সদস্যরা যে জীবনপণ বাজি রেখে লড়াই করেন এবং বিভিন্ন অপারেশনে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রায় ২ হাজার সদস্য আহত এবং এ পর্যন্ত ২৮ জন র‌্যাব সদস্য তাদের জীবন দিয়েছেন সে বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। সংলাপে আরও জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও মানবাধিকারের প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এসব করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও কিছু ভুল হয়, যার বাইরে নয় র‌্যাব। এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনাটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। এ সময় র‌্যাব ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি দুটি প্রশ্ন তুলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, র‌্যাব প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাখ্যা তুলে ধরার সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দুটি প্রশ্ন করা হয়। দেশটির আন্ডার সেক্রেটারি জানতে চান- র‌্যাবের যেসব সদস্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত- বাংলাদেশ সেসব মামলার তদন্ত কীভাবে করছে? অপর প্রশ্নটি ছিল- র‌্যাব-কে প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়াটি কী?

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর