শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

টিপু-প্রীতি হত্যায় ব্যবহৃত হয় ইতালির পিয়েট্রো বেরেটা

সাখাওয়াত কাওসার

টিপু-প্রীতি হত্যায় ব্যবহৃত হয় ইতালির পিয়েট্রো বেরেটা

রাজধানীর শাহজাহানপুরে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। মাত্র ৪ সেকেন্ডে শুটারের নিখুঁত ফিনিশিংয়ের দৃশ্য অনেকে শুধু বিদেশি ফিল্মেই দেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন। তবে ব্যবহৃত অস্ত্রটি কোন মডেলের তা নিয়ে অনেকরই আগ্রহ তৈরি হয়েছে। অস্ত্রের ব্যালাস্টিক প্রতিবেদন না আসার কারণে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা কোনো মন্তব্য করছেন না। তবে একাধিক সূত্রের দাবি অনুযায়ী মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত হয়েছে ‘পয়েন্ট ৩২/৭ পয়েন্ট ৬৫ এমএম ক্যালিবারের ‘পিয়েট্রো বেরেটা’ মডেলের পিস্তল। এর ধারণক্ষমতা ১২ রাউন্ড। এ ঘটনায় ব্যারেলে থাকা ১২ রাউন্ডের পুরোটাই ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে জোড়া খুনের ঘটনায় সাত দিনের রিমান্ডে থাকা মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশের দ্বিতীয় দিন শেষ হয়েছে। তবে তার কাছ থেকে আদায় করা তথ্যের বাইরে নতুন কোনো তথ্য আদায় করতে পারেননি তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে গ্রেফতারের পর তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের কাছে আকাশ দাবি করেছিলেন, তিনি টার্গেটের দিকে একবার ট্রিগার টেনে ধরেছিলেন। পুরো পিস্তল খালি হওয়ার পরই তিনি নিরাপদে ডিভাইডার টপকে স্থান ত্যাগ করেছেন। ওই বক্তব্যেই তিনি গতকাল পর্যন্ত অটল ছিলেন। গ্রেফতার আকাশের এ বক্তব্য অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের অনেককেই ভাবিয়ে তুলছে।

গতকাল রাতেও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার রিফাত রহমান শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তদন্তে এখন পর্যন্ত আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ব্যালাস্টিক প্রতিবেদনও আমরা হাতে পাইনি। অগ্রগতি হলে আমরা গণমাধ্যমকে অবহিত করব। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আকাশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলোই আমরা যাচাই-বাছাই করছি।’

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক সদস্য, যারা দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। অস্ত্র বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তাদের খ্যাতি রয়েছে তাদের সংস্থায়। তারা বলছেন, পিস্তল সাধারণত এসএমজির মতো অটোমেটিক হয় না। তবে নিখুঁত কনফিগারেশনের হতে পারে। ট্রিগার ফেঁসে যাবে না, অর্থাৎ বেইমানি করবে না। তবে কিলারের কথা যদি সত্য হয়, সেটা অনেক উদ্বেগের। বিভিন্ন সময় বড় মাফিয়ারা কাস্টমাইজড অস্ত্র তৈরি করিয়ে আনে তাদের বিশেষ কাজের জন্য। তদন্ত সংস্থার উচিত হবে অস্ত্রের অদ্যোপান্ত ব্যবহার করা।

জানা গেছে, ইতালির তৈরি পিয়েট্রো বেরেটা মডেল ‘৮১ এফএস’ ক্যালিবারের ‘পয়েন্ট ৩২/৭ পয়েন্ট ৬৫ এমএম’ বোরের পিস্তলটির দুই বছর ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ডে বিশেষ চাহিদা তৈরি হয়েছে। মূলত নিখুঁত ফিনিশিংয়ের জন্য আট লাখ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে এ পিস্তলটি। অনেকে বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এটি সংগ্রহ করছেন। আবার অনেকে আগাম অর্ডার দিয়ে সীমান্ত এলাকার অস্ত্র ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সংগ্রহ করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কতটা দক্ষ হলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে কিলিং মিশন শেষ করতে পারে একজন কিলার? নিহত টিপুর বুকে সাতটি গুলির চিহ্ন। সিআইডির ক্রাইম সিন এরই মধ্যে ১২টি গুলির খোসার সন্ধান পেয়েছে।

বাংলাদেশে বৈধ আর অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, বেশির ভাগ অস্ত্রই টু পয়েন্ট টু ক্যালিভারের। দুই বছর আগে বৈধ মার্কেটে ‘উজি’ অস্ত্র বিক্রির তথ্য পেয়েছিল ডিবি পুলিশ। অনেকগুলো উজি অস্ত্রও উদ্ধার করেছিল কিছুদিন আগে। ‘সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু’ ক্যালিভার পিস্তলও অবৈধ পথে আন্ডারওয়ার্ল্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মুহূর্তেই খালি করে দিতে পারে পিস্তলের পুরো ম্যাগাজিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর