রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
ইউক্রেন প্রশ্নে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের ভিন্ন সুর

ইমরানের ভাগ্য নির্ধারণ আজ

প্রতিদিন ডেস্ক

ইমরানের ভাগ্য নির্ধারণ আজ

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তুলেছে বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাবের ওপর আজ ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। এদিকে গতকাল দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া নিরাপত্তা সংলাপে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ভিন্ন সুর তুলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইউক্রেন যুদ্ধ প্রশ্নে রাশিয়ার পক্ষাবলম্বন করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হন এবং অভিযোগ অনুযায়ী এ শক্তির কারণেই তিনি অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হয়েছেন। এ অবস্থায় সেনাপ্রধান তাঁর বক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করে রুশবিরোধী মন্তব্য করেছেন। যা ইমরান সরকারের বিপরীত অবস্থান বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ভোটাভুটির ফলাফলে এ বিষয়টি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে পর্যবেক্ষকের অনেকে মনে করছেন। পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডনের খবর অনুযায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া রাজধানী ইসলামাবাদে নিরাপত্তা সংলাপে বক্তৃতা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘রাশিয়াকে ইউক্রেন আগ্রাসন এখনই বন্ধ করতে হবে। এ আগ্রাসন মারাত্মক শোকাবহ।’ তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাশিয়ার বৈধ উদ্বেগ সত্ত্বেও ছোট একটি দেশের বিরুদ্ধে মস্কোর আগ্রাসনকে ক্ষমা করা যায় না। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সেখানে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেনের অর্ধেক এলাকা ধ্বংস করা হয়েছে।’ জেনারেল বাজওয়া আরও বলেন, ‘আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের চমৎকার প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বিমানে করে ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা পাঠানো হয়েছে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’

এ বক্তব্য ইমরান খানের বিপরীতধর্মী। কারণ বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইমরান খান স্পষ্ট করে বলেন, ‘একটি বিদেশি শক্তি তাঁকে সরানোর পরিকল্পনা করেছে।’ তিনি এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করেন। গতকালও তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ‘বিদেশি রাষ্ট্রের সাহায্যে বিরোধীরা তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করেছে এবং ভোটের আগেই তাঁকে হত্যা করার প্রচেষ্টা চলছে।’ এর আগের দিন তথ্যমন্ত্রী এ কথা উল্লেখ করেছিলেন এবং সে অনুযায়ী ইমরান খানের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছিলেন, সেনাবাহিনী হয়তো ইমরান খানের পক্ষেই আছে। কিন্তু গতকাল সেনাপ্রধানের বক্তৃতায় এ ক্ষেত্রে নতুন সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী ৩৪২ সদস্যের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ১৭২ জন আইনপ্রণেতার (এমএনএ) সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু প্রধান শরিক ও দলীয় বিদ্রোহীদের হারিয়ে ইমরান খান সরকারের পক্ষের সমর্থন অনেক কমে গেছে। পিটিআই সরকারের ওপর ১৪২ সদস্যের সমর্থন রয়েছে। বিপরীতে বিরোধীদের পক্ষে রয়েছেন ১৯৯ জন এমএনএ। ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ১৭২ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। তবে এর চেয়েও অনেক বেশি এমএনএ এখন বিরোধীদের পক্ষে। এ অবস্থায় ভোটাভুটিতে যদি ইমরান খান হেরে যান এবং সে কারণে ক্ষমতাচ্যুত হন তাহলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কীভাবে নির্বাচিত হবেন, তা নিয়েও জোর জল্পনাকল্পনা শুরু হয়ে গেছে।

এদিকে গতকাল বেসরকারি একটি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান খান জানান, জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও তিনি পদত্যাগ করবেন না। তাঁকে ছেড়ে যেসব আইনপ্রণেতা বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, বিরোধীরা তাঁদের দিয়ে সরকার চালাতে পারবে না। ইমরান খান বলেন, ‘আমি পদত্যাগ বা নতুন সরকার গঠনের বদলে আগাম নির্বাচনের পক্ষে। আগাম নির্বাচন হলেই সবচেয়ে ভালো হবে।’ ইমরান খান আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি নির্বাচন হলো সবচেয়ে ভালো বিকল্প। আমি পদত্যাগ করার কথা ভাবতেও পারি না। আমি শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে বিশ্বাস করি।’ দলত্যাগীদের নিয়ে সরকার চালানো যায় না দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আগাম নির্বাচনের আয়োজন করি তাহলে সেটাই পাকিস্তানের জন্য ভালো হবে।’ অনাস্থা প্রস্তাব প্রশ্নে ইমরান বলেন, ‘যখন জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক হবে তখন আমি আরেকটি চমক দেখাব।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একজন অধিনায়ক কখনো তাঁর কৌশল কাউকে জানান না। কিন্তু আমি আবার বলছি এ অনাস্থা প্রস্তাব বড় একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র।’ ইমরান খান উল্লেখ করেন, তাঁর জীবন এখন হুমকির মুখে। তাঁর সরকার পতনের ষড়যন্ত্র যাঁরা করছেন তাঁরা এটা ভেবে ভয়ে আছেন যে তিনি যদি ক্ষমতাচ্যুত হন তার পরও দেশের মানুষ তাঁকে সমর্থন করে যাবেন। ইমরান বলেন, ‘আমি এ কারণে প্রকাশ্যে এটা বলছি, আমার জীবন এখন হুমকির মুখে আছে।’ ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান বলেন, ‘যাঁরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নিজেদের ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন, তাঁরা জানেন যে আমি চুপ করে বসে থাকব না। তাঁরা কী ভাবছেন? তাঁরা দুই থেকে আড়াই হাজার রুপি খরচ করে আমার সরকারের পতনের চেষ্টা করবেন আর আমি চুপ করে বসে থাকব! এ কারণে আমি প্রকাশ্যে এসব কথা বলছি।’

সর্বশেষ খবর