শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

গণমাধ্যম কর্মী আইন সংশোধন করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণমাধ্যম কর্মী আইন সংশোধন করুন

প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন, ২০২১-এ গণমাধ্যম কর্মীদের চাকরির সুরক্ষা, সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বিলটির ওপর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এই অভিমত ব্যক্ত করে বিলটি সংশোধনের জন্য এককভাবে মালিকপক্ষের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে, গণমাধ্যমকর্মী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়। গতকাল প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মন্জুর-ই-আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটি বৈষম্যমূলক মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দ্বিতীয় ধারায় যে অল্প কয়েকটি সংজ্ঞা সন্নিবেশিত হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে, এই খসড়া আইনটির আরও গভীর বিশ্লেষণ ও সংশোধন অপরিহার্য। গণমাধ্যমের ভূমিকা ও কর্তব্য বিবেচনায় নিলে গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরি যে বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে, তারও কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, শ্রম আইনে যে ন্যূনতম মানদন্ড ঠিক করা হয়েছে শুধু সেগুলোকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করাকেই যথেষ্ট বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেখানেও একতরফাভাবে কাটছাঁট করা হয়েছে।’ উদাহরণ হিসেবে ড. ইফতেখার সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কর্মঘণ্টা এবং এক দিন সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারণের বিষয়গুলো উল্লেখ করেন। সরকার ঘোষিত দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি বা দোকান, ব্যবসা বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য দেড় দিনের সাপ্তাহিক ছুটি এবং খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য এক ঘণ্টার বিরতির বিষয়সমূহ বিবেচনা করা হয়নি, যা অনেক ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক। গণমাধ্যমকর্মীকে বিধি অনুযায়ী অতিরিক্ত ভাতা দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে। কিন্তু শ্রম আইনে মূল বেতনের দ্বিগুণ ভাতা দেওয়া বা সপ্তাহে, মাসে বা বছরে সর্বোচ্চ কত ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করানো সংক্রান্ত অংশটি বিবেচনা করা হয়নি। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের কাজের ধরন অন্য সব প্রতিষ্ঠানের থেকে আলাদা এই যুক্তি দেওয়া হলে, তাঁরা যে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখেন- সেটাও স্বীকার করে নিতে হবে।  ড. জামান বলেন, আলোচ্য বিলের ১২ ধারায় গণমাধ্যম মালিকদের অতিরিক্ত কর্মী ছাঁটাই করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। করোনা মহামারির মাঝে দেশের প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ঢালাও কর্মী ছাঁটাই, বেতন-বোনাস কমিয়ে দেওয়া, বেতন বন্ধ রাখার মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তাই ‘অতিরিক্ত’ বলতে কোন প্রেক্ষিতে কী বুঝানো হয়েছে, তা নিশ্চিত না করা হলে, গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া ১৪ ধারায় অসদাচরণের সংজ্ঞা না দিয়েই এই অপরাধে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিপজ্জনক বিধান রাখা হয়েছে। আর ১০ বা ততধিক গণমাধ্যমকর্মীর এক সঙ্গে চাকরি অবসানের ক্ষেত্রে ‘সার্বিক নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে’ সরকারকে অবহিত করার’ মতো ধারার সন্নিবেশ গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য রীতিমতো অপমানজনক বলে মন্তব্য করেন ড. জামান। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেছেন, ২৫ ধারায় ন্যূনতম ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়টি বাধ্যতামূলক না করে, সরকারের বিবেচনা ও ইচ্ছাধীন করা হয়েছে। অন্য ধারায় ন্যূনতম বেতন না দিলে মালিক পক্ষকে বাধ্য করার জন্য শাস্তির বিধান থাকলেও, একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, মালিক পক্ষ সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করে ওয়েজ বোর্ড গঠনই আটকে দিতে পারে। একইভাবে ভবিষ্যৎ তহবিল গঠনের বিষয়টিও মালিক পক্ষের ইচ্ছাধীন রাখা হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মী কল্যাণ সমিতি নামে সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার বিষয়টি থাকলেও, এ সংক্রান্ত বিধি-বিধান এই বিলে অনুপস্থিত। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিধি প্রণয়নের জন্য রেখে দেওয়াটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয় বরং এটাকে ইচ্ছাকৃত বলে মনে করি। অবাক করার মতো বিষয় হলো- এই পুরো বিলের কোথাও সম্পাদক শব্দটির উল্লেখ পর্যন্ত নেই। গণমাধ্যমে যে ভিন্ন ভিন্ন পেশাজীবীরা কাজ করেন, তারও কোনো উল্লেখ নেই। তাই আইনটি শুধুমাত্র করতে হবে বলে করা হচ্ছে- এমনটা ভাবা অবান্তর হবে না। এমন বাস্তবতায় টিআইবি আশা করে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত বিলটি ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করবে এবং এই সংশোধন প্রক্রিয়ায় অবশ্যই সংবাদকর্মী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর