শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন লক্ষ্যে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন লক্ষ্যে

পিটার হাস

বাংলাদেশে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ভিন্ন হলেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য দুই দেশের রূপকল্প অভিন্ন। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন হয় সেগুলো নিয়েই আমরা অগ্রসর হই, একসঙ্গে কাজ করতে পারি এবং করি। গতকাল ঢাকায় ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জনগণ ও সরকার তাদের সব নাগরিকের সমৃদ্ধির জন্য আরও বেশি   সুযোগ চায়। তারা তাদের দেশের মধ্যে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ও বিশ্বব্যাপী আরও সংযোগ গড়ে তোলার সুযোগ চায়। তারা মহামারি ও বৈশ্বিক উষ্ণতার মতো সংকট মোকাবিলায় আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকতে আগ্রহী। তারা শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রত্যাশী। সমগ্র ইন্দো-প্যাসিফিকের জনগণও চায় গণতন্ত্র এবং তাদের মানবাধিকারকে সম্মান করা হোক। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্বপ্ন দেখে যা হবে অবাধ ও উন্মুক্ত; আন্তসংযুক্ত; সমৃদ্ধিশালী; নিরাপদ ও ঝুঁকি-সহিষ্ণু। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গঠনের বিষয়টিকে এগিয়ে নেবে। এর অর্থ এমন একটি অঞ্চল যেখানে স্বচ্ছভাবে সমস্যার সমাধান করা হবে। নিয়মনীতি প্রণীত এবং প্রয়োগ করা হবে ন্যায়সংগতভাবে। প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব পথ ও নিজস্ব অংশীদার বেছে নিতে সক্ষম হবে এবং যেখানে প্রতিটি দেশের জনগণকে স্বাধীনভাবে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, এ নীতি-আদর্শগুলো সুরক্ষার লক্ষ্য কোনো দেশকে দাবিয়ে রাখা নয়। বরং সব দেশের জন্য তাদের নিজ নিজ পথ বেছে নেওয়ার অধিকার সুরক্ষা করা, যা হবে জবরদস্তি ও ভয়ভীতিমুক্ত। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। কারণ বাংলাদেশ তাদের স্থল ও সমুদ্র সীমান্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে বঙ্গোপসাগরকে বিশ্বের কাছে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত করে তুলেছে। পিটার হাস বলেন, অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল হবে এমন একটি এলাকা যেখানে মালামাল, ধারণা ও মানুষ অবাধে স্থল, সাইবার পরিসর ও উন্মুক্ত সমুদ্রে চলাচল করবে। এ অঞ্চলের সমুদ্র ও আকাশপথ যাতে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিচালিত ও ব্যবহৃত হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ ও অন্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করব। অত্যাবশ্যক ও বিকাশমান প্রযুক্তি, ইন্টারনেট ও সাইবার পরিসর বিষয়ে গোপনীয়তা ও মানবিক মর্যাদা সুরক্ষার জন্য যৌথ উদ্যোগগুলোকেও আমরা এগিয়ে নিতে সচেষ্ট হব। আমরা অব্যাহতভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে শক্তিশালী সংযোগ গড়ে তুলব। যৌথ সমস্যা মোকাবিলায় আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ জনগোষ্ঠী হিসেবে কাজ করতে হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি একসঙ্গে যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারি গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের বন্ধন শুধু আমাদের দুই দেশের সরকারকেই সংযুক্ত করে না বরং আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যেও সেতুবন্ধ তৈরি করে। আমরা শিক্ষা ও বিনিময় কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করছি। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস যুক্তরাষ্ট্র। রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ পরিবেশ গড়ে তুলতে এবং আমাদের সব নাগরিকের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগে সহায়তা দিতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা জোরদার করব। বিভিন্ন ধরনের হুমকি বাড়ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা আবশ্যক। সহিংস চরমপন্থা থেকে শুরু করে অবৈধ মাছ শিকার ও মানব পাচারের মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড় নিরাপত্তা সহযোগিতা স্থাপনের প্রচেষ্টা নেব। এসব চ্যালেঞ্জ ও আরও বহু বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারি স্থাপন করতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল কোনো সামরিক জোট নয়। এর উদ্দেশ্যও তা নয়। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল যুক্তরাষ্ট্রপন্থি অঞ্চল বা চীনপন্থি অঞ্চলের মধ্যকার প্রতিযোগিতাও নয়। প্রকৃতপক্ষে আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে স্বতন্ত্র অঞ্চল হিসেবেই দেখি। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি কোনো দেশকে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কোনোটিকে বেছে নেওয়ানোর উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়নি। কৌশলটির অন্যতম মূলনীতি হলো প্রতিটি দেশই চাপ বা জবরদস্তি ছাড়াই নিজস্ব পথ বেছে নিতে সক্ষম হবে। সংক্ষেপে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি এমন একটি অঞ্চল তৈরির এক ইতিবাচক ও সম্মিলিত রূপকল্প যার আওতায় সমস্ত দেশ তথা বাংলাদেশ, চীন, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও এ অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতিটি জেলাই উন্নতি লাভ করতে পারবে। তাই এ যৌথ রূপকল্প বাস্তবায়নের অংশীদার হিসেবে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি।

সর্বশেষ খবর