বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর উপহার

তৃতীয় ধাপে ৬৫ হাজার ৪৭৪ পরিবার পাচ্ছে বাড়ি

রফিকুল ইসলাম রনি

তৃতীয় ধাপে ৬৫ হাজার ৪৭৪ পরিবার পাচ্ছে বাড়ি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক কর্মসূচি আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। মুজিব শতবর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না- প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ১ লাখ 

১৭ হাজার ৩২৯টি বাড়ি দেওয়া হয়েছে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের। এতে ২ শতক জমির মালিকানাসহ তাদের সেমিপাকা ঘর করে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে রান্নাঘর ও টয়লেট ছিল। আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন ও শাকসবজি চাষেরও জায়গা ছিল। তৃতীয় ধাপে ৬৫ হাজার ৪৭৪ পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি। ঈদুল ফিতরের পর আনুষ্ঠানিক এসব বাড়ি হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের তুলনায় তৃতীয় ধাপে কাঠামোতে আসছে বেশ পরিবর্তন। বাড়ানো হয়েছে ব্যয়। এ কারণে ঘরগুলো হবে মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প সূত্র জানান, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য সারা দেশে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা সরকারের খাসজমি উদ্ধার করা হচ্ছে। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে ভূমিহীনদের স্থায়ী নিবাস। একই সঙ্গে পরিত্যক্ত খাসজমিতে করা হচ্ছে আশ্রয় প্রকল্পের ঘর।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের জন্য সারা দেশে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা ৫৫১২.০৪৭৩ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। সরকারি এসব জায়গা বিভিন্ন সময় প্রভাবশালীরা দখল করেছিলেন। সেগুলো দখলমুক্ত করে ভূমিহীনদের জন্য স্থায়ী নিবাস করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারের খাসজমি চিহ্নিত করা হয়েছে ৩৩৪১.৩০৩৪ একর। এ ছাড়া বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তির সহায়তা নিয়ে জায়গা কিনে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা হচ্ছে- দেশে কোনো গৃহহীন থাকবে না। সেই নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ধাপে ধাপে কাজ করছি। ইতোমধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি বাড়ি প্রধানমন্ত্রী হস্তান্তর করেছেন। আরও ৬৫ হাজার ৪৭৪টি বাড়ি নির্মাণাধীন। আমরা এবার বাজেট বাড়িয়ে দিয়ে এগুলো করছি, যাতে বাড়িগুলো মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।’

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১ লাখ ৮২ হাজার ৮০৩ পরিবার বাড়ি পাবে। এতে ৩ হাজার ৯৭১ কোটি ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন তৃতীয় ধাপের কাজ চলছে। এতে বাড়ি পাবে ৬৫ হাজার ৪৭৪ পরিবার। চরাঞ্চলের জন্য করা হয়েছে ভূমিকম্প-সহনীয় বিশেষ ডিজাইন। তৃতীয় ধাপে চরে ১ হাজার ৪২টি বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে আশ্রয়ণের বিষয়টিকে আমরা বলছি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল। চলতি অর্থবছর এ কার্যক্রমের আওতায় আসবে ১ লাখ ৮২ হাজার ৮০৩ পরিবার। এতে ৩ হাজার ৯৭১ কোটি ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ও একমাত্র প্রকল্প, যাতে একসঙ্গে এত পরিবারের জীবনমান উন্নয়ন করা হয়েছে। ভিটেমাটির পাশাপাশি হচ্ছে কর্মসংস্থান। সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে চলে আসছে পিছিয়ে পড়া বড় এই জনগোষ্ঠী। সরেজমিন দেখা গেছে শিমুলিয়া ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী গ্রামের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের বাড়ি প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকি আছে ভূমিহীনদের কাছে বাড়ি বুঝিয়ে দেওয়ার কাজ। আর তৃতীয় ধাপের কাজও প্রায় শেষের দিকে। তৃতীয় ধাপের বাড়ি নির্মাণরত রাজমিস্ত্রি নকুল কুমার জানান, বর্তমানে যে কাজ হচ্ছে এটি আগের চেয়ে অনেক উন্নত। বিম, লিনটেল, রড, আরসিসি ঢালাইসহ বালু আর সিমেন্টের মিশ্রণ রয়েছে পরিমাণমতো। আগে সিমেন্টের পরিমাণ ছিল কম। এখন তা বাড়িয়ে বালু ও সিমেন্টের পরিমাণ করা হয়েছে ১/৪। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সাভারে মোট ৮ একর জমি আমরা উদ্ধার করেছি। এর মধ্যে শিমুলিয়া ইউনিয়নে ১ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। এ জমি বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার মালিকানাধীন একটি সিরামিক কারখানার দখলে ছিল। এ জায়গা দখলমুক্ত করতে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় সব বাধা অতিক্রম করা হয়েছে।’ তৃতীয় ধাপে বাড়িপ্রতি বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। অবকাঠামো নির্মাণেও এসেছে পরিবর্তন। আগে ইটের ভিত ও কলাম ছিল। শুধু জানালা ও দরজায় লিনটেল ছিল। এবার আরসিসি ঢালাইয়ের ওপর গ্রেট বিম ও কলাম দেওয়া হয়েছে। পুরো ঘরে লিনটেল দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর