সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রশাসন ক্যাডারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

জনগণ যেন সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনগণ যেন সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়

প্র্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। কাজেই জনগণকে ঘিরেই আমাদের সব কাজ। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের জনগণ, তারা যেন কখনো সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্যই এ স্বাধীনতা।

গতকাল সকালে রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে তিনি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী            শেখ হাসিনা বলেন, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের পর যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন, যখনই যে যেখানে দায়িত্ব পালন করবেন, মানুষের কথা চিন্তা করবেন, যে এলাকায় কাজ করবেন সে এলাকা সম্পর্কে জানতে হবে, সে এলাকার মানুষের আচার-আচরণ সম্পর্কে জানতে হবে, জীবন-জীবিকা সম্পর্কে জানতে হবে। কীভাবে তাদের উন্নতি করা যায় সে বিষয়ে আপনাদেরই সবচেয়ে ভালো সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, আজকে আপনাদের মধ্য থেকেই সবাই উচ্চপদে যাবেন। মাঠ পর্যায়ের কাজের মধ্য দিয়ে যে জ্ঞান লাভ করবেন, যখন উচ্চ পর্যায়ে যাবেন আরও বাস্তবভাবে কাজ করতে সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা নিয়েছি, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মূল কারিগর আপনারাই হবেন। এখন থেকে আপনাদের সেভাবে কাজ করতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, ৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের ক্ষমতাটা ছিল ভোগের বস্তু। তারা সেটা দিয়ে নিজের ভাগ্য গড়তে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, শুধু প্রধানমন্ত্রী না। আমার দায়িত্ব হচ্ছে, এ দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো সুনিশ্চিত করা। তাদের জীবনমান উন্নত করা এবং দেশের উন্নয়নটা তৃণমূল পর্যায় থেকে করা। এ অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত নির্যাতিত-নিপীড়িত, শোষিত-বঞ্চিত ছিল। এ দেশের মানুষের একবেলা অন্ন জোগানো অত্যন্ত কঠিন ছিল। আর্থ-সামাজিকভাবে আমরা পিছিয়েছিলাম। এ শোষিত-বঞ্চিত মানুষকে শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে মুক্ত করার জন্যই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি বলেন, আপনারা মাঠ প্রশাসক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। সুযোগ পেয়েছেন, জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তাদের ভালো-মন্দ জানার সুযোগ পাচ্ছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি একটি অনুরোধ করব, আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রজেক্ট বিভিন্ন এলাকায় কার্যকর হয়। অনেক সময় সেসব এলাকায় কাজের সময় জমি নির্দিষ্ট করা বা এ ধরনের নানা কাজে সমস্যা দেখা দেয়, সেখানে আমি মনে করি, সমন্বয় একান্তভাবে প্রয়োজন। কাজগুলো যাতে সুপরিকল্পিতভাবে হয়, সে দিকটায় বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া উচিত। এটা শুধু আপনাদের বলব না, যারা উচ্চ পর্যায়ে আছে, যারা বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং আমরা যেগুলো করে দেই সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ বিষয়টা দেখতে হবে। দেশে কোনো ঘরহীন, ভূমিহীন মানুষ থাকবে না বলে নিজের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, একটা ঘর পাওয়ার পর মানুষের মুখের যে হাসিটা মনে হয়, এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু জীবনে হয় না। তাদের জীবনটা যে একটা অর্থবহ হলো, এটাই সবচেয়ে বড় কথা। শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বিদ্যুৎ অবকাঠামো উন্নয়ন, এর মধ্য দিয়ে কিন্তু দেশের উন্নতিটা সম্ভব হয়। সে জন্য আমরা একদিকে যেমন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরদিকে চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, আর সেই সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ উন্নয়ন। বিভিন্ন দিকে আমরা সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি, যার সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ। সরকারের নবীন কর্মকর্তাদের সামনে সশরীরে হাজির হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, অনেক সময় আমাকে গ্রেফতার হতে হয়েছে; বিশেষ জেলে থাকতে হয়েছে। সেগুলো ছিল সাবজেল, ছোট কারাগার। আর এখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে বড় কারাগারে আছি, এটুকুই বলতে পারি। সে জন্য সব জায়গায় যাতায়াতটা এত সীমিত, এত সীমাবদ্ধ যে সরাসরি আপনাদের কাছে আসতে পারলাম না; নিজের হাতে দিতে পারলাম না সনদগুলো। এটা দুঃখজনক। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর মোমিনুর রশিদ আমিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর