বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্লগার অনন্ত হত্যায় চারজনের মৃত্যুদন্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলায় চারজনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন একজন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত চার আসামির মধ্যে তিনজন পলাতক। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

গতকাল সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলে, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার খর্ব ও মুক্তচর্চার লেখালেখি চিরতরে স্তব্ধ করতেই অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীলতা চর্চাকারীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল খুনিদের মূল উদ্দেশ্য। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), একই উপজেলার খালপাড় তালবাড়ীর ফয়সাল আহমদ (২৭) ও ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বীরেন্দ্রনগরের (বাগলী) হারুন অর রশিদ (২৫)। মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন নগরীর রিকাবীবাজার এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার দন্ডিত আসামি। ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পিপি মুমিনুর রহমান টিটু জানান, রায় ঘোষণার সময় আবুল খায়ের রশীদ আহমদ ও সাফিউর রহমান ফারাবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি পলাতক। ফারাবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আবদুল আহাদ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, তার মোয়াক্কেল আবুল খায়ের রশীদ আহমদের বিরুদ্ধে মামলায় কোনো প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। এরপরও আবুল খায়েরকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন বিচারক। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী। এদিকে রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করেন, অনন্ত বিজয় বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রগতিশীল চিন্তার লেখক ছিলেন। তিনি ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতেন। তার স্বাধীন মত প্রকাশের মৌলিক অধিকারকে প্রতিহত করতে এবং লেখনীকে চিরতরে স্তব্ধ করতেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের নৃশংসতা ও বীভৎসতা দিয়ে অন্যান্য প্রগতিশীল, বিজ্ঞানমনস্ক লেখকদের মধ্যে ভীতি ও শঙ্কা ছড়ানোই ছিল খুনিদের মূল উদ্দেশ্য।

আদালত বলে, অনন্ত বিজয় দাশের এই হত্যাকান্ড বহির্বিশ্বে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে অনুজ্জ্বল করেছে। ফলে আসামিরা আদালতের কোনো অনুকম্পা পাওয়ার হকদার নয়। বরং আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে অন্যান্য সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও উগ্রবাদী মতাদর্শের লোকজন এ ধরনের হত্যাকান্ডে উৎসাহিত হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১২ মে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে নগরীর সুবিদবাজারের নুরানি আবাসিক এলাকার বাসার অনতিদূরে অনন্ত বিজয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই রতেœশ্বর দাশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। ২০১৭ সালের ৯ মে সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। এদের মধ্যে দুজন কারাগারে ও তিনজন পলাতক। অপর আসামি মান্নান ইয়াহইয়া ওরফে মান্নান রাহী গ্রেফতার হলেও কারান্তরীণ অবস্থায় মারা যান। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২৩ মে অভিযোগ গঠনের পর ২০২০ সালে বিচারার্থে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জন ও আসামিপক্ষে তিনজন সাফাই সাক্ষ্য দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর