সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বিদেশি ঋণের দুষ্টচক্র হতে পারে বাংলাদেশের জন্য বড় শিক্ষা

শ্রীলঙ্কা সংকট নিয়ে ড. তিতুমীর

মানিক মুনতাসির

বিদেশি ঋণের দুষ্টচক্র হতে পারে বাংলাদেশের জন্য বড় শিক্ষা

শ্রীলঙ্কা এক অভূতপূর্ব সংকটকাল পার করছে। দেশটির রাজনৈতিক গোষ্ঠী এ সংকটের জন্য প্রধান দায়ী। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোও এর দায় এড়াতে পারে না। এ সংকট বহুবিধ কারণে সৃষ্টি হয়েছে। এর অভিঘাতও বহুবিধ। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামজনীতি সর্বস্তরেই এর অভিঘাত এসে পড়েছে। রাজনৈতিক সুবিধাবাদ তার অর্থনৈতিক সিদ্ধি হাসিলে এ সংকট তৈরি করেছে। জনতুষ্টিও এক্ষেত্রে বড় রকমের ভূমিকা রেখেছে। রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গোষ্ঠীতত্ত্ব ও পারিবারিক হয়ে এর মাত্রা ত্বরান্বিত করেছে। ফলে কর্তৃত্ববাদী শক্তি এমন ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। শ্রীলঙ্কায় ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ইস্যুতে আলাপকালে তিনি বলেন, এখানে বিদেশি ঋণের এক ধরনের দুষ্টচক্রের তৈরি হয়েছে, যা মূলত রাজনৈতিক ও পারিবারিক গোষ্ঠীর এক বলয় থেকে তা তৈরি হয়েছে। এতে দেশের ভিতরের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর অন্তর্দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়েছে বহিঃশত্রু। এতে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিসমূহের বড় ধরনের শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশও এখান থেকে বড় ধরনের শিক্ষা নিতে পারে। যাতে করে অভ্যন্তরীণ কোনো ধরনের দ্বন্দ্বের সুবিধা কাজে লাগিয়ে কোনো আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে সংকটের দিকে নিয়ে যেতে না পারে। বাংলাদেশ সরকারের সেদিকে কড়া নজরদারি রাখতে হবে। শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক গোষ্ঠীর যথেচ্ছ ব্যবহার হয়েছে। এতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীগত স্বার্থসিদ্ধির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ফলে বিদেশি কোনো ব্যক্তি খাত বা বিদেশি সংস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে হয়েছে। অথচ সেই ঋণের অর্থ বিনিয়োগের ফল কী হতে পারে তা নিরূপণ করা হয়নি। এমনকি বিশেষজ্ঞদের মতামতকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। এতে করে বিদেশি ঋণের বোঝা বেড়েছে ভয়াবহভাবে। যা এখন আর পরিশোধ করতে পারছে না। জনগণের স্বার্থকে পাত্তা দেওয়া হয়নি। ফলে দেশটির শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছিল তা টেকসই হয়নি। এতে করে উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশ থেকে শ্রীলঙ্কা নিচের ধাপে নেমে গেছে। যা জনগণকে কাক্সিক্ষত উন্নয়নের ফল উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। যার চূড়ান্ত ফল সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবনতি। যার পরম্পরায় শ্রীলঙ্কা ক্রমাগতভাবে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলক থেকে দূরে সরে গেছে। কেননা জনগণের আকাক্সক্ষাকে গুরুত্ব না দিয়ে এবং গোষ্ঠীগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে গেছে। এতে দিন দিন অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়ে বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি খাত বা সংস্থার ঋণের জালে আটকে পড়েছে। এতে দেশটিতে এক ধরনের বিদেশি ঋণের দুষ্টচক্রের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।

সর্বশেষ খবর