সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

সংকট কাটেনি পাকিস্তানে

অনাস্থা ভোট খারিজ, ভেঙে দেওয়া হলো সংসদ শাহবাজকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা বিরোধীদের

প্রতিদিন ডেস্ক

পাকিস্তানের পার্লামেন্টে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। পরে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আহ্বানে আইনসভা ভেঙে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। তবে বিরোধীরা শাহবাজ শরীফকে নতুন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। দারস্থ হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টেরও। সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ায় এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে, তারাই ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন করবে। সংবাদমাধ্যম ডনের খবর অনুসারে, গতকাল সকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন দেশটির ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির (জাতীয় পরিষদ বা পার্লামেন্ট) ডেপুটি স্পিকার। এ অনাস্থা প্রস্তাবকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে জানিয়েছেন তিনি। জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি অনাস্থা প্রস্তাবটি সংবিধানের পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী আখ্যায়িত করেন। পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলো হঠাৎ করে স্পিকার আসাদ কায়সারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনলে ডেপুটি স্পিকার সুরি আজকের অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন। পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ পাঁচ অনুসারে, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য। সংবিধান ও আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে প্রত্যেক নাগরিকের (অলঙ্ঘনীয়) বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ডেপুটি স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার পর পরই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিতে তিনি প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে পরামর্শ দিয়েছেন। পরবর্তী নির্বাচনের জন্য জনগণের প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণে ইমরান খান বলেছেন, দেশের ভবিষ্যৎ কী হবে কোনো দুর্নীতিবাজ শক্তি তা ঠিক করে দিতে পারে না। যখন অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়া হবে, তখন পরবর্তী নির্বাচন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ হওয়ায় ইমরান খান জাতিকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রে সরকার পরিবর্তনের প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছেন ডেপুটি স্পিকার। তারপরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সুপারিশে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহবাজ গিল। এক টুইটে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ফররুখ হাবিব বলেছেন, ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ জানিয়েছে বিরোধী দলগুলো। তারা বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে অনাস্থা ভোটে জয়ী হওয়ার আত্মবিশ্বাস নিয়েই অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলেন বিরোধী আইনপ্রণেতারা। অনাস্থা ভোটে ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদে ১৭২ ভোট প্রয়োজন ছিল বিরোধীদের। পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজের (পিএমএল-এন) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অনাস্থা প্রস্তাবে ১৭৪ আইনপ্রণেতার সমর্থন ছিল।

গত ৮ মার্চ অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরান খানের জোট সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। একপর্যায়ে ইমরান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শরিক মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টে (এমকিউএম) বিরোধী শিবিরে যোগ দিলে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় সরকার। অনাস্থা ভোটে ইমরানের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর বিষয়টি কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তবে শেষটা হলো আরও নাটকীয়।

শেষ মুহূর্তে ইমরান খানের ইউটার্ন : বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে নিজ দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) আইনপ্রণেতাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইউটার্ন নেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে গতকাল ভোটাভুটিতে তাঁদের অংশগ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি। অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর বিতর্কে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে ইমরান খান নিজেও অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দেন। বিতর্কে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সোচ্চার অবস্থান নিতে তিনি দলীয় আইনপ্রণেতাদের নির্দেশ দেন। এর আগে নিজ দলের কিছু সদস্য অনাস্থার পক্ষে ভোট দিতে পারেন, এমন আশঙ্কায় দলীয় আইনপ্রণেতাদের ভোটের দিন জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন ইমরান খান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর